হিল ভয়েস, ১৯ জুলাই ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের অন্তর্গত বিদ্যমান “রাঙ্গীপাড়া হেলিপ্যাড সিআইও বিজিবি ক্যাম্প”টি সাব-জোন বিজিবি ক্যাম্প হিসেবে পরিণত করার জন্য ৩৭ বিজিবির রাজনগর জোন কর্তৃক জুম্মদের প্রায় ৩৫ একর জায়গা জবরদখলের উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জুলাই ২০২০ বুধবার জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল নাজমুল ফরহাদ উক্ত ক্যাম্প পরিদর্শনে আসার পর থেকে প্রথমে ক্যাম্পের বাউন্ডারি বর্ধিত করে চারিদিকে বিভিন্ন রঙের কয়েকটি পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যেদিন পতাকা দিয়ে নতুন করে ক্যাম্পের বর্ধিত সীমানা নির্ধারন করা হয় সেদিন থেকে বাউন্ডারির মধ্যে চাষাবাদযোগ্য ধান্যজমিসহ কমপক্ষে আনুমানিক ৩৫ একর জায়গায় কোন ধরনের কার্যক্রম না করার জন্য জুম্ম ও সেটেলার বাঙালি উভয়দের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, বর্তমান বিজিবি’র সিআইও ক্যাম্পের জায়গাসহ বাউন্ডারির চারিদিকে যত জায়গা রয়েছে সমস্ত জায়গা স্থানীয় জুম্মদের নামে হলেও ২০১১ সালে সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করার পর তাদের কাছ থেকে হাতছাড়া হয়ে যায় এবং বিজিবির প্রশ্রয়ে মুসলিম সেটেলাররা অবৈধভাবে দখল পূর্বক ক্যাম্পের চারিদিকে বসতবাড়ি নির্মাণ করতঃ ভোগদখলে রয়েছে।
বর্তমানে বগাচতর ইউনিয়নের রাঙ্গীপাড়ায় যে সকল মুসলিম সেটেলার পরিবারগুলো জুম্মদের জায়গা অবৈধভাবে বেদখল করে ভোগদখলে রয়েছে তারা হলো-
১) আবদুল মালেক (৫২), পিতা- মৃত শামসুল হক;
২) আবদুল ফয়েজ (৫০), পিতা- মৃত আলী গোরামী;
৩) জাহাঙ্গীর (৪৩), পিতা- সুলতান;
৪) কামরুল ইসলাম (৫০), পিতা- মৃত আবু মুছা;
৫) মজিদ (৪০), পিতা- কাদের মাঝি;
৬) শুক্কুর আলী (৪১), পিতা- অহিদ মিয়া;
৭) অহিদ (৬০), পিতা- কাদের;
৮) আতসার আলী (৫৩), জিন্নাত আলী;
৯) স্বপন (৪২), পিতা- মৃত নায়েব; এবং
১০) ইসমাইল (২৯), পিতা- তোফাজ্জল।
এছাড়াও আরো দু’জন রয়েছে যাদের বসতবাড়ি নির্মাণ না করলেও জায়গা অবৈধভাবে বেদখল করেছে, তারা হলো রাঙ্গীপাড়ার মৃতশামসুল হকের দুই ছেলে জয়নাল (৪৮) ও জালাল (৪৫)।
ক্যাম্পের বাউন্ডারি অন্তর্গত জমিগুলো যেসমস্ত জুম্মদের নামে বন্দোবস্তীকৃত তাদের নাম হলো-
১) শুক্র মনি চাকমা, পিতা- পয়সা রাম চাকমা, হোল্ডিং R-২/২৯, পরিমাণ- ৩.০০একর।
২) বিপিন মোহন চাকমা, পিতা- দীন মনি চাকমা, পরিমাণ- ২.০০একর।
৩) সুমতি কুমার চাকমা, পিতা- চিকন মনি চাকমা, হোল্ডিং R-৪১, পরিমাণ- ৩.০০একর।
৪) কান্দারা চাকমা, পিতা- সাপ্পে চাকমা, হোল্ডিং R-৯, পরিমাণ- ০.৮০একর।
৫) শশী মনি চাকমা, পিতা- পয়সা রাম চাকমা, হোল্ডিং R-৩৯, পরিমাণ- ৩.০০একর।
