হিল ভয়েস, ০১ জুন ২০২০, পার্বত্য চট্টগ্রাম: সেনা-মদদপুষ্ট সংস্কাপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা সেনাবাহিনীর স্কর্ট নিয়ে বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়িতে এবং রাঙ্গামাটি জেলার জীবতলীতে পদার্পণ করেছে এবং সেখানে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। জীবতলীতে এক নিরীহ গ্রামবাসীকে অমানুষিকভাবে মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া বরকল উপজেলার চাকরিজীবীদের কাছ থেকে এবং জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি এলাকায় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ফোনে প্রতিটি গ্রাম ও পরিবার থেকে চাঁদা দাবি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সেনাবাহিনী স্কট নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সংস্কাপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) আগমন ও চাঁদা দাবির ফলে বিভিন্ন এলাকায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সেনা নিরাপত্তায় রোয়াংছড়িতে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) গ্রুপ:
গত ৩১ মে ২০২০ সেনাবাহিনী স্কট দিয়ে ১৫ জনের অধিক সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর একদল সশন্ত্র সদস্য খাগড়াছড়ি জেলা থেকে বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় বাঘমারায় নিয়ে আসে বলে জানা যায়। জনৈক রতন তঞ্চঙ্গ্যা নামে সংস্কারপন্থী সদস্যের উদ্যোগে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় তারা বান্দরবানে প্রবেশ করে।
বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে যে, রোয়াংছড়ি এলাকায় সংস্কারপন্থীদের সাথে নিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ৫ দিন ধরে অপারেশন চালানোর পরিকল্পনা করেছে।
সেনা স্কর্ট নিয়ে জীবতলীতে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র গ্রুপ:
গত ৩১ মে ২০২০ বিকাল আনুমানিক ৫:০০ টার দিকে সেনাবাহিনী নিরাপত্তা স্কট দিয়ে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর একটি সশস্ত্র দল রাঙামাটি সদর উপজেলাধীন জীবতলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ায় পৌঁছে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সেনাবাহিনী দুইটি ট্রলার বোটে করে স্কর্ট দিয়ে অপর একটি বোটে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সদস্যদের পৌঁছে দিয়ে আবার রাঙামাটির দিকে ফিরে যায়। সংস্কারপন্থীদের দলে অন্তত ১৫-২০ জন রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সদস্যরা জীবতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ার পৌঁছার পর পুরো এলাকা ঘেরাও করে এবং কয়েকজন লোক ধরে নির্যাতন করে। কয়েকজনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।
জীবতলীতে জগদীশ চাকমা নামে একজন চাকরীজীবীকে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সংস্কারপন্থীরা।জগদীশ চাকমার জীবতলীর মৃত বীরেন্দ্র লাল চাকমার ছেলে।
এছাড়া সংস্কারপন্থীরা সমীরণ চাকমার বাড়ি ঘেরাও করে। তবে সমীরণ চাকমা বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রী রেফা চাকমাকে নানা হুমকি প্রদান করে। এ সময় সমীরণ চাকমার দুই মেয়ে রূপবতী চাকমা ও মিশু চাকমাকেও সংস্কারপন্থীরা নানাবিধ হুমকি প্রদান করে।
একই দিন সকাল আনুমানিক ১০:০০ ঘটিকায় রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলা জোনের (৭ বীর) নিয়ন্ত্রিত রাজমনি পাড়া আর্মী ক্যাম্প হতে ৩০/৩৫ জনের একটি সেনাবাহিনীর দল বাদলছড়ি ও কইন্দ্যা মধ্যবর্তী স্থানে এডভোকেট মৃনাল কান্তি চাকমার সেগুন বাগানে বর্তমানে তাবু টাঙিয়ে অবস্থান করছে। সংস্কারপন্থীদের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী উক্ত গ্রুপ সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকতে পারে বলে গ্রামবাসীরা সন্দেহ করছে।
জুরাছড়িতে চাঁদা দাবি:
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার জুরাছড়ি উপজেলাধীন সকল হেডম্যান ও কার্বারীদেরকে ফোন দিয়ে প্রত্যেক পরিবার পিছু ৫০০ টাকা উত্তোলন করে দেওয়ার জন্য সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ সশস্ত্র সদস্যরা নির্দেশ দিয়েছে।
বাঘাইছড়িতে চাঁদা দাবি:
সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সদস্যরা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন বটতলা নামক এলাকায় চাঁদা দাবি করে প্রতিটি কৃষককে ফোন করেছে। কানি প্রতি ৩০০ টাকা করে। আর যাদের চাষযোগ্য জমি নেই তাদের ১০০ টাকা দিতে বলা হয়েছে। ১লা জুনের মধ্যে চাঁদা দিয়ে দিতে বলা হয়।
বরকলে চাকরিজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি:
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলাধীন সুবলং বাজারে অবস্থানরত সেনা-সমর্থিত সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা বরকল উপজেলার সরকারী-বেসরকারী সকল চাকরিজীবীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩০০০ টাকা চাঁদা দাবি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আগামী ২-৩ জুন ২০২০ এর মধ্যে উক্ত টাকা পরিশোধ করতে বলেছে সংস্কারপন্থী চাঁদাবাজরা। সম্প্রতি বরকলে কর্মরত প্রত্যেক সরকারী-বেসরকারী জুম্ম চাকরিজীবীকে মোবাইলে ফোন করে এই চাঁদা দাবি করে সংস্কারপন্থীরা।
জানা গেছে, কয়েকজন বাদে অধিকাংশ চাকরিজীবী তাদের প্রাপ্ত বেতনে কোন রকমে তাদের সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালান। ফলে অনেকে চাকরিজীবীকেই এই টাকা দিলে টানাপোড়েনে পড়তে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাকরিজীবীরা প্রথমে কোন এক ব্যক্তির কাছে স্ব স্ব টাকা জমা দিবেন। এরপর ঐ ব্যক্তির কাছ থেকে সংস্কারপন্থীরা ঐ চাঁদার টাকা সংগ্রহ করবে বলে জানা গেছে।
বিশেষ একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু দিন আগে সুবলং বাজার সেনাক্যাম্পের সেনাবাহিনী বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে বরকলের সকল সরকারী-বেসরকারী অফিসের নাম, ঠিকানা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন।
সন্দেহ করা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর সংগৃহীত ঐ তালিকা ও ফোন নাম্বার অনুসারেই সংস্কারপন্থীরা ফোন করে জুম্ম চাকরিজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা চেয়েছে।
জুরাছড়িতে আর্মীদের টহল
গত ৩১ মে ২০২০ জুরাছড়ি উপজেলাধীন বনযোগীছড়া জোনের অধীন যক্ষাবাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল মোমিন নেতৃত্বে ১৮/১৯ জনের একদল সেনা সদস্য জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাপছড়ি সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে।
সেখানে থেকে ৮/৯ জনের এক দল চুক্তির আগে তাদের ক্যাম্প ছিলো লুলাংছড়ি নামে পরিচিত সেখানে অবস্থান নিয়েছে।