সীতাকুন্ডে একটি আদিবাসী ত্রিপুরা পাড়া উচ্ছেদের মুখে

হিল ভয়েস, ১৮ এপ্রিল ২০২০, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে সীতাকুন্ডে আদিবাসী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একটি পাড়াকে উচ্ছেদ করার সবপথ তৈরির অভিযোগ উঠেছে ইস্পাত শিল্পের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাতের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে পাড়াটির যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দখল করে নেওয়া হয়েছে একমাত্র পুকুরও।

পাড়া বাসিন্দারা জানান, নিজেদের জমি না থাকায় নরক যন্ত্রণা নিয়ে বসবাস করছেন তারা। আর জিপিএইচ কর্তৃপক্ষ বলছে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এই পাড়াটিকে দেখে শুনে রাখছেন তারা। বিষয়টি এখনও জানেন না দাবি করে সীতাকুন্ডের ইউএনও বলছেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ের ঢালে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৩০টি পরিবারের বাস। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকেই প্রথাগতভাবে ভোগদখলীয়ভাবে বসতি করে আসছেন অবহেলিত এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষগুলো। কয়েক প্রজন্মের পর এসে শুনছেন বসতি পাহাড়সহ পুরো এলাকাটি কিনে নিয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত নামে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান।

উচ্ছেদের ভুক্তভোগীরা জানান, “যখন জিপিএইচ কোম্পানি আমাদের উচ্ছেদ করতে চায়, তখন আমরা কোথায় যাব, কোথায় স্থান পাই এরকম একটা মনের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়ে আছে।”

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তিল তিল করে একটি মাটির পথ তৈরি করেছিলেন এই পাড়ার বাসিন্দারা। এরইমধ্যে পথটি দখল করে নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই ইস্পাত কোম্পানি। পাড়ার পাশে যে পুকুরে সবাই গোসল করতেন সেখানেও যাবার অনুমতি নেই কারোর। খাবার পানি যোগান আসতো পাহাড় থেকে, সেখানে দেওয়া হয়েছে কারখানার বাঁধ। সব মিলিয়ে নরক যন্ত্রণায় ভোগছেন অবহেলিত ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা।

ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা অভিযোগ করেন, “গ্রামের রাস্তা, মেইন রাস্তা তো এখন ব্লক। এখন তো অন্যদিকে চলাফেরার যে কষ্ট। আগে যেকোন মুর্হুতে যেতে পারতাম, এখন তো যেতে পারছি না। এখন অনেক ঝুঁকি নিয়ে এদিকে যেতে হয়।”

আরেকজন বৃদ্ধা মহিলা বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তখন থেকে আমরা নিজের মতন থাকছি, কেউ জ্বালা যন্ত্রণা করেনা।”

ত্রিপুরা পাড়ার ভেতর বসানো হয়েছে কারখানার নজরদারি টাওয়ার। নিরাপত্তা কর্মীরা এখানে বসে নজরদারি করেন পাড়ার বাসিন্দা আর আগতদের। এসএটিভি টিমকেও প্রবেশে বাধা দেয় তারা। পরে উর্ধতন এক কর্মকর্তা এসে অনুমতি দিলেও সাথে দিয়ে দেন দুইজন গার্ডকে। তাদের চোখ এড়িয়ে যতটুকু বলা সম্ভব বলেছেন অনেকেই। তবে বাস্তবতা আরও নির্মম।

ত্রিপুরা পাড়ার এক মহিলা জানান, “এখন পানি নিয়ে আসা বন্ধ, এটা তো এখন অন্যের জায়গা। আমাদের জায়গা নাই, গোসল করার অনেক কষ্ট, গোসল করতে পারি না।”

অবশ্যই জিপিএইচ কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের কেনা জমিতেই বসবাস ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের। আর তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করা হয়েছে রাস্তাটি। আমাদের মেশিন চালাইতে হয়, তখন যদি ছেলে মেয়েরা চলাফেরা করে তখন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেজন্য তাদের সাথে পরামর্শ করে রাস্তাটি বন্ধ করা হয়েছে।

সীতাকুন্ড ইউএনও নির্বাহী কর্মকর্তা বললেন, কোন পাড়ার যাতায়াত বন্ধ করার অধিকার কারোর নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। “কারো কোন চলাচলের পথে যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সেটা যদি আমাদের উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে বা আমরা জানতে পারি, আমরা বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করবো”।

সীতাকুন্ডে তিনটি ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রথাগতভাবে ভোগদখলীয় জমিতে বসবাস করে আসছেন। পাহাড়ের ঢালে তাদের বাস করতে হয়। মাঝে মধ্যে ভূমিদস্যু আর পাহাড় খেঁকোদের চোখ রাঙানি দেখতে হয় অসহায় এই আদিবাসী মানুষদের।

সূত্র: এসএটিভি

More From Author