৬) কিষ্ট লোচন চাকমা, পিতা- কামিনী ধন চাকমা, হোল্ডিং R-৩২, পরিমাণ- ৩.০০একর।
৭) গিরি রঞ্জন চাকমা, পিতা- শিশু চন্দ্র চাকমা, হোল্ডিং নং- ১০, পরিমাণ- ৩.০০একর।
৮) রমেশ চন্দ্র চাকমা, পিতা- জন্মজয় চাকমা, ৪ দাগে মোট পরিমাণ- ৩.০০একর।
৯) তপরায় চাকমা, পিতা- কালাউদা চাকমা, পরিমাণ- ২.৩০একর।
১০) কল্পতরু চাকমা, পিতা- দরবাজ্জ্যা চাকমা, হোল্ডিং R-৩৮, পরিমাণ- ২.০০একর।
১১) চন্দ্র রেখা চাকমা, পিতা- নীল রঞ্জন চাকমা, পরিমান- ১.৪০একর।
এছাড়াও দখলসত্বে আরো ৭/৮ জনের জায়গা রয়েছে যা বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে তাদের নামে এখনও বন্দোবস্তী করা সম্ভব হয়নিকিংবা বন্দোবস্তীর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ক্যাম্পের পার্শ্বে জমির মালিক রমেশ চন্দ্র চাকমা জানান, তার কোন অনুমতির ব্যতিরেকে জমির উপর বিজিবি কর্তৃক মৎস্য বাঁধ নির্মাণকরা হচ্ছে, যা ক্যাম্পের পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তিনি তার জমিতে বাঁধ না করার জন্য ক্যাম্প কমান্ডারের নিকট অনুরোধজানালে ক্যাম্প কমান্ডার তাকে জোন কমান্ডার বরাবর একটি আবেদন করতে পরামর্শ দেন।
তার পরামর্শ অনুসারে গত ১৫ জুলাই ২০২০ জোন কমান্ডার বরাবরে একটি আবেদন করা হলেও এ বিষয়ে এখনও কোন প্রতিউত্তরপাওয়া যায়নি। এছাড়াও ক্যাম্পের পশ্চিম পার্শ্বে সুমতি কুমার চাকমার নামীয় হোল্ডিং R-৪১ এর জায়গাটি ক্যাম্পের হেলিপ্যাড বানানোরজন্য গত ২০/২৫ দিন আগে বুলড্রোজার দিয়ে কেটে সমান করা হয়েছে বলে জায়গার মালিক জানান।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে লঙ্ঘন করে সাম্প্রতিক সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর উদ্যোগে নতুন ক্যাম্প স্থাপন ও পুরাতন ক্যাম্পের জায়গা সম্প্রসারণ জোরদার করা হয়েছে। ২০২০ সালের বিগত ছয় মাসে রাঙ্গামাটির মগবান ইউনিয়নের মুড়োঘোনা নামক স্থানে, বরকলের আইমাছড়া ইউনিয়নের মদন পাড়ায় এবং গুইমারার হাফছড়ি ইউনিয়নের হাতিমুড়ো নামক স্থানে তিনটি নতুন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও পার্বত্য চট্টগ্রামে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও অবৈধভাবে বসতি প্রদানকারী মুসলিম সেটেলারদের কর্তৃক নতুন করে জুম্মদের ভূমি বেদখলের তৎপরতা। ভূমি জবরদখল কিংবা বেদখলের চেষ্টায় ৮১৮ পরিবার ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখী, জুম্ম গ্রামবাসীদের ৩,০২১ একর জায়গা জবরদখল, ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে জুম্মদের বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের ও ২ জনকে গ্রেফতার এবং প্রায় ৫,০০০ একর রাবার বাগান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।