হিল ভয়েস, ২৬ জুলাই ২০২০, খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অমান্য করে পাহাড়ী টিলা-ভূমি ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে খাগড়াছড়ির এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ক্রয়কৃত ভূমিতে গাড়ি প্রবেশের সুবিধার্থে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে স্কেভেটরের মাধ্যমে বিশালাকার একটি পাহাড় কেটে সেখানে নির্মান করা হয়েছে সুবিশাল রাস্তাও। পাশাপাশি দূর্গম এলাকার জনগনের জন্য বিনামূল্যে সরকারপ্রদত্ত সৌরবিদ্যুতের ষ্ট্রিট লাইটও ব্যভহার করা হয়েছে সেখানে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি অনুসারে তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ জমি কিনতে পারবেন না, এমন বিধান থাকলেও খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানী, সরকারী কর্মকর্তাসহ বহিরাগতরা অনেক আগে থেকেই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শত-শত একর ভূমি ক্রয় করে সেখানে বাগান সৃজন করে রেখেছেন।
১৯৮৯ সালের পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন (১৯৯৮ সালে সংশোধিত) এবং ১৯৯৮ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন অনুযায়ী, যাঁরা পার্বত্য জেলার জমির বৈধ মালিক, শুধুমাত্র তাঁরাই জমি ক্রয়-বিক্রয় কিংবা দান করতে পারেন। পার্বত্য এলাকার বাইরের কোনো বাসিন্দা সেখানে জমি ক্রয়-বিক্রয় কিংবা দান করতে পারেন না।
কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ. ন. ম বদরুদ্দৌজার সভাপতিত্বে পরিচালিত কুমিল্লার একটি সমিতির সদস্যদের নামে রামগড় উপজেলার বনবিথী বাগানের শেষ মাথায় মোঃ মুছা আহমেদ, মোঃ আব্দুল জলিল, মোঃ শাহাজাহানসহ বেশকয়েকজনের নামীয় ও পিতৃ সূত্রে পাওয়া জমি আড়াই লক্ষ টাকা প্রতি একর হারে মোট ১৩ একর ভূমি ও সেখানে কয়েকজনের দখলে থাকা সরকারী ৫একর খাস ভূমিও ১লক্ষ টাকা একর হারে ক্রয় করেন ইউএনও বদরুদ্দৌজা।
ইউএনও বদরুদ্দৌজার কাছে ভূমি বিক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিক্রেতাদের একজন মোঃ মুছা আহমেদ জানান, উক্ত ভূমি প্রতি একর আড়াই লক্ষ টাকা ও তাদের দখলে থাকা খাস ভূমিটি একর প্রতি একলক্ষ টাকা করে ক্রয় করে নিয়েছেন রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রনাধীন কুমিল্লার একটি সমিতি। তবে ভূমি বিক্রেতাদেরি একজন অভিযোগ করে বলেছেন, ভূমির পুরো টাকা পরিশোধ কিংবা রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই ইউএনও আ. ন. ম বদরুদ্দৌজা উক্ত ভূমিতে চারা রোপনসহ পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করেছেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না বলে আইন থাকলেও বায়না পত্র দলিল করেই খাগড়াছড়ি-ঢাকা প্রধান সড়ক থেকে ভূমিতে গাড়ি প্রবেশের সুবিধার্থে স্কেভেটর দিয়ে বিশাল একটি পাহাড় কেটে সেখানে নির্মান করা হয়েছে সুবিশাল একটি রাস্তাও।
তবে এতেই শেষ নয়, সেখানে করা হয়েছে নানা আলোকসজ্জাও। সোলার (সৌর বিদ্যুৎ) চালিত ষ্ট্রিট বাতিও লাগানো হয়েছে বেশ কয়েকটি। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার বিভিন্ন দূর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো কোন প্রকার বিদ্যুৎ সুবিধা বা সৌর বিদ্যুৎ সুবিধা না পৌঁছালেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ. ন. ম বদরুদ্দৌজা ক্রয়কৃত উক্ত টিলায় গরীব-অসহায় ও প্রত্যন্ত এলাকার জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে বরাদ্দকৃত সোলার ব্যবহার করে আলোকসজ্জা সম্পন্ন করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে উক্ত ভূমিতে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে অসহায়দেও জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি বসতবাড়ি সেখানে নির্মানের তোড়জোড়ও চলছে।
২২৯ নং রামগড় মৌজার হ্যাডম্যান মংশেপ্রু চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এবিষয়ে তিনি কিছুই জানে না। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের কোন বহিরাগত লোকজনের পাহাড়ে ভূমি ক্রয় করা সম্পূর্ন অবৈধ বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে একটি বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ. ন. ম বদরুদ্দৌজার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের সাথে রূঢ আচরণ করেন এবং উক্ত টেলিভিশন চিনেন না বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।
রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং একজন সরকারী কর্মকর্তা পাহাড়ে জমি ক্রয় করতে পারবেন না বলে জানান।
একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আইন অমান্য করে জমি ক্রয়, পাহাড় কাটা ও অসহায়দেও জন্য সরকার প্রদত্ত বসতবাড়ি ও সোলার নিজ জমিতে স্থাপনে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা মনে করছেন, সরকারী যথাযথ তদন্ত ও কার্যকরী পদক্ষেপই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে পারে।
সূত্র: chtnews.com