হিল ভয়েস, ৭ জুলাই ২০২০, বান্দরবান: বান্দরবান সদর উপজেলার বাঘমারায় বন্দুকযুদ্ধে ৬ জন সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সদস্য মারা গেছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। এছাড়া সংস্কারপন্থীদের আরো তিনজন গুরুতরভাবে আহত বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, আজ ৭ জুলাই ২০২০ সকাল ৭:০০ ঘটিকার সময় বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নের বাঘমারা বাজারস্থ রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহত ৬ জন ব্যক্তি হলেন সংস্কারপন্থী খ্যাত জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) গ্রুপের বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যা, বান্দরবান জেলার সামরিক প্রধান বিমল কান্তি চাকমা প্রজিত ওরফে বিধু, ডেভিড মারমা, জয় ত্রিপুরা, দীপেন ত্রিপুরা ও প্রগতি চাকমা মিলন। আহত তিনজনের মধ্যে নিরু চাকমা ও বিদ্যুত ত্রিপুরার নাম পাওয়া গেছে। একজন নারীও আহত হয় বলে জানা যায়। তবে তার নাম জানা যায়নি।
এ ঘটনার জন্য সংস্কারপন্থীরা জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করেছে। তবে জনসংহতি সমিতির এক দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ ঘটনার সাথে জনসংহতি সমিতির জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ষড়যস্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনার সাথে জনসংহতি সমিতিকে জড়িত করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অপরদিকে স্থানীয় এক সূত্র জানিয়েছে যে, এ ঘটনা সংস্কারপন্থীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির কারণেও সংঘটিত হতে পারে বলে স্থানীয় অনেকে সন্দেহ করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, বাঘমারাস্থ রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে অবস্থানরত সংস্কারপন্থীদের সশস্ত্র গ্রুপের মধ্য থেকে একটি ছোট্ট গ্রুপ প্রত্যেক রাতে বাঘমারা বাজারের অদূরে বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্রসহ নিরাপত্তা প্রহরায় থাকতো এবং সকলে এসে রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে অবস্থানরত মূল গ্রুপের একত্রিত হয়ে সারাদিন অবস্থান করতো।
সেই নিরাপত্তা গ্রুপ সকালে মূল গ্রুপের সাথে একত্রিত হওয়ার জন্য আসার সময় পরষ্পরকে প্রতিপক্ষ মনে করে পরষ্পরের বিরুদ্ধে গুলি বিনিময়ের ঘটনা থেকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছ্যুক অনেকে বলেছেন।
অতি সম্প্রতি গত ৮ মে ২০২০ খাগড়াছড়ি থেকে আরেকটি সংস্কারপন্থী গ্রুপকে সেনাবাহিনী এসকর্ট দিয়ে বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নের বাঘমারায় নিয়ে আসে। বাঘমারায় আসার পর বাঘমারা সেনা ক্যাম্পের ৫০০ মিটার অদূরে বাঘমারা বাজারস্থ রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে সংস্কারপন্থীরা অস্ত্রশস্ত্রসহ আস্তানা গেড়ে বসে।
আসার পর পরই সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি, লোকজনকে মারধর, হুমকি, হয়রানি শুরু করে। নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাগের ডগায় কালেকশন পোস্ট খুলে অবাধে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করতে থাকে। বাঘমারায় যাওয়ার পর কমপক্ষে ৬ জনকে মারধর করেছে এবং অনেক লোককে ডেকে হয়রানি ও হুমকি প্রদান করেছে এবং চাঁদা ধার্য করে অস্ত্রের মুখে অর্থ প্রদানে বাধ্য করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকার লোকজনকে সংস্কারপন্থীরা হুমকি দিয়ে চলেছে যে, কেউ জনসংহতি সমিতির কাজ করতে পারবে না। হয় সংস্কারপন্থী দলে কাজ করতে হবে, না হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে যোদ দিতে হবে। অন্যথায় চরম পরিণতির মুখোমুখী হতে হবে বলে এলাকাবাসীদেরকে জানিয়ে দিয়েছে।
গত ২ জুলাই ২০২০ বাঘমারা বাজারস্থ অবস্থানরত সংস্কারপন্থী গ্রুপটি থেকে ভাগ হয়ে একটি গ্রুপ বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার গাড়ি বহরের সাথে বান্দরবান সদর ইউনিয়নের রেইসা এলাকায় যায়। সেসময় আ ক্যশৈহ্লা রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে বান্দরবান শহরে ফিরছিলেন। রেইসায় গিয়ে সংস্কারপন্থীরা রেইসা সেনা ক্যাম্পের অদূরে একটি কালেকশন পোস্ট খোলার চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সংস্কারপন্থীদের দিয়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ইত্যাদি চালিয়ে চালিয়ে যাওয়ার জন্য গত ১৪ মে ২০১৯ দীঘিনালা সেনা জোনের নিরাপত্তা এসকর্ট দিয়ে সংস্কারপন্থীদের একটি সশস্ত্র গ্রুপকে দীঘিনালা থেকে বরকল উপজেলার সুবলং বাজারে নিয়ে আসে।
তখন থেকে সুবলং সেনা ক্যাম্পের সংলগ্ন সুবলং বাজারে সশস্ত্রভাবে অবস্থান করে সংস্কারপন্থীরা যাত্রী ও মালবাহী ইঞ্জিন-চালিত বোট ও সুবলং বাজারে আসা লোকদেরকে তল্লাসী, হয়রানি ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় বাবুছড়ায় গত এপ্রিলে সেনা ক্যাম্প সংলগ্ন এক সেটেলার বাড়িতে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সদস্যরা অবস্থান নেয়। অনুরূপভাবে অতি সম্প্রতি গত ৩১ মে ২০২০ সেনাবাহিনী এসকট দিয়ে সুবলং বাজার থেকে একদল সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সদস্যদেরকে রাঙ্গামাটির জীবতলী ইউনিয়নে নিয়ে আসে।
এভাবে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় সুবলং, বাবুছড়া, জীবতলী, বাঘমারায় সশস্ত্রভাবে অবস্থান নিয়ে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সদস্যরা এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মারধর, সেনাবাহিনীর দেখিয়ে সুনিদিষ্ট স্থানে হামলা চালিয়ে লোকজনকে হত্যা ইত্যাদি অপকর্ম করে আসছে।
অভিযোগ রয়েছে যে, সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) গ্রুপের উত্তোলিত চাঁদাবাজির অর্থ সেনাবাহিনীর স্থানীয় ক্যাম্প থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি পর্যন্ত ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে থাকে। চাঁদাবাজির একটা সিংহ ভাগ অর্থ প্রতি মাসে জিওসির নিকট পৌঁছে যায় বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।