হিল ভয়েস, ২১ জুলাই ২০২০, গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় সাওতালদের নির্বিচারে হত্যার বিচার, পৈত্রিক জমি ফেরতসহ সাত দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী। গতকাল ২০ জুলাই ২০২০ সোমবার গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।এতে আগে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া গ্রাম থেকে ব্যানার, ফেস্টুন ও লাল পতাকা হাতে নিয়ে হাজারো নারী-পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল করে এ মানববন্ধনে অংশ নেন।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী বাঙালী সংহতি পরিষদ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আয়োজিত এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কে। বক্তব্য রাখেন উপজেলা সিপিবির সভাপতি তাজুল ইসলাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফুরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম, কোষাধ্যক্ষ গণেশ মুরমু, যুব ইউনিয়ন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও অন্যরা।
বিক্ষোভ -মিছিলে বক্তারা বলেন, সাঁওতাল হত্যার চার বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্তের নামে প্রশাসন কালক্ষেপণ করছে। সরকারের দেওয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সাঁওতালদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদের নামে প্রশাসন যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেন বক্তারা।
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে আখ চাষের জন্য গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদার্ফাম এলাকায় এক হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ। চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণের সময় জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তিতে বলা হয় কখনো জমিতে আখ ছাড়া অন্য কিছু চাষ হলে তা প্রকৃত মালিকদের জমি ফেরত দেওয়া হবে।
কয়েক বছর আগে ওই জমি লিজ দিলে সেখানে ধান, পাট, তামাকসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। এতে জমির প্রকৃতমালিক সাঁওতালরা চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে এসব জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলনে নামে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই এ খামারের প্রায় ১০০ একর জমিতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস ও ধান, পাট এবং মাসকালাই চাষ শুরু করে। বাকি জমিতে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ রোপন করে।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে সাঁওতালদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়। সংঘর্ষে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দখলকারীদের পক্ষ নিয়ে সাওতালদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে তিনজন সাঁওতাল মারা যান। দিনের বেলায় ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করা হয়। এ নিয়ে সে বছরের ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমরম বাদী হয়ে মামলা করেন।