হিল ভয়েস, ৮ জুলাই ২০২০, রাঙ্গামাটি: বাবা জনসংহতি সমিতির সদস্য অজুহাতে শুদীপ্ত চাকমা নামে সেনাবাহিনীর ২০২০/২তম ব্যাচের প্রশিক্ষণরত এক সৈনিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায় যে, পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার আওতাধীন লংগদু উপজেলার গুলশখালি ইউনিয়নের চিবেরেগা গ্রামের অত্যন্ত গরীব নিম্ন মধ্যবর্তী পরিবারের সন্তান শুদীপ্ত চাকমা। তিনি লংগদু থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এসএসসি পাশ করার পর রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে এইচএসসি ভর্তি হন।
রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষে অধ্যয়নের সময় তিনি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হাতে পান এবং উৎসাহ সহকারে সৈনিক পদে আবেদন করেন।
এরপর সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাকে সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে ২ মে ২০১৯ রিক্রুট করা হয়। তবে প্রশিক্ষণের জন্য তাকে ৬ মাস অপেক্ষামান রাখার পর ২৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার কাদিরাবাদ সেনানিবাসে তাকে ২০২০/২তম ব্যাচের প্রশিক্ষণে নেয়া হয়।
২০২০/২তম ব্যাচে ৬ মাস প্রশিক্ষণ সফলভাবে অতিক্রান্ত করার পর “উক্ত রিক্রুটের পিতা জেএসএস সংগঠন এর সাথে জড়িত রয়েছে বিধায় অসুপারিশকৃত পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রেক্ষিতে চাকরি হতে অব্যহতি” দেয়া হয়।
“অব্যহতির প্রাক্কালে গত ১ জুলাই ২০২০ তারিখে তাকে সুস্থ্য শরীরে ফেরত পাইয়া নিম্নে স্বাক্ষর করিলাম” মর্মে প্রাপ্তিস্বীকার পত্রে স্বাক্ষর নিয়ে উক্ত যুবকের অবিভাবক হিসেবে ধীমান চাকমার নিকট শুদীপ্ত চাকমাকে হস্তান্তর হয়।
এভাবে পিতা স্রেফ জনসংহতি সমিতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ছেলেকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদানের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকে এটাকে সেনাবাহিনী তথা সরকারের বর্ণবাদী আচরণ বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
অনেকে অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, জনসংহতি সমিতি কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। জনসংহতি সমিতির সাথে সরকারের ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সরকার এই চুক্তি বাস্তবায়ন করে চলেছে। জনসংহতি সমিতির সাথে স্বাক্ষরিত উক্ত চুক্তি সরকার বাতিল করেনি কিংবা জনসংহতি সমিতিকে বেআইনী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেনি।
তাহলে কীভাবে পিতা জনসংহতি সমিতির সাথে জড়িত থাকার কারণে ছেলেকে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে অনেকে প্রশ্ন তুলেন। আর পিতার রাজনৈতিক পরিচয়ের সাথে ছেলেকে কেন গুলিয়ে ফেলা হলো বলেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
মণিশংকর চাকমা তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের দেশের গর্ব ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের ভূমিকা অগ্রণী। স্বাধীন একটি রাষ্ট্রে এমন সুশৃঙ্খল ও পবিত্র বাহিনীতে এরকম বৈষম্য যে কারোর জন্য কাম্য হতে পারে না”।
আসরাফুল ইসলাম নামে একজন তার ফেসবুকে কমেন্ট করেছেন, “বিষয়টি দুঃখজনক, এমনটা কিভাবে হয়।ট্রেনিংয়ে যাওয়ার আগে হলেও তেমন কষ্ট থাকতো না”।
সুখীময় চাকমা নামে একজন বলেন, “সেনাবাহীনিতে আওয়ামীলীগ বাদে অন্য যে সকল পার্টি সদস্যের সন্তানেরা আছে তাহলে ওদেরকেও কি চাকরি বাতিল করবে? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি আর্দশবান বাহিনী, কিন্তু এমন আচরণ তো মেনে নেয়া সম্ভব নয়। বাবার রাজনৈতিক পরিচয়ের সাজা কেন ছেলে ভোগ করবে? এ আচরণ সেনাবাহিনীর যে অফিসার করেছে সে মানুষ নয়”।
নিরন চাকমা নিরন নামে আরেকজন কমেন্ট করে জানিয়েছেন, “যদিও ছেলের বাবা জেএসএসে জড়িত থাকে কিন্তু ছেলে তো জড়িত নয়। আমার মনে হয় তার বাবাও জেএসএসে জড়িত নয়, কারণ আমরা একই গ্রামে ছেলে”।
তপন চাক নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক স্টাটাসে বলেন, “ছেলেটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে, একদিকে তার জীবন চলার পথ থেমে গেছে, অন্যদিকে তার বাবা মার যে স্বপ্ন ছিলো তাও সব চুরমার হয়ে গেছে।”
দিপো চাকমা তার প্রতিক্রিয়া বলেছেন যে, “জেএসএস সদস্যবৃন্দ আজ সব জায়গাতে আছে। পুলিশে নিয়োগ দিতে পারলে তাদেরকে সেনাবাহিনীতে কেন পারবে না”?
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই রকম নিন্দনীয় কাজে অনেকেই তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। চাকরিচ্যুত ছেলেটি মানসিকভাবে কিছুটা হলেও ভেঙে পড়েছেন বলে জানা গেছে। আবেগ তাড়িত হয়ে ছেলেটি যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা করে বসেন তারজন্য সকল দায়ভার এই সেনাবাহিনীকেও নিতে হবে বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।