হিল ভয়েস, ১৮ মে ২০২০, জেনেভা: জাতিসংঘের নতুন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক (স্পেশাল র্যাপোটিউর) জোসে ফ্রান্সিসকো ক্যালি জ্যা বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারীর ধ্বংসাত্মক প্রভাব যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর স্বাস্থ্য হুমকিতে ছাড়িয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
“আমি কোভিড-১৯ মহামারী দ্বারা আদিবাসী সম্প্রদায়সমূহ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে বিষয়ে বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অধিকতর রিপোর্ট পাচ্ছি, এবং ইহা যে সবসময় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নয়, তা আমাকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করছে।
কোভিড মোকাবেলায় জারিকৃত জরুরি অবস্থা আদিবাসী সম্প্রদায়কে অধিকতর প্রান্তিকীকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এবং আরো অধিকতর পরিমাণে তাদের ভূখন্ডে সামরিকীকরণ করা হচ্ছে, ফলে আদিবাসীরা সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী হচ্ছে।
আদিবাসীদের মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা অস্বীকার করা হচ্ছে, অপরদিকে ব্যবসায়িক স্বার্থসমূহ আদিবাসীদের ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদের উপর হানা দিচ্ছে এবং ধ্বংসাত্মক কাজ চালাচ্ছে।
কিছু কিছু দেশে, কৃষি-বাণিজ্য, খনিজ আহরণ, বাঁধ ও অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট বৃহদাকারের প্রকল্পের মাধ্যমে জোরজবরদস্তিভাবে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আদিবাসীদের সাথে পরামর্শ বন্ধ করা হচ্ছে এবং এমনকি পরিবেশের উপর প্রভাব নিরূপণের কাজগুলিও হঠাৎ করে বন্ধ করা হচ্ছে।
আদিবাসীরা তাদের ভূমি ও জীবিকা হারানোর ফলে তাদেরকে অধিকতর দারিদ্র্য, উচ্চ অপুষ্ঠির হার, পরিষ্কার পানি ওস্যানিটেশন লাভের অভাব, অধিকন্তু চিকিৎসাসেবা থেকে বাইরে থাকার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা পর্যায়ক্রমে তাদেরকে রোগ থেকে অরক্ষিত অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে সাহায্য করে।
তবে এই ধরনের হুমকির মুখে ও হুমকির মধ্যেও আদিবাসী সম্প্রদাসমূহ কোভিড-১৯ মহামারী সবচেয়ে উত্তম পন্থায় প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছেন। যারা স্বায়ত্তশাসন ও স্বশাসন অর্জন করেছেন, তারা তাদের ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদের সুব্যবস্থা করতে সক্ষম হচ্ছেন এবং তাদের ঐতিহ্যগত শস্যের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও ঐতিহ্যগত চিকিৎসাবিদ্যা নিশ্চিত করছেন।
এখন আরো অধিকতরভাবে বিশ্বব্যাপী সরকারসমূহের উচিত, আদিবাসী সম্প্রদায়ের সুরক্ষাকল্পে তাদের নিজেদের গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য এবং আদিবাসীদের উপর যাতে বৈষম্যের সৃষ্টি না করে তা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় উদ্যোগসমূহে আদিবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও সাহায্য করা।
রাষ্ট্রসমূহের নিশ্চিত করতে হবে যে, আদিবাসীরা যেন তাদের নিজেদের ভাষায় কোভিড-১৯ সম্পর্কে তথ্য লাভের প্রবেশাধিকার পায় এবং সহজ লভ্যতা ও সাংস্কৃতিকভাবে যথাযথ চিকিৎসাসেবা লাভের সুযোগ নিশ্চিত করতে জরুরি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ইহা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ যে, সরকারি স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ থেকে আদিবাসীরা প্রায়ই বঞ্চিত থাকে।
এই সংকট মোকাবেলা করার জন্য এবং টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত সুরক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত বৈশ্বিক লক্ষ্যসমূহ এগিয়ে নেয়ার জন্য আদিবাসীদের অবশ্যই যথাযথভাবে উন্নয়ন, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
মহামারী আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যে, আমাদের পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন, ব্যক্তির উপর সমষ্টির মূল্যায়ন করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা প্রয়োজন, যা প্রত্যেককে সম্মান ও সুরক্ষা করে থাকে; এটা কেবল আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে নয়।”