হিল ভয়েস, ১৪ মে ২০২০, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ বান্দরবান জেলা সদরস্থ রাজগুরু বৌদ্ধ মন্দিরের প্রাচীন বুদ্ধমূর্তিটি সিলগালা করে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মে ২০২০ বিকেলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শহিদুল ইসলামসহ অন্যান্যরা বৌদ্ধ মন্দিরে এসে ৩০০ বছরের প্রাচীন বুদ্ধমূর্তিটি সিলগালা করে দেন।
পরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, বুদ্ধমূর্তিটি চুরির আশঙ্কায় পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এর নির্দেশেই তিনি তা শিলগালা করে দেন।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা সাংবাদিকদের জানান, ‘উক্ত বুদ্ধমূর্তিটি বান্দরবান বা বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিকনিদর্শন হিসেবে পরিগণিত হয়। তাই রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রয়াত উচহ্লা ভান্তের আকস্মিক প্রয়াণে বিহার পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশঙ্কায় আমরা বুদ্ধমূর্তিটি শিলগালা করে রেখেছি।’
বুদ্ধমূর্তিটির পাশাপাশি তারা বিহারের সকল সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুত করছেন এবং মন্দির পরিচালনার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও তিনি জানান।
বুদ্ধমূর্তিটি সিলগালা করে দেওয়ার পর এটির চাবি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে বুঝিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা বুঝে নিতে অস্বীকৃতি জানান বলে খবর পাওয়া যায়।
পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক কোন বৌদ্ধ মন্দিরের বুদ্ধমূর্তি এর আগে এইভাবে সিলগালা করার নজিরের কথা জানা যায়নি।
এদিকে পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এভাবে বুদ্ধমূর্তিটি সিলগালা করার ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে বিভ্রান্তি এবং সাধারণ বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ।
পূর্ণার্থীরা রাজগুরু বৌদ্ধ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারলেও বুদ্ধমূর্তিটি সিলগালা থাকায় সেখানে কেউ যেতে পারছেন না এবং বন্দনা করতে পারছে না।
রাজগুরু বৌদ্ধ মন্দিরের পরিচালনা কমিটির সভাপতি থোয়াইচা প্রু মাস্টার বলেন, প্রাচীন বুদ্ধমূর্তিটি সিলগালা করে দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি অবিলম্বে মূর্তিটি পূজার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
স্থানীয় এক সূত্রে জানা গেছে, রাজগুরু বৌদ্ধ মন্দিরের অধ্যক্ষ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় গুরু উ পঞ্ঞা জোত মহাথের (উচহ্লা ভান্তে) সম্প্রতি মারা যাওয়ার পর এই বৌদ্ধ মন্দিরের সভাপতির পদটি শূণ্য হয়ে পড়ে।
তদস্থলে তারই অন্যতম শিষ্য মায়ানমার ফেরত বৌদ্ধ ভিক্ষু বীর চান পঞো থেরকে স্থলাভিষিক্ত করতে চাইছেন মন্দির পরিচালনা কমিটি। কিন্তু কেউ কেউ এটা মানতে নারাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্দির পরিচালনা কমিটির জনৈক সদস্য এই বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যে, কমিটির সদস্য বা লোক নয়, কিন্তু প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান এমন কিছু ব্যক্তি তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এইসব ষড়যন্ত্র করছেন এবং জনগণ এহেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেও ভয় পাচ্ছেন।