হিল ভয়েস, ১১ এপ্রিল ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের প্রত্যন্ত রুইলুই, ওল্ড লংকর, বালু কার্বারী আদাম, ডুলুছড়ি পাড়া, কংলাক পাড়া, জলেয়ে পাড়া ইত্যাদি গ্রামে সেনাবাহিনী টহল ও তল্লাসী জোরদার করেছে বলে জানা গেছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চলমান লকডাউনের কারণে সাজেকের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে চলছে খেটে-খাওয়া জুম্ম গ্রামবাসীর খাদ্য সংকট, অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি শেষান্ত থেকে চলছে হামে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের শিশুদের মৃত্যুর মিছিল। এমনি সংকটকালে সেনাবাহিনীর এ ধরনের টহল ও তল্লাসী অভিযান সাজেকের জনপদে সৃষ্টি হয়েছে চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানা যায় যে, গত ৭ এপ্রিল ২০২০ সকাল বেলায় বাঘাইহাট জোন থেকে জনৈক মেজর-এর নেতৃত্বে রুইলুই বিজিবির বিওপি ও পর্যটন কেন্দ্র এলাকায় তিনটি জীপ ও দুই লড়ি ট্রাক ভর্তি সেনা সদস্য এসে জড়ো হয়। ঐদিন বিকাল আনুমানিক ৩টায় রুইলুই ক্যাম্প থেকে নিউলংকর বিজিবি ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে ৪০ জনের সেনাদলটি চলে যায় বলে জানা যায়। নিউ লংকর ক্যাম্প থেকে রাতে হাবিলদার মনির-এর নেতৃত্বে ১৫ জনের একদল সেনা পেট্রোলিঙে বের হয়ে নীড় চাকমার জুম রান্যা ঘরে রাত যাপন করে এবং তার পরদিন ৮ মার্চ সকালে ঐ জুম রান্যা থেকে সরে গিয়ে দুপুরে খাগড়াছড়ি গ্রামে টহল দেয় বলে জানা যায়। এরপর সেনাদলটি আবার উক্ত জুম রান্যা ঘরে ফিরে যায়।
তবে ৮ মার্চ সকাল ২৫ জনের অপর আরেকটি সেনাদল ওল্ড লংকর ক্যাম্পে গিয়ে অবস্থান করে। একইদিন রুইলুই ক্যাম্প থেকে প্রায় ২০ জনের একটি দল কংলাক পাড়া হয়ে বালু কার্বারী আদাম ও ডুলুছড়ি পাড়ার মধ্যবর্তী জুম রান্যা ঘরে এসে টহল দিয়ে আবার কংলাক পাড়ায় ফিরে যায় এবং রুইলুই ক্যাম্পে গিয়ে রাত যাপন করে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা আরো জানান যে, ৯ মার্চ ওল্ড লংকর ক্যাম্প থেকে বিজিবি ও সেনা মিলে সকাল ৯/১০টার সময় জলেয়ে পাড়ায় জনৈক ক্যাপ্টেন-এর নেতৃত্বে ২০ জনের একদল সেনা টহল দেয়। সেসময় তারা গ্রামবাসীদের বলে যে, কেউ জানতে চাইলে সেনাবাহিনী নয়, বিজিবি এসেছে বলতে বলেছে। সেনা সদস্য এসেছে বলে না বলার জন্য বার বার বারণ করেছে। অপরদিকে একইদিন আবার রুইলুই ক্যাম্প থেকে বালু কার্বারী পাড়া পর্যন্ত ২০ জনের একটি টহল দল ৯/১০টার দিকে টহল দিয়ে ক্যাম্পে ফিরে যায় বলে জানা যায়।
১০ এপ্রিল রুইলুই বিজিবি ক্যাম্পে অবস্থান করা সেনাদলটি আবার একইভাবে বালু কার্বারী পাড়া পর্যন্ত টহল দিয়ে ক্যাম্পে ফিরে যায়।
তবে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান যে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাজেকের এসব এলাকায় টহলদারি জোরদার করলেও কারো ঘরবাড়ি তল্লাসী বা কাউকে ধরপাকড় ও নির্যাতন করেছে বলে তারা জানতে পারেননি।
স্থানীয় আদিবাসী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দাবি করছেন যে, ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতৃত্ব সশস্ত্র তাঁবেদার ও দালাল বাহিনীসহ সাম্প্রদয়িক গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ যোগসাজশে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য অঞ্চলে সেনা অভিযান, ঘরবাড়ি তল্লাসী, অবৈধ গ্রেপ্তার ও জেলে প্রেরণ, ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ খোঁজার নামে নিরীহ ব্যক্তিদেরকে নানাভাবে হয়রানিকরণ ইত্যাদি জোরদার করা হয়েছে।
তারই অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীনউদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সাজিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার ব্যক্তি ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো মামলা দায়ের করে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, একটা মামলায় জামিন পাওয়া গেলে সাথে সাথে আরেকটি সাজানো মামলায় জড়িত করে কারাগারে প্রেরণ ইত্যাদি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।