হিল ভয়েস, ২৬ জুন ২০২০, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দ্বিতীয় পর্যায়ে লকডাউন শুরু হয়েছে গতকাল ২৫ জুন ২০২০ সকাল থেকে থেকে চলবে আগামী ২১ দিন পর্যন্ত। ২৪ জুন রাতে জেলা প্রশাসক লকডাউন ঘোষণা দেয়ার পর পর সকাল থেকে লকডাউন কার্যকর শুরু হয়। এদিকে কোন ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়ায় হঠাৎ করে ২৪ জুন রাতে জেলা প্রশাসক লকডাউন ঘোষণা দেয়ার পর ফেসবুকে জনগণের বিরক্তির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
জিয়া উদিন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, বান্দরবানে জনগণকে কোন ধরনের খাদ্য নিরাপত্তা না দিয়ে প্রশাসনের ২১ দিনের লোক দেখানো লকডাউন দেওয়া হতাশাজনক। পায়েল দত্ত নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারী লিখেছেন, বান্দরবানে এখন কি চলে? লক-ডাউন এর নামে আমলাতান্ত্রিক রসিকতা চলে- হ-য-ব-র-ল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বান্দরবান জেলা সদরের বাসিন্দা অসীম রায় ত্রিপুরা ক্ষোভ জানিয়ে লিখেন, এই ২১ দিন কঠোর লকডাউনে আমাদের বাসার তেল, ডাল, লবণ, চিনি নেওয়া হয়নি (যেহেতু পূর্বে ঘোষণা হয়নি এবং আজকেও হাটবাজার বন্ধ ছিল) এখন দয়া করে ২১ দিন সারভাইভ করার উপায় বলে দেন?
ইসরাত আরফান নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, যদি সত্যিই ২১ দিন লকডাউন করতে চান তবে প্রতিটি মানুষের ঘরে আগে ২১ দিনের খাবার পৌছে দিন তারপর করেন লকডাউন কথা দিচ্ছি কেউ বের হবে না।
মস্তু মারমা নামে একজন লিখেছেন আবারও ২১ দিনের লকডাউন। খাব কি? পকেট শূন্য চলে, কোন কাজকর্ম নেই, হাটবাজার বন্ধ।
হিরন চাকমা নামে আরেকজন ফেসবুকে লিখেছেন, লকডাউন কোথায় চলছে? বালাঘাটা থেকে বান্দরবান রোডে বাইকে হাফ প্যান্ট পরাচালক, রিকশা, সিএনজি, মাহিন্দ্র, ট্রাক চলছে। এরা তো স্বাস্থ্য কর্মীও না, স্বেচ্ছাসেবীও না। সকাল ১০টা।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবান জেলায় আশংকাজনক ভাবে করোনা বৃদ্ধি পায়। তাই করোনা সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসক ২৪ জুন ২০২০ রাতে বান্দরবান জেলাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন এই তিনটি জোনে ভাগ করে পরেরদিন থেকে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করে। এর মধ্যে রেড জোন হিসেবে বান্দরবান ও লামার দু’টি পৌরসভাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইয়েলো জোন হিসেবে আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং গ্রিন জোন রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি উপজেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে লকডাউন ঘোষণা করার পর যেভাবে লকডাউন পালন করার কথা সেভাবে করে লকডাউন পালিত হচ্ছেনা। লকডাউন কার্যকরের জন্য প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কঠোরতা দেখা যায়নি বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
এদিকে হাট-বাজারের সব দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও রাস্তা-ঘাটে অকারণেই মানুষকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল, গাড়ি চলাচল করেছে পৌর শহরের যত্রতত্র। অনেকে লকডাউনের খবর জানতে না পারায় বহুদূর থেকে বাজারে আসা লোকজন প্রশাসনের বাধায় পড়ে সাঙ্গু নদীর তীরে বসে বসে বেচা-বিক্রি করে নদী পথে বাড়ি ফিরেছেন।
বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শামীম হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে আগামী ২১ দিনের জন্য লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউন কার্যকরে কঠোরভাবে মাঠে নেমেছে প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রেড জোনে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সবধরনের যানবাহন এবং দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
পাড়া-মহল্লায় ভ্যানে-গাড়িতে করে ভ্রাম্যমাণ বাজারে সবজি, মাছ-মাংস বিক্রি করা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অনলাইনে হোম ডেলিভারি সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। এর আগে করোনা সংক্রমন রোধে বান্দরবান জেলা প্রশাসন গত ১০ জুন থেকে গত ২৪ জুন পযর্ন্ত মোট ১৪ দিন লকডাউন ঘোষনা করেছিলেন।