হিল ভয়েস, ২০ মে ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ছড়া এবং নদীগুলোতে কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করার ফলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফলে ছড়ার মাছ, কাঁকড়াগুলো ধ্বংস হচ্ছে এবং গ্রামবাসীরা মুখোমুখী হচ্ছে পানীয় জলের অভাবে।
সাজেক ইউনিয়ন পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকার মধ্যে অন্যতম একটি ইউনিয়ন। ভারতের মিজোরামের সীমন্তবর্তী এই ইউনিয়নটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়নও বটে।
উঁচু নিচু পাহাড়ে বেষ্টিত এই অঞ্চলের আদিবাসী জুম্মদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে জুম চাষ। পাহাড়ে বসবাসকারী জুম্ম অধিবাসীদের পানীয় জলের একমাত্র উৎস হচ্ছে ছোট ছড়া বা নদী। ছড়া নদীর অফুরন্ত মাছ কাঁকড়াও আমিষের অভাব পূরণের প্রধান উৎস।
তাছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রাণী ছোট ছোট ছড়াগুলোর ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকে। পাহাড়ের আদিবাসী মানুষজন যুগ যুগ ধরে রক্ষা করে আসছেন এই সম্পদগুলো। প্রকৃতিকে আঘাত না করে তারা জীবনধারণ করে আসছেন যুগের পর যুগ ধরে।
কিন্তু সাজেকের বিভিন্ন এলাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে বিজিবি। ছোট ছড়া এবং নদীগুলোতে কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করে ছড়ার মাছ, কাঁকড়াগুলো ধ্বংস করছে অবাধে।
এতে একদিকে গ্রামবাসীরা যেমন ভুগছে পানীয় জলের অভাবে, অন্যদিকে প্রকৃতিকে ফেলে দেয়া হচ্ছে হুমকির মুখে।
কীটনাশক প্রয়োগের কারণে এখন কোন প্রকার মাছ কাঁকড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন সাজেকের লংকর এবং গন্ডাছড়া (তিন দজরী) এলাকাবাসী।
শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই সহজ সরল আদিবাসী মানুষগুলো কোন ধরনেরর প্রতিবাদ না করার কারণে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যাচ্ছে সরকারি বাহিনীর এমন ঘৃণ্য কাজগুলো।
এমন ঘৃণ্য কাজের জন্য লংকর এবং গন্ডাছড়া (তিন দজরী) এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। অতিশীঘ্রই সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক এমন ঘৃণ্য কর্মকান্ড বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এলাকার অদিবাসীরা আরো জানিয়েছেন যে, কয়েকবছর পূর্বে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে বনাঞ্চলের মধ্যে পর্যটন স্পট গড়ে তোলার পর থেকে সাজেক এলাকায় বনজ সম্পদ ও জীব-বৈচিত্র্যের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের ফলে সেখানকার আদিবাসীরা উচ্ছেদের মুখে পড়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রার উপর নানা বিরূপ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব প্রভাব। জুম চাষের ভূমি সংকুচিত হওয়ার ফলে বিপন্ন হচ্ছে তাদের জীবনজীবিকা।
সম্প্রতি সাজেক পর্যটন এলাকা থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী কমলাক পর্যন্ত নির্মাণাধীন সংযোগ সড়ক এবং সাজেকের শিজকছড়ায় বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগের ফলে কয়েক শত আদিবাসী পরিবারের হাজার একরের অধিক জমি, বাগান-বাগিচা ও শস্যক্ষেত ক্ষতির মুখে পড়েছে।
আদিবাসীদের অস্তিত্ব, সংস্কৃতি ও জীবনজীবিকা তথা বন ও জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংসকারী এসব কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার নেই। তাই সংবাদ মাধ্যমের অন্তরালে দ্রুত গতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে এসব জন-বিরোধী কার্যক্রম।