হিল ভয়েস, ৫ মে ২০২০, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলায় বিবিবিলি এলাকায় একদল লোক বিবিবিলি শান্তি বিহারে হামলা ও বুদ্ধ মূর্তি ভাঙচুর করেছে। গত ৩ মে ২০২০ রবিবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীরা মন্দিরের জানালা, প্রাচীর এবং একটি বুদ্ধ মূর্তি ভাঙচুর করে। হামলার পর থেকে ওই এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
এ ঘটনায় বিবিবিলি শান্তি বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়সেন বড়ুয়া বাদী হয়ে লোহাগাড়া থানার কালোয়ার পাড়ার চরম্বা গ্রামের মৌলভী হেলাল উদ্দিন ওরফে জঙ্গী হেলাল (৪০) এবং একই থানার জান মোহাম্মদ পাড়ার চরম্বা বাসিন্দা জামাল উদ্দিন ওরফে এলডিপি ক্যাডার জামাল ড্রাইভার (৫৫) এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে লোহাগাড়া থানায় একটি মামলা (মামলা নং-১, তারিখে ০৪.০৫.২০২০, দন্ডবিধির ১৪৮/৪৪৭/২৯৫/৫০৮ ধারা) দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে যে, মৌলবাদী বিবাদীগনের নেতৃত্বে আনুমানিক ৩০/৩৫ জনের একটি উগ্রবাদী, মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী লোকজন আগ্নেয় অস্ত্র, লোহার রড, মাতুল, দা, কিরিচ এবং লাঠেসোটা সজ্জিত হয়ে মন্দিরের উত্তর পার্শ্বে তিন রাস্তার মাথায় এসে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদেরকে গালিগালাজ করে শ্লোগান দিয়ে মন্দিরে হামলা করে।
এক পর্যায়ে মৌলবাদীরা মন্দিরের সীমানা প্রাচীর, সামনের মেইন গেইট, জানালা, মন্দিরের বারান্দায় রক্ষিত বৌদ্ধমূর্তি, আলমিরা, ফুলের টপ ভাঙচুর করে।
মৌলবাদীরা “মন্দির জ্বালাইয়া দাও, পুড়িয়া দাও” বলে শ্লোগান দিতে দিতে মন্দিরের উত্তর-পূর্ব পার্শ্বের রাস্তা দিয়ে ২/৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।
মন্দিরের অধ্যক্ষ ভদন্ত এস ধর্ম তিলক বলেন, ‘রোববার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে দিকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রায় ৪০ জনের মত লোক মন্দিরে আক্রমণ করে। তারা মন্দিরের জানালা, প্রাচীর এবং একটি বুদ্ধ মূর্তি ভাঙচুর করে।’
‘প্রাণে বাঁচার জন্য আমি মন্দিরের রুমের আলনার পেছনে লুকিয়ে ছিলাম। তিন রাউন্ড গুলি ছুড়ে তারা মন্দিরে আক্রমণ করেছিল,’ যোগ করেন এই বৌদ্ধ ভিক্ষু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, ‘এই হামলার সঙ্গে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর সংশ্লিষ্টতা আছে।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল ও তার অনুসারীরা হামলা করে, অভিযোগ গ্রামবাসীর।
অভিযুক্ত হেলাল নিজেকে চরম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মন্দিরে আক্রমণ করিনি। আমি এমপি নদভীর হয়ে কাজ করি এ কথা সত্য। তবে কোনো মন্দিরে হামলার নির্দেশ তিনি আমাদের দেননি।’
এমপি নদভী তার সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি শুনেছি আমার দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে ওই এলাকার রকি বড়ুয়া নামের এক জনের ঝামেলা হয়েছিল। পুলিশ আমাকে বিষয়টি জানায়। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’
বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ-এর এ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ এই ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করেছেন। জয়সেন বড়ুয়া বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচকে বলেছেন যে, হামলার ঘটনাটি পুলিশের নাগের ডগায় সংঘটিত হয়েছে। সেসময় ঘটনাস্থলের আশেপাশের পুলিশ ছিল, কিন্তু তারা হামলাকারীদের বাধা দেয়ার পরিবর্তে সহযোগিতা দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বাংলাশেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, চট্টগ্রামের উদ্যোগে এই হামলার বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভ আয়োজন করে।