হিল ভয়েস, ৬ জুন ২০২০, বান্দরবান: করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউন ভেঙ্গে কক্সবাজার থেকে পালিয়ে এসে রোহিঙ্গারা অবাধে বান্দরবান জেলায় প্রবেশ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে যাতে রোহিঙ্গারা অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়তে না পারে তজ্জন্য কড়া নজরদারি থাকলেও বান্দরবানে অবাধে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। কখনো নদী পথে, আবার কখনো পাহাড়ের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করছে তারা।
বান্দরবান পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কালাঘাটায় ‘পাইংসি ঘোনা’ নামে রয়েছে রোহিঙ্গাদের একটি পাড়া। সেখানে অনেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসবাস করে আসছে অনেকদিন ধরে।
সেখানকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমির হোসেন নয়নের ভাষ্য মতে, দু-একদিনে আগে হয়তো প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কিছু রোহিঙ্গা পাইংসি ঘোনায় প্রবেশ করে তাদের পরিচিত মানুষের বাড়িতে উঠেছে।
তিনি আরো জানান, রোহিঙ্গারা মানছে না কোন হোম কোয়ারান্টাইন। স্থানীয় কিছু যুবকের সহযোগিতায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেখানে সেখানে। তাদের সাথে দু-একজন সুন্দরী অবিবাহিত রোহিঙ্গা নারীও রয়েছে। যার কারণে তারা স্থানীয় কিছু বখাটে যুবক ছেলেদের হাত করে ফেলেছে।
প্রতিবেশীরা কেউ কিছু বললে তাদের আরো চোখ রাঙ্গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। পাইংসি ঘোনা এলাকার প্রবীণ মুরুব্বী মোঃ নবী হোসেন এ বিষয়টি ৩নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অজিত কান্তি দাশকে ফোন করে জানালে বিষয়টি তিনি যাচাই করে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলেছেন (দৈনিক পরিবর্তন, ৫ জুন ২০২০)।
কালাঘাটাবাসীর দাবি যেন রোহিঙ্গারা কালাঘাটায় কোনভাবেই স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ না পায়। এমনিতে ওই পাইংসি ঘোনা এলাকায় প্রতিদিনই লেগে থাকে ঝগড়া-বিবাদ। তার উপর রোহিঙ্গাদের এভাবে আগমন এলাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পেতে পারে।
মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না কোনভাবেই। নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা। করোনা মহামারির প্রকোপও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে হানা দিয়েছে। করোনার মহামারির জন্য কক্সবাজারকে সরকার এখন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশের প্রথম রেড জোন হিসেবে কক্সবাজার জেলাকে ২০শে জুন পর্যন্ত লক ডাউন ঘোষনা করা হচ্ছে।
এভাবে অবাধে রোহিঙ্গা অন্রপবেশে ঝুঁকিতে পড়েছে বান্দরবান জেলাও। যেখানে বান্দরবান শহরে বিনা কাজে প্রবেশ করলেই পড়তে হচ্ছে নানা জটিলতায়, জরিমানা, এমনকি জেলও হতে পারে। কোভিড-১৯ মোকাবিলা করার জন্য নিবিঢ় পর্যবেক্ষনে রয়েছে বান্দরবান জেলা। কিন্তু তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা কীভাবে বান্দরবানে প্রবেশ করেছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর রয়েছে প্রশ্ন।
বান্দরবান পৌরসভার সাবেক কমিশনার নুর মোহাম্মদ ও বর্তমান কমিশনারগণ এই পাইংসি ঘোনাতে রোহিঙ্গাদের বসতি প্রদান করেছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। নুর মোহাম্মদ ও অজিত কুমার দাস পুরনো বোমাং রাজার ছেলে নু মং প্রু থেকে কয়েক একর জায়গা কিনে পরবর্তীতে তারা রোহিঙ্গাদের বিক্রি করে সেখানে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠে।
এখন ভোটার, আইডি, জম্ম নিবন্ধন, বাসিন্দার সনদপত্র সবকিছু করে ফেলেছে। অপরদিকে পাইংসি ঘোনার নাম পরিবর্তন করে রুপনগর করা হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গা ও বহিরাগতরা বসতি করছে। বীর বাহাদুর নিজেই রুপনগর গ্রামটি উদ্ধোধন করেন। সবকিছু মিলে রাজার ছেলে ছোট বাবু নুমংপ্রু, নুর মোহাম্মদ, অজিত কুসার দাসদের পরিকল্পনায় আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক ব্যবহার করা হচ্ছে।
গত বছর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের ধর্মছড়া ও পাইনছড়িতে ২৮ পরিবারের ১২১ জন রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করে। রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনওকে স্মারকলিপি প্রদান করা হেলেও প্রশাসনের তরফ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিগত কয়েক বছরে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বসতি স্থাপন করেছে বলে স্থানীয়রা মনে করে। তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, জাতীয় পরিচয় গ্রহণ, জমি মালিকানা স্বত্ব লাভ ইত্যাদি সুবিধা অর্জন করেছে। এমন কি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধি হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছে।
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলিকদম ও সদর উপজেলায় রোহিঙ্গারা চুরি-ডাকাতি, নারী অপরহণ ও ধর্ষণ, হত্যা, রাহাজানি, মাদকদ্রব্য পাচার, ভূমি বেদখল, সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ডসহ নানা অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।
গত ১ লা জুন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা বাইশফাঁড়ি এলাকায় বিজিবি’র সাথে রোহিঙ্গা ডাকাতদের বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। সেখানে এক রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকায় আরসা, আরএসও, আলিকান প্রভৃতি রোহিঙ্গা মুসলিম সশস্ত্র জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর ক্যাম্প ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে বলে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
২০১৮ সালে রোহিঙ্গা ডাকাতদের হয়রানি ও হুমকির ফলে চাক জনগোষ্ঠীর সাতঘর্য্যা গ্রাম পরিত্যাগ করতে হয়েছে। এর কয়েক বছর আগে ভূমি বেদখলকারী ও রোহিঙ্গা ডাকাতের হুমকি ও হয়রানির ফলে নাইক্ষ্যংছড়ির বাদুঝিরি নিজ ভূমি থেকে চাক জনগোষ্ঠীর ১৫ পরিবার উচ্ছেদ হয়েছিল।
২০১৫ সালের মে মাসে উ ধম্ম ওয়াং চা ভিক্ষু নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত ছিল রোহিঙ্গারা। নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ কর্তৃক বিগত ৫/৬ বছরে কমপক্ষে ২০ জনের মারমা ও তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।