হিল ভয়েস, ১৭ জুলাই ২০২০, রাঙ্গামাটি: সেনা-সমর্থিত সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দল রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার ৬নং বালুখালী ইউনিয়নের হারিক্ষ্যং গ্রামে হানা দিয়ে ৬টি জুম্ম বাড়িতে তল্লাসী চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাড়ি তল্লাসীর সময় সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা বাড়ির লোকদের হুমকি দেয় এবং এক ব্যক্তির ১টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই ২০২০ বুধবার সন্ধ্যা আনুমানিক ৭:০০ টার দিকে সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসী দলের আর্তিক চাকমার নেতৃত্বে সহেন চাকমা ও নয়ন চাকমাসহ ১০/১২ জনের একটি সশস্ত্র দল হঠাৎ হারিক্ষ্যং গ্রামে উপস্থিত হয়ে পর পর ৬টি জুম্ম বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাসী চালায়।
তল্লাসীর শিকার বাড়িগুলি হল- ১. সুজয় চাকমা ওরফে তিমির (৪৮), পীং-জ্ঞান চাকমা; ২. তিলক চন্দ্র চাকমা (৪১), পীং-মৃত বাত্যা চাকমা; ৩. জয় কুমার চাকমা ওরফে অবিকল (৪৪), পীং-সুরসেন চাকমা; ৪. সমর বিজয় চাকমা (৩৭), পীং-পেত্তোয়া চাকমা; ৫. কানু চাকমা (৫০), পীং-সুধাংশু চাকমা; ও ৬. শশীময় চাকমা (৩৮), পীং-লোমবাচ্ছা চাকমা।
জানা গেছে, বাড়ি ঘেরাও করার সময় বাড়ির লোকদের কাছ থেকে সন্ত্রাসীরা রিগ্যান চাকমা ও বিন্দু চাকমা নামে দুই ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। সন্ত্রাসীরা বাড়ির লোকদের উক্ত দুই ব্যক্তি কোথায় থাকে তা খবর পেলে তা জানাতে হবে নির্দেশ দেয় এবং তা না জানালে পরবর্তীতে বাড়ির লোকদের চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেয়।
সন্ত্রাসীরা সুবলং সেনা ক্যাম্পের লাগোয়া সুবলং বাজারস্থ তাদের আস্তানা ফিরে যাওয়ার সময় সুজয় চাকমা ওরফে তিমির এর ১টি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় বলেও জানা যায়।
অপরদিকে গত ১০ জুলাই ২০২০ বিকাল ৫:৩৪ টায় সেনা-সমর্থিত অপর সন্ত্রাসী দল ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এর এক সন্ত্রাসী ফোনে জনসংহতি সমিতি’র জীবতলী ইউনিয়ন কমিটির ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক সোনারাম চাকমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িত করার হুমকি দেয়।
জানা গেছে, ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এর উক্ত সন্ত্রাসী ফোনে সোনারাম চাকমাকে ১১ জুলাই ২০২০ এর মধ্যে তার ছেলে রিপন চাকমাসহ তাকে চেয়ারম্যান পাড়ায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেয় এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না গেলে বান্দরবানের বাঘমারা ছয় হত্যাকান্ডের মামলার আসামী করা হবে হুমকি প্রদান করে। এরপর ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এর উক্ত সন্ত্রাসী সদস্যটি সোনারাম চাকমাকে জেএসএসের সক্রিয় কার্যক্রম হতে বিরত থাকার কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
গত ১৬ জুলাই ২০২০ দুপুর আনুমানিক ১২:০০ টার দিকে সেনা-সমর্থিত ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের সন্ত্রাসীরা জীবতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়াস্থ সোনারাম চাকমা (৫৫) ও সোনামনি চাকমা (৩৫)-র বাড়ির দরজায় তালা মেরে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এসময় সন্ত্রাসীরা প্রতিবেশী অন্যান্য জুম্ম গ্রামবাসীদের ডেকে জানিয়ে দেয় যে, গ্রামবাসীদের কেউ সোনারাম চাকমা ও সোনামনি চাকমাকে জায়গা দিতে পারবে না। যে তাদেরকে জায়গা দেয় তার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, সোনারাম চাকমা জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি সদর থানা শাখার সদস্য এবং সোনামনি চাকমা সমিতির জীবতলি ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে বর্তমানে তারা উভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ গ্রামের পাশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও তারা এব্যাপারে কোন ভূমিকা পালন করছেন না।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে ভন্ডুল করতে এবং জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে সেনাবাহিনী সংস্কারপন্থী সশস্ত্র গ্রুপকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলছে। সেনাবাহিনীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সংস্কারপন্থীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রাজাকারের ভূমিকা নিয়ে মুক্তাঞ্চলের মতো প্রকাশে অস্ত্র বহন করে সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে। গত ৭ জুলাই ২০২০ বান্দরবানের বাঘমারায় নিহত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে ‘সামরিক বিভাগ’ লিখে প্রকাশ্যে পুস্পমাল্য প্রদান করেছে।