বিশেষ প্রতিবেদন, হিল ভয়েস, ২৯ জুন ২০২০, পার্বত্য চট্টগ্রাম: “পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রেক্ষিত: পরিবেশ, বন্যপ্রাণী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী” শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনায় ক্রিয়েটিভ কনজার্ভেটিভ এলাইয়েন্স (সিসিএ) এর কার্যক্রম নিয়ে যে সমস্ত প্রশ্ন করা হয়েছে অধিকাংশ মৌলিক প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন সিসিএ’র প্রধান শাহরিয়ার রহমান সিজার। অন্যদিকে ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য সহ্য করা হবে না বলে উক্ত আলোচনায় একপ্রকার হুমকি দিয়েছেন।
আজ ২৯ জুন ২০২০ সোমবার বিকাল ৪:৩০ ঘটিকা থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী “পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রেক্ষিত: পরিবেশ, বন্যপ্রাণী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী” শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথীর সঞ্চালনায় আলোচনায় আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন উন্নয়ন কর্মী লেলুং সামথাং (লেলুং খুমী), সুপ্রিয় চাকমা ও সিসিএ’র প্রধান শাহরিয়ার রহমান সিজার।
সম্প্রতি সিসিএ ও এর প্রধান শাহরিয়ার রহমান সিজারের কার্যক্রম নিয়ে নানা মহলে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে মূলত তার উপর ভিত্তি করে উক্ত অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত আলোচনায় লেলুং সামথাংসহ আলোচকবৃন্দ এবং ফেসবুফ লাইভে বিভিন্ন ব্যক্তি সিসিএ’র প্রধান শাহরিয়ার রহমান সিজারকে নানা প্রশ্ন করেছিলেন।
প্রশ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও প্রথাগত প্রতিষ্ঠান (রাজা-হেডম্যান-কার্বারী) এর সাথে আলোচনা ও অনুমোদন নেয়া হয়েছে কিনা; আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী বিষয়ক আইএলও কনভেনশন নং ১০৭-এ স্বীকৃত আদিবাসীদের অধিকার বিবেচনায় নেয়া হয়েছে কিনা; আদিবাসীদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত পূর্বক সম্মতি অধিকারের ভিত্তিতে স্থানীয় আদিবাসী ও প্রতিষ্ঠানের সম্মতিকে বিবেচনা নেয়া হয়েছে কিনা; বন ও বন্যপ্রাণী ধ্বংসের ক্ষেত্রে আদিবাসী নাকি বহিরাগত বাঙালি তথা সরকারি কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি দায়ী; সভার কার্যবিবরণীতে কৌশলে আদিবাসীদের জুমভূমি সিসিএ-এর কব্জায় লিখে নেয়া হয়েছে কিনা; বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের নামে আদিবাসীদের স্থানান্তর ও পুনর্বাসন প্রস্তাব; বন্য প্রাণী পাচার; নীল চাষ; পাড়াবনের সাইনবোর্ড টানানো ইত্যাদি।
কিন্তু প্রশ্নগুলোর মধ্যে বন্য প্রাণী পাচার, নীল চাষ, সাইনবোর্ড টানানো ইত্যাদি প্রশ্নগুলো ছাড়া অন্যান্য মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর শাহরিয়ার সিজার সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। তার অর্থ হচ্ছে তিনি তার প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেসব মৌলিক বিষয়গুলো মোটেই বিবেচনায় নেননি।
অধিকন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের নামে আদিবাসীদের স্থানান্তর ও পুনর্বাসন প্রসঙ্গেও তিনি আপত্তিকর মতামত দিয়েছেন। তিনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের স্বার্থে অনেকটা স্থানীয় আদিবাসীদের স্থানান্তরের পক্ষে মত দিয়েছেন, যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় বলে সঞ্চালক ও আলোচকরা উল্লেখ করেছেন।
সর্বশেষ সভার কার্যবিবরণীতে কৌশলে আদিবাসীদের জুমভূমি সিসিএ-এর কব্জায় লিখে নেয়ার বিষয়ে লেলুং সামথাং পুনর্বার প্রশ্ন করেন, তখন তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে লেলুং সামথাং-এর সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন বলে জানিয়েছেন। তার অর্থ হচ্ছে এক্ষেত্রে তার স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, যা প্রকাশ্যে বলার মতো তার অবস্থা ছিল না।
মুক্তাশ্রী চাকমা সাথীর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে জানা গেল যে, সিসিএ নামক শাহরিয়ার রহমান সিজারের এনজিওটিরও এনজিও ব্যুরোর রেজিষ্ট্রেশন নেই। অথচ বিদেশী ফান্ড নিয়ে সিসিএ আলিকদম-থানচিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। তার অর্থ তিনি অবৈধ পথে বিদেশী ফান্ড এনে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
এছাড়া বিদেশী ফান্ড ছাড়াও দেশীয় ফান্ডের মাধ্যমে কোন এনজিও পার্বত্য জেলায় কাজ করতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অনুমতি নিতে হয়। আঞ্চলিক পরিষদের অনুমোদন নেয়া হয়েছে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর যেহেতু তিনি দেননি, তার অর্থ হচ্ছে তিনি আঞ্চলিক পরিষদের অনুমোদন নেননি। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে সিসিএ’র কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
সর্বশেষ শাহরিয়ার সিজার যে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তা অত্যন্ত আপত্তিকর। তিনি বলেছেন, ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষমূলক (রেসিয়েল হেইট) মন্তব্য করা হচ্ছে। তিনি এই ধরনের জাতিগত বিদ্বেষমূলক মন্তব্য সহ্য (টরালেট) করবেন না বলে জানিয়েছেন। অবশ্য জাতিগত বিদ্বেষমূলক কি মন্তব্য করা হয়েছে তা তিনি উল্লেখ করেননি।
শাহরিয়ার সিজারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠে এসেছে তা একপ্রকার আড়াল করার জন্য তিনি বারে বারে বলেছেন যে, কেউ কোন কিছু ভালো করলে তাকে নাকি ভিলেন হিসেবে দাঁড় করানো হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগও তাকে ভিলেন হিসেবে দাঁড় করানোর একটা অপচেষ্টা থেকে করা হয়েছে বলে তিনি প্রকারান্তরে বলতে চেয়েছেন।
তার অর্থ হচ্ছে তিনি আদিবাসী জুম্মদের বেদনা ও আবেগকে বুঝতে পারেননি, বরঞ্চ সেগুলোকে তিনি জাতিগত বিদ্বেষ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে সেগুলো তিনি ইতিবাচকভাবে নেননি, বরঞ্চ তিনি সেগুলো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তারই প্রেক্ষিতে সর্বশেষ তিনি কোন ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য সহ্য করা হবে বলে হুমকি দিয়ে গেছেন।