হিল ভয়েস, ২৬ এপ্রিল ২০২০, বান্দরবান: সম্প্রতি বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নে এবং রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নে সেনাবাহিনী পর পর টহল ও তল্লাসী চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সময় সেনা সদস্যরা বান্দরবান সদর সেনা জোনের অভিযোগের ভিত্তিতে রোয়াংছড়ি লুলেং পাড়া ক্যাম্পে চারজন গ্রামবাসীকে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়ে যায়। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় লকডাউন চলাকালে এবং তৎপ্রেক্ষিতে গ্রামে গ্রামে সৃষ্টি হওয়া খাদ্য সংকট কালে এ ধরনের সেনা টহল ও তল্লাসী এলাকায় জনমনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, গত ২১ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬:০০ টার দিকে চারজন সেনাবাহিনী এবং চারজন আনসার সদস্যের একদল নিরাপত্তা বাহিনী বান্দরবান সদর উপজেলার ২নং কুহালং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কিবুক পাড়ার টহল দেয়।এসময় তারা কিবুক পাড়া বৌদ্ধ বিহার ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়েছিল। সন্ধ্যার দিকে একটি গাড়ি এসে তাদের সেখানে নামিয়ে দিয়ে যায়। পরে আরো ৩০/৩৫ জনের আরেক দল সেনা সদস্য কিবুক পাড়ায় এসে উপস্থিত হয়। তবে কাউকে হয়রানি করেছে বলে জানা যায়নি।
অন্যদিকে ২১ এপ্রিল ২০২০ তাদের ভাষায় রোয়াংছড়ি থেকে কে কে সশস্ত্র গ্রুপে যোগ দিয়েছে তাদেরকে নাকি সেনা সদস্যরা খোঁজ করেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। ঐদিন রাতে সেনাবাহিনী মালেক বমকে ক্যাম্পে নিয়ে গেছে।
আবার ২৫ এপ্রিল ২০২০ সকাল নাগাদ রোয়াংছড়ি উপজেলায় রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ব্যাঙছড়ি নামক এলাকায় সেনাবাহিনীর একদল সদস্য টহল দেয়। সেসময় সেনা সদস্যরা ঐ গ্রামের স্কুলে গিয়ে অবস্থান নেয়।
এর ৩/৪ দিন পূর্বেও উক্ত গ্রামের কয়েকজনের বাড়িতে সেনাবাহিনী তাদের ভাষায় সশস্ত্র গ্রুপের সন্ত্রাসী খোঁজ করে বলে জানা যায়। কাউকে না পেয়ে পরে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সতর্ক করে এবং বান্দরবান সদর সেনা জোনের অভিযোগের ভিত্তিতে চারজন ব্যক্তিকে রোয়াংছড়ি লুলেং পাড়া ক্যাম্পে হাজির হতে নির্দেশ দিয়ে চলে যায়।
যে চারজন ব্যক্তিকে ক্যাম্প হাজির হতে বলা হয় তারা হলেন- ১. মুইনুমং মারমা (৩৮), পীং মৃত মংখ্যয়ইউ মারমা; ২. বাশৈসিং মারমা (৪৪), পীং ক্যখই মারমা; ৩. ওয়াইচিমং মারমা (৪৮), পীং মৃত বাথুইচিং মারমা; এবং ৪. উচনু মারমা (৩৯), পীং চাইসুইমং মারমা। তারা সকলেই নিরীহ গ্রামবাসী বলে স্থানীয়রা জানান।
সেনা নির্যাতনের ভয়ে উক্ত ক্যাম্পে হাজির না হলে তাদের অভিভাবকরা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে হাজির হন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাস ও হয়রানি করার পর সেনাবাহিনী সেদিন তাদেরকে ছেড়ে দেয়। সেদিন এলাকাবাসীদেরকেও ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে গালিগালাস করে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নস্যাৎ করা, জুম্ম জনগণের আন্দোলনকে দুর্বল করা, সর্বোপরি চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্মস্বার্থ-বিরোধী নীলনক্সা নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করার হীনলক্ষ্যে ক্ষমতাসীন বিশেষ গোষ্ঠীর যোগসাজশে সরকার, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সোচ্চার ব্যক্তিবর্গদেরকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুষ্কৃতিকারী হিসেবে পরিচিহ্নিত করার একের পর এক ষড়যন্ত্র করে চলেছে।
তারই অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী তিন পার্বত্য জেলায় অস্ত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেফতার, জেলে প্রেরণ, ক্রসফায়ারের নামে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা, ঘরবাড়ি তল্লাসী, মারধর ইত্যাদি মানবতা বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে।