হিল ভয়েস, ৭ জুন ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার সদর উপজেলার জীবতলীতে সেনা-মদদপুষ্ঠ সংস্কারপন্থী সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা দুইজন নিরীহ জু গ্রামবাসীকে অমানুষিকভাবে মারধর ও আরেক ইউপি মেম্বারকে জিম্মি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, সেনা-সমর্থিত সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা জীবতলী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ধুল্যাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা দীপংকর চাকমা (৩৫), পিতা আনন্দ লাল চাকমাকে জীবতলী চেয়ারম্যান পাড়ায় তাদের সাথে দেখা করতে নির্দেশ দেয়।
তদনুযায়ী ধুল্যাছড়ি গ্রামের রঞ্জিত চাকমা (৩৩), পিতা আনন্দ লাল চাকমা ও রাজন চাকমা (১৯), পিতা রবিন চাকমাকে সাথে নিয়ে গতকাল ৬ জুন ২০২০ শুক্রবার দুপুর বেলায় উক্ত মেম্বার সংস্কারপন্থীদের সাথে দেখা করতে চেয়ারম্যান পাড়ায় যান।
কিন্তু পৌঁছার সাথে সাথে কোন কিছু না বলে সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রঞ্জিত চাকমা ও রাজন চাকমাকে অমানবিকভাবে মারধর শুরু করে। মারধরের পর বিকালের দিকে প্রহৃত দুই গ্রামবাসীকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু মেম্বার দীপংকর চাকমাকে সংস্কারপন্থীরা তাদের হেফাজতে জিম্মি করে রাখে।
এ দিকে মেম্বার দীপংকর চাকমাকে জামিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য জীবতলী ইউনিয়নের কৌশল্যা মৌজার হেডম্যান যতীন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যাকে খবর দেয় সংস্কারপন্থীরা। সেই সাথে শান্তি চাকমা ও বিজয় লাল চাকমাকেও তাদের সঙ্গে নিয়ে সংস্কারপন্থীদের কাছে হাজির করে দিতে নির্দেশ দেয় সংস্কারপন্থীরা।
আজ ৭ জুন ২০২০ শনিবার সকালে সংস্কারপন্থীদের হাতে জিম্মি থাকা ইউপি মেম্বার দীপংকর চাকমাকে তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে অমানুষিকভাবে শারীরিক নির্যাতন করে। দুপুরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ও শর্ত সাপেক্ষে হেডম্যান যতীন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, বাকছড়ি গ্রামের কার্বারী শান্তি লাল চাকমা এবং দীপংকর চাকমার মা মিসেস তনুবালা চাকমার নিকট জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
শর্তের মধ্যে রয়েছে তাকে যে শরীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তা কাউকে বলা যাবে না এবং খবর দিলে যে কোন মূহুর্তে তাদের কাছে হাজির হতে হবে। কোন শর্ত লঙ্ঘিত হলে তার পরিণতি হবে মৃত্যু বলে হুমকি দেয়া হয়।
গত ৩১ মে ২০২০ বিকালের দিকে সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরাপত্তা স্কর্ট দিয়ে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের জীবতলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ায় পৌঁছে দেয়ার পর সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমার বাড়ি অবস্থান করছে।
সেখান থেকে বেছে বেছে এলাকার লোকগুলোকে ফোনে ডেকে হয়রানি, মারধর, চাঁদা দাবি, হুমকি দিয়ে চলেছে। গত ৪ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার জীবতলী চেয়ারম্যান পাড়ায় মিঠুন চাকমার নেতৃত্বে সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সদস্যরা এক মিটিং করে।
মেয়ে হোক কিংবা পূরুষ হোক প্রত্যেক বাড়ি হতে একজন করে মিটিংয়ে উপস্থিত হতে গ্রামবাসীদেরকে বাধ্য করে তারা। সংস্কারপন্থীরা মিটিঙে গ্রামবাসীদেরকে জানিয়ে দেয়, কেউ সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির কাজ করতে পারবে না। গ্রামবাসীদেরকে হয় সংস্কারপন্থী দলে না হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে যোগ দিতে হবে বলে নির্দেশ প্রদান করে।
এ সময় সংস্কাপন্থীরা এলাকাবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় কঠিন অবস্থার মুখোমুখী হতে হবে বলে হুমকি প্রদান করে। সম্প্রতি সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা বরকল উপজেলার চাকরিজীবীদের কাছ থেকে এবং জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি এলাকায় প্রতিটি গ্রাম ও পরিবার থেকে চাঁদা দাবি করে গ্রামবাসীদেরকে ফোন করেছে।
স্থানীয় সূত্র আরো জানিয়েছে যে, সেনাবাহিনী সদস্যরা গতকাল ৬ জুন ২০২০, সকাল আনুমানিক ১০:০০ ঘটিকার সময় প্রায় ২০/৩০ জনের মতো সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র গ্রুপকে বিলাইছড়ি বাজারে পৌঁছে দিয়ে এসেছে। সেনা-মদদপুষ্ঠ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বর্তমানে বিলাইছড়ি বাজারে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।