হিল ভয়েস, ১২ জুলাই ২০২০, বান্দরবান: বান্দরবানের বাঘমারায় ৬ খুনের ঘটনার অজুহাতে সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ জুম্ম জনগণের উপর চলমান দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে বান্দরবানের রাজভিলা ইউনিয়ন থেকে আরো দুইজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে বাঘমারা ৬ খুনের ঘটনার পর গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যা ৭-এ দাঁড়ালো। আরো উদ্বেগের বিষয় যে, গ্রেফতারকৃত অপর ৫ জন ব্যক্তি এখনো সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আত্মীয়রা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, গতকাল ১১ জুলাই ২০২০ শনিবার ভোরে সেনাবাহিনী রাজভিলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের যোগেশ কার্বারী পাড়ায় এক অভিযান চালায়। এসময় গ্রামের পুতুল চন্দ্র চাকমার ছেলে সুশান্ত চাকমাকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফকারকৃত সুশান্ত চাকমাকে বাঘমারার ৬ খুনের মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে জড়িত করে শনিবার সকালে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত থেকে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয় বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্র আরো জানায় যে, গতকাল ১১ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় রাজভিলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার সেমপ্রু মারমাকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে। তাকে আজ ১২ জুলাই রবিবার সকালে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা জানিয়েছেন যে, আটককৃত দুইজন কেউই জনসংহতি সমিতির সাথে জড়িত নন।
আরো জানা যায় যে, গত ১০ জুলাই রাতে সেনাবাহিনীবান্দরবান জেলা শাখার পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সদস্য প্রীতিভূষণ তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি ঘেরাও করে। তাকে বাড়িতে না পেয়ে সেনা সদস্যরা তার বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে বলে জানা যায়।
বাঘমারা ঘটনায় এযাবত ৭ জনকে আটক:
সুশান্ত চাকমা ও সেমপ্রু মেম্বারকে আটকের পর এ নিয়ে গত ১০ জুলাই অংগ্যই পাড়া থেকে আটককৃত নিরীহ চারজন এবং ৮ জুলাই কুয়ালং ইউনিয়নের উজি হেডম্যান পাড়া থেকে একজন ব্যক্তিসহ বাঘমারা ৬ খুনের ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক এযাবত ৭ জনকে আটক করা হলো। আর সন্ত্রাসী খোঁজার নামে সেনাবাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে জুম ফেরতা একজন নিরীহ তঞ্চঙ্গ্যা নারী নিহত ও নিহত নারীর শিশু গুরুতর আহত হয়েছেন।
আটককৃত ৫ জন এখনো সেনাবাহিনীর হেফাজতে:
গত ৮ জুলাই উজি হেডম্যান পাড়া থেকে আটককৃত সুমন মারমা এবং ১০ জুলাই সন্ধ্যায় অংগ্য পাড়া থেকে মংহাইনু মারমা (১৯), উহাইসিং মারমা (২৮), নুচসিং মারমা ও চিংঅংপ্রু মারমা (১৮) নামে গ্রেফতারকৃত চারজন নিরীহ ব্যক্তি এখনো সেনবাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়েছে।
দেশে প্রচলিত আইন মোতাবেক গ্রেফতারদেরকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান থাকলেও উক্ত আইন লঙ্ঘন করে এখনো সেনাবাহিনী গ্রেফতারকৃদদেরকে অবৈধভাবে তাদের হেফাজতে রেখেছে বলে জানা গেছে।
গ্রেফতারকৃত এখনো থানায় বা আদালতে সোপর্দ না করায় তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে পরিবারের লোকজন উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। তাদেরকে বাঘমারায় ৭ জুলাই ৬ খুনের মামলায় মিথ্যাভাবে জড়িত করা হতে পারে বলে তাদের অভিভাবকরা আশঙ্কা করছেন।
সেনা সহায়তায় সংস্কারপন্থীদের নতুন দুই কম্যান্ডার বান্দরবানে আগমন:
গত ৭ জুলাই বাঘমারায় বন্দুকযুদ্ধে সংস্কারপন্থীদের সশস্ত্র গ্রুপের কম্যান্ডার বিমল কান্তি চাকমা প্রজিত ও চিথোইমং মারমা ডেভিড-এর নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে বান্দরবানে অবস্থানরত সংস্কারপন্থীদের সশস্ত্র গ্রুপ কম্যান্ডার শূন্য হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় পূর্বের মতো করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বান্দরবানে চলমান লকডাউনকে উপেক্ষা করে খাগড়াছড়ি থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় চার্মিং চাকমা ও সমর চাকমা (দুই ভাই) নামে দুই কম্যান্ডারকে বান্দরবানে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে বান্দরবানে আবারো সহিংসতার আশঙ্কায় এলাকার জনগণের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
সেনাবাহিনী একদিকে সন্ত্রাসী খোঁজার নামে এলোপাতাড়ি গুলি করছে এবং নিরীহ নারী ও শিশুদের হত্যা করছে, অপরদিকে সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কম্যান্ডার ও সদস্যদেরকে খাগড়াছড়ি থেকে বান্দরবান নিয়ে অাসছে এবং সন্ত্রাস বিস্তারে সুযোগ করে দিচ্ছে বলে স্থানীয় অনেকের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।