হিল ভয়েস, ২১ জুন ২০২০, ঢাকা: এক ভার্সুয়াল আলোচনা সভায় কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বেকার হয়ে পড়া আদিবাসী নারী বিউটিশিয়ানদের তালিকা তৈরি করেসকলের চাকরি নিশ্চিত করা ও দুঃসময়ে আদিবাসী শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার দাবি জানানো হয়।
গতকাল ২০ জুন সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এর উদ্যোগে ‘করোনাকালে বিউটি পার্লারে কর্মরত আদিবাসী নারীদের সার্বিক অবস্থা’ শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনটির সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরার সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর,মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম,সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, আইপিডিএস এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তুলি লাবন্য ম্রং, বিউটিশিয়ান সাবিনা রাংমা, এমেলিয়া মাজি, বিউটিশিয়ান ও পার্লার মালিক কুহেলী আজিম।
উক্ত ভার্চুয়াল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এর সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা। বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এর আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার ছিল আইপিনিউজ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মধ্যে বিউটি পার্লার অন্যতম। এ খাতের কর্মরত আদিবাসী নারীরা যার ফলে বেশি অসুবিধায় পড়ছে এ বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে।
সরকারের সহায়তা তাদেরকে বেশি প্রদান করা প্রয়োজন বলেও দাবী তুলেন তিনি। এই পেশায় কর্মরত সন্তানদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন মওকুফ করা দরকার এবং সরকারের এমার্জেন্সি ফান্ডে এই সেবাখাতে জড়িত আদিবাসী শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, বিউটিশিয়ানদের পরিসর নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। শ্রম আইন অনুসারে কীভাবে সহযোগীতা পাওয়া যায় তা দেখতে হবে। বিউটি পার্লার প্রসারে আদিবাসী নারীদের ভূমিকার প্রশংসাও করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আদিবাসী নারীরা শুধু বিউটি পার্লারে কাজ করবে সেটা না, অন্য পেশাও খুঁজতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার এবং অন্যান্য সংস্থা সমূহের এগিয়ে আসা জরুরী বলেও মত দেন তিনি।
উক্ত আলোচনায় তুলি লাবন্য ম্রং বলেন, বাংলাদেশে বিউটি পার্লার, সৌন্দর্য সেবা খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে অধিকাংশ আদিবাসী নারী। দারিদ্রতা, সহজলভ্যতার কারণে আদিবাসী মেয়েরা এ পেশাকে অবলম্বন করে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন।
কিন্তু করোনা মহামারী সময়ে তারা মানবেতর জীবন পার করছেন বলেও দু:খ প্রকাশ করেন তিনি। সরকার এ খাতকে যেহেতু শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে সেজন্য সরকারকে এবিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য জোর সুপারিশ করেন তিনি।
সৌন্দর্য সেবা খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণার বিষয়টি অবিলম্বে গেজেট আকারে প্রকাশ করা, মালিক ও আদিবাসী শ্রমিকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা, আদিবাসী বিউটিশিয়ানদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা, বেকার হয়ে পড়া আদিবাসী বিউটিশিয়ানদের তালিকা তৈরি করে সকলের চাকরি নিশ্চিত করা, দুঃসময়ে আদিবাসী শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা এবং বিউটিশিয়ানদের জন্য আবাসনের সুব্যবস্থা করা সহ নয় দফা সুপারিশও দেন ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভলপমেন্ট সার্ভিস (আইপিডিএস) এর এই প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর।
এছাড়া উক্ত ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন- এ সংকটে আদিবাসী বিউটিশিয়ানরা আড়ালেই ছিলেন। বিউটিশিয়ানরা অন্যদের সাজালেও তাদের বেদনার কথা আমরা শুনিনি কখনো।
তিনি আরো বলেন, তাদের থাকা, খাওয়া, নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে তাদেরকে ভাবতে হয়। কোন বিউটি পার্লারে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। কীভাবে নিয়োগ পাবে, বেতন কত হবে তার কোন নিয়ম নেই।
আদিবাসী নেতৃবৃন্দকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে এ বিষয়ে কর্মহীন আদিবাসী নারীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান তিনি। বিউটি পার্লার ও গার্মেন্ট্স এ কাজ করা শ্রমিকদের সহযোগীতা করা রাষ্ট্রের করুণা নয়, দায়িত্ব বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন এ শ্রমিক নেতা।
এদিকে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিউটিশিয়াল এমেলিয়া মাজি বলেন, “পরিবারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য আমাদের এ পেশায় আসা। পার্লার খুলে নাই বিধায় বেতনও পাচ্ছি না। সবাই বিপাকে পড়েছে। আবার আমি একাধারে ছাত্রও বটে। এ মুহূর্তে যদি সহযোগিতা পাওয়া যেত তাহলে ভালো হতো।”
আলোচনায় বিউটিশিয়ান ও পার্লার মালিক কুহেলী আজিম বলেন, করোনায় আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। পার্লার বন্ধ হওয়ার কারণে অনেকেরই গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। কিছু সাহায্য পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। ঘরভাড়া দিতে পারছি না।
এমন অবস্থায় আমাদের পথে বসতে হবে বলেও আশংকা ব্যক্ত করেন তিনি। এক্ষেত্রে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে এ খাতে কর্মরতদের জন্য প্রণোদনাও প্রত্যাশা করেন এই পার্লার মালিক।