হিল ভয়েস, ১৬ জুন ২০২০, বান্দরবান: বান্দরবান সদর উপজেলায় মুখোশপরা অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর গুলিতে গুরুতর আহত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, গতকাল ১৫ জুন ২০২০ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮ টার দিকে বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের বাকিছড়া এলাকায় ঘরের মধ্যে ঢুকে কুহালং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য চাইনা ছাহ্লা মারমাকে গুলি করে আহত করে অস্ত্রধারীরা।
এতে তিনি পায়ের রানে গুরুতরভাবে গুলিবিদ্ধ হন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। গুলিবিদ্ধ ইউপি সদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কুহালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সানুপ্রু মারমা বলেন, সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর ঘটনাটি ঘটেছে। পায়ের ওপরের অংশে গুলি লাগায় গুরুতর জখম হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চট্টগ্রামে পাঠানো হলে পথে তার মৃত্যু হয়। তবে কারা তাকে গুলি করেছে তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন যে, আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) থেকে দলচ্যুত সেনা-সমর্থিত তথাকথিত মগ পার্টির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। নিহত চাইনা ছাহ্লা মারমা একাধারে মগপার্টির ঘনিষ্ট সহযোগী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগেরও সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঘটনার সময় সেখানে মগপার্টির একজন চাঁদা সংগ্রহকারীও উপস্থিত ছিল বলে জানা যায়। তিনি পালিয়ে গিয়ে গুলি থেকে বেঁচেছিলেন। তবে তার নাম জানা যায়নি।
উল্লেখ যে, গত এপ্রিল ও মাসে সেনা-সমর্থিত তথাকথিত মগপার্টির মধ্যে হত্যা, অপহরণ-পাল্টা অপহরণের ঘটনা ঘটে চলেছে। যার সর্বশেষ গত ৬ মে ২০২০ অপহরণের শিকার হয়েছিলেন রুমার রিজুক গ্রামের কার্বারী প্রসানু মারমা।
এদিকে ১৩ মে ২০২০ শনিবার গভীর রাতে রাজভিলা ইউনিয়নের বাঘমারা নিচের পাড়ায় গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের দাবি, গভীর রাতে তাঁরা ১০ থেকে ১২ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পেরেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী জানান যে, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির জন্য সংস্কারপন্থী খ্যাত সেনা-সমর্থিত জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের সদস্যরা এঘটনা ঘটাতে পারেন।
গত ৩১ মে ২০২০ সেনাবাহিনী এসকট দিয়ে ১৫ থেকে ২০ সদস্যের একদল সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সদস্যদেরকে রোয়াংছড়ি উপজেলার বাঘমারা বাজারে নিয়ে যায়। সেখানে বাঘমারা বাজার সেনা ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ও ইউনিফর্ম পরিধান করে অবস্থান করে আসছে।
নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সদস্যরা বাঘমারা বাজার, জামছড়ি, উজিপাড়া, গলাচিপা, কুলুক্ষ্যং, নাচালং ইত্যাদি জায়গায় লোকজনকে হয়রানি, মারধর, চাঁদাবাজি, ত্রাস সৃষ্টির ফাঁকা গুলি বর্ষণ ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছে।