হিল ভয়েস, ২০ মে ২০২০, পার্বত্য চট্টগ্রাম: আজ ২০শে মে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মাঝে হাজির হয়েছে ২০শে মে। ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে ২০শে মে এই দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের লড়াকু, আপোষহীন এবং প্রতিবাদী ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ জন্ম লাভ করে। সেই সংগঠন অনেক চড়াই-উতরাই এবং নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আজ ৩১টি বছর পূর্ণ হতে চলেছে।
এক প্রচারপত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সর্বস্তরের জুম্ম জনগণসহ বিশ্বে আপামর নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অধিকারহারা জনতাকে রক্তিম অভিবাদন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সেইসাথে জন্মলগ্ন পর থেকে এই আপোষহীন লড়াই সংগ্রামে যারা জুম্ম জনগণের জন্য আত্মত্যাগ করেছে সেই বীর শহীদদের জানিয়েছে শ্রদ্ধা ও লাল সালাম।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ২০শে মে বিকালে বুয়েটের রশিদ হলের ২০০২ নম্বর রুমে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিটিঙে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ট্রাইবাল হোস্টেল থেকে জুম্ম ছাত্র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রাত অবধি আলাপ আলোচনা করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তারপর দিন ২১ মে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদে মৌন মিছিল অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল সেই মিটিঙে। উক্ত মৌন মিছিলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সামিল হয়েছিল শত শত জুম্ম ছাত্রছাত্রী। সেদিন বিকালে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রশান্ত ত্রিপুরাকে আহ্বায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা জানান, বৈশ্বিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তাঁর লড়াইয়ের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে ভিন্ন এক রাজপথে। দ্রোহী আহ্বানকে নানাভাবে জুম্ম ছাত্র সমাজের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে অনলাইন মাধ্যমকে। আমরা চেষ্টা করছি জনম দু:খী জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পিসিপি’র যে ঐতিহাসিক দায় সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তার এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে নানা সিরিজ প্রোগ্রামের আয়োজন করছে গত কয়েকদিন ধরে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ “Voice of PCP-কেওক্রডং” থেকে জুম্ম ছাত্রদের দ্রোহৗ ও প্রতিবাদী কবিতা, গান, অনলাইনে প্রতিবাদী গানের শো, বিভিন্ন আর্টিকেল প্রকাশনাসহ সংগঠনটির বহু বন্ধু প্রতীম ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ছাত্র নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি সহ অনেকের ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা প্রেরণ সংবলিত বিভিন্ন কার্যক্রম চোখে পড়েছে। এছাড়া পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তাঁর এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি প্রোফাইল ফ্রেম বানিয়েছে যা শোভা পাচ্ছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী এবং শুভাকাঙ্খীদের ফেসবুক প্রোফাইলের সাথে।
এছাড়া পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তাঁর প্রতিষ্ঠার ৩১ বছর উপলক্ষ্যে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ আজ সংকটাপন্ন ও অনিশ্চিত বাস্তবতার মুখোমুখি। রাষ্ট্রীয় বঞ্চনা, নির্যাতন ও আগ্রাসন আজ শেষ সীমায় পৌঁছেছে, উন্নয়নের নামে জুম্মদের জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণ এবং অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন চলছে। এমনিতর পরিস্থিতিতে জুম্ম ছাত্র ও তরুণ সমাজ বসে থাকতে পারে না।
এদিকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি জুয়েল চাকমা জানান, পাহাড়ের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে আরো তীব্রতর থেকে তীব্রতর করা ব্যতীত আমাদের কোনো বিকল্প পথ নেই। তাই জুম্ম ছাত্র ও যুবাদের কাছে আমাদের বিপ্লবী আহ্বানকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই করোনা সংকটেও আমরা আমাদের লড়াইকে জারী রাখার চেষ্টা করেছি নানাভাবে।
জুম্ম জনগণের অধিকারের সনদ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে এই ছাত্রনেতা আরো জানান, সরকার আমাদের সাথে যেহেতু প্রতারণা করছে সেহেতু জুম্ম ছাত্র সমাজও তাঁর যুগের যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব সেটা পালনে পিছপা হবে না। বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করা হবে বলেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি। এছাড়া পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তার নিজ সাংগঠনিক অবস্থান থেকে বিভিন্নভাবে এই করোনাকালে অসহায় জুম্মদের পাশে থাকার চেষ্টা করছে বলেও জানান এই ছাত্রনেতা।
এদিকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাগাছাস সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র ও যুব সংগঠন। এছাড়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও জাতিসংঘের এক্সপার্ট মেকানিজমঅন দ্যা রাইটস অফ ইনডিজিনাস পিপলস (এমরিপ) কাউন্সিলের সদস্য বিনোতাময় ধামাই, সাবেক ছাত্রনেতা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক বসুমিত্র চাকমা, গানের দল মাদল, প্লুং ব্যান্ড সহ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বহু শুভাকাঙ্খী ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন।