হিল ভয়েস, ৭ মে ২০২০, পার্বত্য চট্টগ্রাম: দেশে ভাইরাসমুক্ত একমাত্র জেলা রাঙ্গামাটি জেলায় চারজন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছে। রাঙ্গামাটির এ চারজনসহ তিন পার্বত্য জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯ জনে।
এই অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল তিন জেলায় এখন এই মারাত্মক ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লো।
গত ৬ মে ২০২০ বুধবার দুপুরে, রাঙ্গামাটি জেলার সিভিল সার্জন ডা: বিপাশ খীসা সর্বশেষ এই অবস্থা নিশ্চিত করেন এবং বলেন, ৯ মাস বয়সী এক শিশুসহ রোগীরা রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা ১৯৮টি নমুনা চিটাগাং ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিমেল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি এবং তার মধ্যে ৪ জনের রিপোর্ট করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া গেছে যে, রাঙ্গামাটিতে বর্তমানে মোট ১৩৭৬ জন হোম-কোয়ারান্টিনে রয়েছেন, অপরদিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টিনে রয়েছেন ৬২৬ জন।
বাংলাদেশে গত বুধবারে মাত্র একদিনে ৭৯০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দেশে এযাবৎ করোনাভাইরাস আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা। দেশটিতে মোট ১১,৭১৯ জন করোনভাইরাসের রোগী নথিভুক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছে ১৮৬ জন।
গত ১৩ এপ্রিল ২০২০, ৫৫ বছর বয়স্ক এক লোক করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন, যিনি রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টারে ছিলেন।
জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বলে, জেলাশহরের রূপনগর থেকে আসা লোকটি রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন গত ১০ এপ্রিল, জানান সিভিল সার্জন।
গত ১৭ এপ্রিল ২০২০, ১৮ বছর বয়স্ক একজন করোনাভাইরাস সদৃশ উপসর্গ নিয়ে চিটাগাং জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কোভিড-১৯ উপসর্গ বৃদ্ধি পাওয়ায়, গত এপ্রিলে যুবকটি বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা:
এ পর্যন্ত বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পাঁচ জনের করেনা সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুলিশের লোক, একজন বড় মদক এলাকার বাসিন্দা এবং আরেক জন মারমা সম্প্রদায়ের লোক।
বান্দরবানে শুরুতে এক ব্যক্তি, যিনি সম্প্রতি তাবলিগ জামাতের এক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন, তার দেহে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পজিটিভ পাওয়া যায়। রোগীটি একজন ৭০ বছর বয়স্ক লোক এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোম্রা পাড়া এলাকার বাসিন্দা।
বান্দরবান সিভিল সার্জন অং সাই মারমা বলেন, গত ৩০ এপ্রিল ২০২০ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় এক মা ও দুইশিশুর করোনা শনাক্ত করা হয়।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা:
গত ২২ এপ্রিল ২০২০ তারিখে সংগৃহীত যখন নমুনা পরীক্ষায় এরশাদ চাকমা নামে এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের পজিটিভ পাওয়া যায়। তখন থেকে এরশাদ চাকমা ও তার স্ত্রীকে আইসোলেশনে রাখা হয়।
তবে গত ১ মে আবার নমুনা সংগ্রহ করার পর তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তবে তৃতীয় পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং চিটাগাঙে পাঠানো হয়।
অপরদিকে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়িতে আসার পর কোয়ারান্টিনে থাকা অবস্থায় ২৩ বছর বয়সী এক যুবক গত ১৯ এপ্রিল ২০২০ রবিবার সকালে মারা যায়।
তিনি ঢাকায় এক গার্মেন্ট কোম্পানিতে কাজ করতেন। তিনি গত ১৯ এপ্রিল সকাল ৮:৩০ টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গুগড়াছড়ি এলাকায় একে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোয়ারান্টিনে থাকা অবস্থায় মারা যান।
হিমাদ্রী খীসা করোনামুক্ত:
গত ১৭ এপ্রিল ২০২০ কিশোরগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিমাদ্রী খীসা (৩৪তম ব্যাচ) ভাইরাসে আক্রান্ত হন। সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিমাদ্রী খীসা সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় গত ১৬ এপ্রিল অসুস্থ হন। একই দিন পরীক্ষার জন্য ঢাকায় তার নমুনা পাঠানো হয়। পরদিন তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তখন থেকে তিনি হোম কোয়ারান্টিনে থাকেন। তৃতীয় পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষার পর গত ৪ মে সোমবার তার করেনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে তাকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন। এসি (ল্যান্ড) হিমাদ্রী খীসার বাড়ি রাঙ্গামাটি সদর এলাকায়।