হিল ভয়েস, ২৮ জুন ২০২০, সুনামগঞ্জ: সমতলের আদিবাসীদের সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (টিউব্লিউএ) সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চেয়ারম্যান আশুতোষ হাজং-এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ বছর ধরে নিজ সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্প ভোগ দখল ও উপকারভোগীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিজে লাভবান হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আশুতোষ হাজং বংশীকুন্ডা উত্তর যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হওয়ায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এমনটি করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সপ্তাহখানেক আগে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আদিবাসী শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা আশুতোষ হাজংয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যেতে চাইলে বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনয়িন পরিষদ চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব নেন।
সালিশে আশুতোষ হাজং উপকারভোগীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তাই ভুক্তভোগীরা আশুতোষ হাজংকে সংগঠনের পদ থেকে বহিস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ এলাকার উন্নয়ন সহায়তা শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ধর্মপাশা উপজেলার আদিবাসীদের মাঝে ১০টি সেমিপাকা ঘর, ৩০টি বাইসাইকেল, শিক্ষা বৃত্তি, শিক্ষা উপকরণসহ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সামগ্রীর জন্য ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
গত ১৯ মে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের ঘিলাগড়া গ্রামে অবস্থিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক উপকেন্দ্রে ওইসব সামগ্রী উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
কিন্তু আশুতোষ হাজং সেমিপাকা ঘর বরাদ্দের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার বাহনায় পরিবার প্রতি ১৫ হাজার, বাইসাইকেলের জন্য ১ হাজার এবং শিক্ষা বৃত্তির তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কাছ থেকে ৫০০ এবং স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করেন।
এছাড়াও আশুতোষ হাজংয়ের বিরুদ্ধে আদিবাসী সাংস্কৃতিক উপকেন্দ্র নির্মাণে আর্থিক অনিয়মসহ বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণ না করে এবং খামার ঘর নির্মাণ ও গোখাদ্য প্রস্তুতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ।
সেমিপাকা ঘরের উপকারভোগী অনামিকা হাজং জানান, তিনি ঘর পাওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা আশুতোষ হাজংয়ের স্ত্রীকে দিয়েছেন। আরেক উপকারভোগী অনিমা হাজং ঋণ করে সেই টাকা দিয়েছেন বলে জানান।
কাইটাকোনা গ্রামের বাসিন্দা অনিল চিমিম বলেন, আমি ঘরের জন্য জমি বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু পরে যখন জানতে পারলাম এই টাকার কথা কাউকে বলা যাবে না তখন ভাবলাম কিছুটা সমস্যা আছে। তাই আমি টাকা পাইনি আর ঘরও পাইনি।
শাহজাহান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিবানন্দ হাজং বলেন, শিক্ষা বৃত্তি ফ্রিতে পাওয়ার কথা থাকলেও আমাদের কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। যারা ১ হাজার করে টাকা দিতে পেরেছে তাদেরকেই বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে।
তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তের করার অন্য আশুতোষ হাজং মাস তিনেক আগে টাকা সংগ্রহ শুরু করে। অনেকেই টাকা দিয়েও নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পারে না।
খামারে প্রকল্পের উপকারভোগী রেলিমেন্ট হাজং বলেন, প্রায় সাত বছর আগে খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তখন থেকেই আমি খামারের উপকারভোগী কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন প্রকল্প হাতে পাইনি।
বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘কিছু উপকারভোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে আশুতোষ হাজং স্বীকার করেছে। উপকারভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে আশুতোষ হাজং জানিয়েছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসান বলেন, ‘আশুতোষ হাজং নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের তদন্ত করা হবে। যদি সে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সূত্র: দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর ও সিলেটভয়েস.কম