হিল ভয়েস, ২ মে ২০২০, নিউ ইয়র্ক: বিশ্বের আদিবাসী ও সামাজিক আন্দোলন, মানবাধিকার সংগঠনসমূহ এবং মানবাধিকার কর্মীরা‘ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস: স্বাভাবিক অবস্থা পুনর্গঠনে একটি আহ্বান’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় রূপান্তরশীল পরিবর্তনের মুখে বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
গত ১ মে ২০২০, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে প্রচারিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, ৭৭টি দেশের সামাজিক আন্দোলনসমূহ, আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ও মানবাধিকার সংগঠনসমূহ এসকার-নেট (ESCR-Net) বা ‘ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব ইকোনমিক, সোসিয়াল এন্ড কালচারাল রাইটস’-এ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়সমূহ দ্বারা পরিচালিত কোভিড-১৯ সংকট মোকাবেলায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়ার দাবিতে ‘পদক্ষেপ গ্রহণের বৈশ্বিক আহ্বান’ (গ্লোভাল কল টু এ্যাকশন) নামে এক কর্মসূচি শুরু করেছে। ‘স্বাভাবিক অবস্থার পুন:স্থাপনকরণ’র প্রতিপাদ্য বিষয়ের আওতায় এই আহ্বানকে এগিয়ে নেয়ার একমাত্র পথ হিসেবে সকলের জন্য মানবাধিকার বাস্তবায়নকে গুরুত্ব দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে ‘গ্লোভাল কল টু এ্যাকশন’-এ শ্রমিকদের অধিকার অগ্রায়নের জন্য বিশ্বব্যাপী যৌথ প্রচেষ্টা হিসেবে ইহার উৎপত্তির রাজনৈতিক তাৎপর্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘আজ বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের চাকরি ও জীবিকা হারানোর ক্ষতির সম্মুখীন’ বলেছেন এসকার-নেট বোর্ডের সেক্রেটারি এবং আন্তর্জাতিক নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেনস রাইটস এ্যাকশন ওয়াচ এশিয়া প্যাসিফিক’ (মালয়েশিয়া) এর নির্বাহী পরিচালক প্রিয়ন্তী ফারনান্ডো।
এসকার-নেট সতর্ক করে দিয়েছে যে, গার্হস্থ্য ও কৃষিজ শ্রমিকসহ অনেক শ্রমিক সামাজিক নিরাপত্তা ও চাকরি বীমায় প্রবেশাধিকারের সুযোগ ছাড়াই অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে নিযুক্ত হয়েছেন। অন্যান্যদেরকে পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য করা হয় এবং অসুস্থতার ছুটি প্রদান করা হয়, অথবা তারা স্থায়ীভাবে তাদের চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে থাকেন।
মিস ফারনান্ডো বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক ব্যবধানের ফলে পরিষেবার কাজ নারী শ্রমিকদের জন্য বড় বোঝাই পরিণত হয়েছে, যে নারী শ্রমিকরা অস্বীকৃত ও অবৈতনিক সেবাকর্মের বড়ো অংশ সামাল দেয়।’ ‘বৈশ্বিক মহামারী কোনটা সত্যিকার অর্থে অপরিহার্য কাজ তা প্রকাশ করেছে, তবু এই কাজ যারা করছে তারা অব্যাহতভাবে অবমূল্যায়িত হচ্ছে।’
এসকার-নেট গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছে যে, কয়েক দশকের তথাকথিত কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব সত্ত্বেও, কর্পোরেশনসমূহ শ্রমিকদের অধিকারসহ ব্যাপক পরিবেশগত ও মানবাধিকারের প্রতি ধারাবাহিক অবমাননা করে চলেছে, এবং অব্যাহতভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ করায়ত্ত করা এবং সংকট থেকে সুবিধা লাভের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত-গ্রহণের উপর নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে।
এসকার-নেট বোর্ডের চেয়ার ও পোডার (মেক্সিকো)-এর কো-নির্বাহী পরিচালক ফারনান্ডা হোপেনহাইম বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইহার মোকাবেলায় উভয়ের মধ্যে রয়েছে প্রকাশ্য ও গভীর প্রণালীবদ্ধ অবিচার। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের পরিবর্তে ‘অর্থনীতিরক্ষার’ উপর বর্তমান মনোযোগ দেয়া হচ্ছে দীর্ঘদিনের প্রবণতার এক ভয়ঙ্কর প্রতিধ্বনি। নয়া উদারনৈতিক নীতি সংস্কারের ফলে শ্রম সুরক্ষা ব্যবস্থাকে দূর্বল করেছে, মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা ব্যবস্থা যেখানে সবচেয়ে দূর্বল সেখানে পুঁজির প্রবাহকে অনুমোদন দিয়েছে, মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহকে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও পণ্যে পরিণত করেছে এবং গুটিকয়েকের জন্য অর্থ সাহায্য দিয়ে সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করে সংখ্যাগরিষ্টদের উপর কঠোর ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে।’
এই আহ্বানে মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে যে, সরকার ও কর্পোরেশনসমূহ মিথ্যা পছন্দকে চাপিয়ে দিচ্ছে। জনগণকে নিরাপদ আবাসন ছাড়াই ঘরে থাকতে, পরিষ্কার পানীয় জলের সুযোগ ছাড়াই হাত ধুতে, এবং স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি ব্যবস্থার অভাবের মধ্যে পরিষেবার ক্ষেত্রে ব্যবধানসমূহ পূরণ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। অধিকন্তু এসকার-নেট সতর্ক করেছে যে, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসমূহের ক্ষেত্রে কোনকোন সরকারকে ক্রমবর্ধমানভাবে মানবাধিকারের ভিত্তিকে দূর্বল করে এমন দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে এবং নাগরিক অঙ্গীকারের প্রতি দীর্ঘস্থায়ী হুমকি সৃষ্টিতে কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসকার-নেট সকলের জন্য মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার বাস্তবায়নে সক্ষম দীর্ঘস্থায়ী প্রয়োজনীয় রূপান্তরের আহ্বান জানিয়েছে। রাষ্ট্রসমূহের বিদ্যমান বিধিনিষেধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এসব দাবির মধ্যে রয়েছে সেবা পুনর্মূল্যায়ন ও নিশ্চিতকরণ, অর্জিত অধিকারসমূহ সুরক্ষা, মহামারী থেকে মুনাফাখোরি নিষিদ্ধকরণ, একটি ন্যায়সঙ্গত নিরাময়ের ব্যবস্থা করা এবং আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ও অন্যান্য সম্প্রদায় কর্তৃক ইতোমধ্যে মডেল হওয়া বিকল্পসমূহের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত ‘স্বাভাবিক অবস্থাকে পুন:স্থাপন’ করা।
এসকার-নেট এর সদস্য এবং এশিয়া ইন্ডিজেনাস পিপলস প্যাক্ট (থাইল্যান্ড) এর নির্বাহী পরিষদ সদস্য বিনোতাময় ধামাই বলেন, ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পদ্ধতিসমূহকে নিশ্চিত করা জরুরী প্রয়োজন। এসব বিকল্পসমূহ পরিষেবা এবং জনগণ ও প্রকৃতির পারস্পরিক কল্যাণকে মূল্য দেয়। অন্যান্য প্রান্তিক ও দরিদ্র সম্প্রদায়সমূহও ঐক্য-সংহতি, পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার অপরিহার্য পদ্ধতিসমূহ চর্চা করে চলেছেন।