হিল ভয়েস, ১৫ জুন ২০২০, রাঙ্গামাটি: সম্প্রতি সেনা-সমর্থিত সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের একটি দল রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন জীবতলি ইউনিয়নে অবস্থান গ্রহণের পরপরই ইউনিয়নসহ পার্শ্ববতী এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও হয়রানি শুরু হয়েছে এবং তা বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইতোমধ্যে গত ৮ জুন ২০২০ সেনাবাহিনীর সহায়তায় সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসীদের একটি দল কাউখালী উপজেলার সীমান্তে কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ভাজ্যাতলি গ্রামে পদ্ম কুমার চাকমা ওরফে প্রিমেক্স (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে।
এছাড়া লোকজনকে মারধর, তাদের আস্তানায় ডেকে এনে হয়রানি, হুমকি, জিনিসপত্র কেড়ে নেয়া ইত্যাদি অব্যাহতভাবে বেড়েই চলছে। নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেখানে জনগণকে রক্ষা করার কথা এবং এই সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা, উল্টো এই সন্ত্রাসীদেরই সহযোগিতা করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
গত ১৩ জুন ২০২০ তারিখও সংস্কারপন্থীরা জীবতলী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লান্দ্রে ছড়া গ্রামের বাসিন্দা নির্মল চাকমা (৪২), পিতা-সবিনল চাকমাকে তাদের আস্তানায় ডেকে নিয়ে বেদম মারধর করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সংস্কারপন্থীরা নির্মল চাকমাকে তাদের সাথে দেখা করতে নির্দেশ দেয়।
ঐদিন নির্মল চাকমা সেই মোতাবেক তাদের সাথে দেখা করতে যায়। দেখা হওয়ার সাথে সাথে সংস্কারপন্থীরা নির্মল চাকমার মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এবং সাথে সাতে বেদম মারধর করে।
সংস্কারপন্থীদের নির্দেশ মোতাবেক গত ১০ জুন ২০২০, ১. রেফা চাকমা (৫২), স্বামী-সমীরণ চাকমা, গ্রাম-চেয়ারম্যান পাড়া, ২. শান্তনা চাকমা (৩৮), স্বামী-সোনামনি চাকমা, গ্রাম-ঐ, ৩. চিজি চাকমা (২৮), পিতা-প্রমোদ চাকমা, গ্রাম-ঐ, ৪. ধন বিকাশ চাকমা (৪৫) পিতা-মৃত কালী শংকর চাকমা, গ্রাম-ঐ (মেম্বার, ৯নং ওয়ার্ড, জীবতলী ইউনিয়ন), ৫. রূপায়ন চাকমা (৫৫), পিতা-সুরন্দ্র লাল কার্বারী, গ্রাম-ঐ (হেডম্যান, ১১৮নং ধনপাদা মৌজা) ও ৬. সুদত্ত চাকমা(৬২), পিতা-জিতেন্দ্র লাল কার্বারী, গ্রাম-ঐ (চেয়ারম্যান, জীবতলী ইউনিয়ন) সংস্কারপন্থীদের সাথে দেখা করতে যান।
এসময় সংস্কারপন্থীরা উক্ত ৬ জনকে সমীরণ চাকমা, সোনামনি চাকমা ও প্রমোদ চাকমা নামের জনসংহতি সমিতির তিন সদস্যকে তাদের সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব প্রদান করে।
সংস্কারপন্থীরা এটাও বলে যে, তারা যদি উক্ত তিন ব্যক্তিকে তাদের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করতে না পারে, তাহলে সমীরণ চাকমা, সোনামনি চাকমা ও প্রমোদ চাকমা তাদেরকে (সংস্কারপন্থীদেরকে) আক্রমণ করবে না বলে তাদের (উক্ত ৬ জনের) লিখিত অঙ্গীকার দিতে হবে।
সংস্কারপন্থীদের কেউ আক্রমণ করলে এর দায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিতে হবে বলে জানায় সংস্কারপন্থীরা। উল্লেখ্য, নিরাপত্তার স্বার্থে সমীরণ চাকমা, সোনামনি চাকমা ও প্রমোদ চাকমা বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ৮ জুন ২০২০ জীবতলি সেনানিবাসের সিও লে কর্ণেল মোঃ তুহিন জীবতলির চেয়ারম্যান পাড়ায় অবস্থানকারী সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকদের জানিয়ে দেন যে, বাঙালি পাড়া হতে তারা কোন প্রকার চাঁদা তুলতে পারবে না। তবে জুম্মদের গ্রাম থেকে এবং জুম্ম ব্যবসায়ী, দোকানদার, বোট সমিতি ও অন্যান্য খাত থেকে চাঁদা উশুল করলে সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে কোন আপত্তি থাকবে না।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে ২০২০ বিকাল আনুমানিক ৫:০০ টার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এসকর্ট নিয়ে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দল রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন জীবতলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ায় পৌঁছার পর পরই তারা জগদীশ চাকমা নামের স্থানীয় এক সরকারী কর্মচারীকে মারধর করে এবং সমীরণ চাকমার বাড়ি ঘেরাও করে।
উল্লেখ্য, এর পূর্বে এই এলাকায় সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসীদের কোন উপস্থিতি ও কার্যক্রমের অস্তিত্ব ছিল না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে প্রত্যক্ষভাবে নিরাপত্তা প্রদান করে এই সন্ত্রাসীদের জীবতলি তথা রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় নিয়ে আসে।