হিল ভয়েস, ৫ মে ২০২০, নিউ দিল্লী: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিচেলে ব্যাচেলেট কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় জারিকৃত জরুরি ক্ষমতার সুযোগে জনগণকে প্রদত্ত মৌলিক মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে সরকারসমূহকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে এক বিবৃতিতে, ব্যাচেলেট বলেন যে, “ভিন্ন মতাবলম্বীকে দমন করতে, জনগণকে শাসন করতে, এবং এমনকি ক্ষমতায় তাদের মেয়াদ চিরস্থায়ী করতে” সরকারসমূহ কর্তৃক জরুরি ক্ষমতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত হবে না।
“সেগুলোকে কার্যকরভাবে মহামারী মোকাবেলায় ব্যবহার করতে হবে – এর বেশি কিছু নয়, কমও নয়” তিনি বলেন গত ২৭ এপ্রিল।
লকডাউনের নিয়ম-কানুন পালনে নাগরিকদের বাধ্য করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্ষমতা ব্যবহার করার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন যে, অধিকাংশ মানবাধিকার লংঘন প্রায়ই জনগণের সবচেয়ে দরিদ্র ও সবচেয়ে অবহেলিত অংশের বিরুদ্ধে সংঘটিত করা হয়েছে।
ব্যাচেলেট বলেন, “হন্যে হয়ে খাদ্য খোঁজার কারণে কারফিউ ভঙ্গের জন্য কাউকে গুলি করা, আটক করা অথবা দূর্ব্যবহার করা হচ্ছে সুস্পষ্টভাবে একটি অগ্রহণযোগ্য ও বেআইনী পদক্ষেপ। এর ফলে সন্তান জন্মদানের জন্য হাসপাতালে যেতে একজন নারীর জন্য একটা কঠিন অথবা বিপদজনক হয়ে উঠবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লোকদের রক্ষার জন্য গৃহীত পদক্ষেপের অনুপযোগী প্রয়োগের কারণে লোক মারা যাচ্ছে।”
তিনি মনোযোগ আকর্ষণ করেন যে, কারফিউ লংঘনের জন্য কিছু কিছু দেশে শত শত মানুষকে আটক করা হয়েছে, যা “অপ্রয়োজনীয়ও অনিরাপদ”। “জেল ও কারাগারসমূহে রয়েছে উচ্চ ঝুঁকির পরিবেশে, এবং রাষ্ট্রসমূহের উচিত যারা নিরাপদে মুক্ত হতে পারে তাদেরকে মুক্তি দেয়ার উপর মনোযোগ দেয়া, অধিকতর লোককে আটক করা নয়।”
কোভিড-১৯ মোকাবেলাকারী রাষ্ট্রসমূহের এক নতুন নীতিমালা নির্দেশিকা দলিলে জেনেভা ভিত্তিক জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন যে, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের উচিত স্বাভাবিক সময়ের ন্যায় আইনানুযায়িতা, প্রয়োজনীয়তা, সমানুপাতিকতা ও পূর্বসতর্কতা সংক্রান্ত মূলনীতির প্রতি দৃঢ় থাকা।
রাষ্ট্রসমূহ যখনই মানবাধিকার আইনের আওতায় গণস্বাস্থ্যের কারণে কিছু অধিকার সীমিত করতে সক্ষম হয়, তখন বাধা-নিষেধসমূহ হওয়া প্রয়োজন প্রধান রক্ষাকবচসহ বৈষম্যহীন, সমানুপাতিক, সময়ের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, কর্মকর্তা বলেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মকর্তার প্রেস ঘোষণায় বলা হয় যে, “জীবনের অধিকারসহ নির্ধারিত অধিকারসমূহ, নির্যাতন ও অন্যান্য দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, এবং নির্বিচারে আটক না হওয়ার অধিকার সকল পরিস্থিতিতে অব্যাহতভাবে প্রযোজ্য।”
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান বলেন যে, সরকারসমূহের মৌলিক স্বাধীনতা ও নাগরিক স্থান সীমিতকরণের জন্য একটি অজুহাত হিসেবে কোভিড-১৯ মহামারীকে ব্যবহার করার ঘটনা ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’। যেকোন ব্যতিক্রম পদক্ষেপ অথবা জরুরি অবস্থায থাযথ সংসদীয়, বিচারিক ও সরকারি সজাগ দৃষ্টির অধীনে থাকা উচিত বলে তিনি আরও উল্লেখ করেন।
ব্যাচেলেট বলেন, “বিদ্যমান সংকটের ব্যতিক্রমী অবস্থায় সংকট মোকাবেলার জন্য রাষ্ট্রসমূহের অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রয়োজন। তবে আইনের বিধান যদি অনুমোদিত না হয়, তাহলে জরুরি গণস্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাবের ফলে একটি মানবাধিকার বিপর্যয় হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে, যা মহামারীর চেয়ে দীর্ঘ সময় টিকে থাকবে”।
সূত্র: thewire.in