হিল ভয়েস, ১১ জুলাই ২০২০, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়ির এক গ্রামে সন্ত্রাসী ধরার নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে এক জুম্ম নারীনিহত এবং তার এক শিশু আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া সেনাসদস্যরা গ্রামের ছাত্রসহ ৪ নিরীহ জুম্মকেও ধরে নিয়েগেছে বলে জানা গেছে।
গ্রামে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণের সময় সেনাবাহিনীর সাথে সেনা-সমর্থিত সংস্কারপন্থী সশস্ত্র গ্রুপের একদল সশস্ত্র সদস্যও অংশগ্রহণ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুলাই ২০২০ সন্ধ্যা আনুমানিক ৭:০০ টায় সেনাবাহিনীর রোয়াংছড়ি সেনা ক্যম্পের একদল সেনাসদস্য সন্ত্রাসী ধরার নামে রোয়াংছড়ি উপজেলাধীন ১নং সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের অংগ্যপাড়া গ্রাম ঘেরাও করে। সেনাসদস্যরা একপর্যায়ে বেপরোয়াভাবে গ্রামের দিকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতরভাবে আহত হন মিসেস শান্তিলতা তঞ্চঙ্গ্যা (৩০) নামে এক নিরীহ জুম্ম নারী এবং তার শিশু সন্তান অর্জুন তঞ্চঙ্গ্যা সুকেন (৫)। সাথে সাথে গুলিবিদ্ধ মা ও শিশুকে হাসপাতালে নেয়ার পথে শান্তিলতা তঞ্চঙ্গ্যা মৃত্যুবরণ করে।
জানা গেছে, এসময় রাংগোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা, শান্তিলতা চাকমা ও তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে জুমের কাজ শেষে বাড়িতে ফিরছিল। সেনবাহিনী তাদেরকে সন্ত্রাসী মনে করে তাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এতে শান্তিলতা তঞ্চঙ্গ্যা ও তার সন্তান অর্জুন তঞ্চঙ্গ্যা গুরুতরভাবে গুলিবিদ্ধ হয়। নির্বিচারে এভাবে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করা সেনাবাহিনীর স্বেচ্ছাচারিতা ও মানবাধিকার উলঙ্গ লংঘন বলে অনেকে অভিমত ব্যক্তি করেন।
নিহতের স্বামী রাংগোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা জানান, জুম চাষ শেষে পায়ে হেঁটে নিজ বাড়িতে ফিরছিলাম। এ সময় শামুকঝিড়ি এলাকায় পৌঁছলে আমার স্ত্রী ও সন্তানকে সামনের দিকে এগোতে দিয়ে আমি প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে জঙ্গলে ঢুকি। এসময় হঠাৎ করে গুলির শব্দ শুনি। তাড়াতাড়ি স্ত্রী ও সন্তানের অবস্থা গিয়ে দেখি গুলি বিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে স্ত্রী ও শিশুটি।
অপরদিকে সেনাবাহিনী যে চারজনকে ধরে নিয়ে গেছে তারা হলেন- ১. মংহাইনু মারমা (১৯), পীং-থোয়াইহ্লাচিং মারমা, তিনি একজন ছাত্র, ২. উহাইসিং মারমা (২৮), পীং-থোয়াইহ্লাচিং মারমা, তিনি সিএনজি অটোচালক, ৩. নুচসিং মারমা (৩০), পীং-কোয়াইমং মারমা, তিনি কৃষক, ৪. চিংঅংপ্রু মারমা (১৮), পিতা: মংসিংম্রা মারমা, তিনি লালমাটিয়া কলেজের ছাত্র।
তবে সেনাবাহিনী উক্ত চার ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়ার সময় আজ ১১ জুলাই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানালেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছেড়ে দেয়া হয়নি।
এদিকে উপজেলার নাথিংঝিড়ি এলাকার বাসিন্দা খোকন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, হঠাৎ করে আমরা গুলির শব্দ শুনতে পাই। গুলির আওয়াজ শুনে গ্রামবাসীরা এদিকে ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগল। অনেকে গ্রাম ছেড়ে পাশের পাহাড়ে পালাতে লাগল। গতকাল সেনাবাহিনীর সদস্যরা শিশুটিকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং আহত মহিলাকে সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই বান্দরবানের বান্দরবান সদর উপজেলাধীন বাঘমারা এলাকায় আভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় সেনা-সমর্থিত সংস্কারপন্থী একটি দলের ৬ জন নিহত হন। সে ঘটনার জের ধরে সংস্কারপন্থী সদস্য উবামং মারমা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জনসংহতি সমিতির সদস্য ও নিরীহ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
গতকাল সন্ত্রাসী ধরার নাম করে সেনাবাহিনী রোয়াংছড়ির এলাকার গ্রামে গ্রামে তল্লাসী চালায়। এক পর্যায়ে তারা অংগ্যপাড়া গ্রাম ঘেরাও করে এই এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে।
এছাড়াও ঘটনার একদিন পরে ৮ জুলাই বান্দরবানের বালাঘাটাস্থ উজি পাড়ার সুমন মারমা নামে এক নিরীহ মোটর চালককে আটক করে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী।
এখন বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়ন, রাজবিলা ইউনিয়নসহ রোয়াংছড়িতে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।