বাচ্চু চাকমা
বৈশ্বিক সামরিক উপস্থিতির বিচারে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত আদিবাসী জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর আবাসভূমি ও অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল হচ্ছে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সামরিকায়িত অঞ্চল। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের ‘জীবন আমাদের নয়’ (লাইফ ইজ নট আওয়ারস) রিপোর্টে জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি ৬ জন জুম্ম ব্যক্তির পেছনে ১ জন সেনা সদস্য নিয়োজিত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। ইবগিয়া কর্তৃক ২০১২ সালে প্রকাশিত ‘মিলিটারাইজেশন ইন দা চিটাগং হিল ট্যাক্টস, বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্ট-১৪ অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরে প্রতি ৪০ জন জুম্ম ব্যক্তির পশ্চাতে একজন সৈন্য নিয়োজিত ছিল।
বস্তুত বলা যেতে পারে যে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলছে সামরিক শাসন। প্রায় অর্ধ-শতাব্দী ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চালু রাখা হয়েছে এই নির্মম নির্দয় সেনাশাসন! অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই দেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক হারে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৩ সাল থেকে প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিকায়ন শুরু হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অাঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবির বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে রুমা, আলিকদম ও দীঘিনালায় তিনটি সেনানিবাস তৈরি করা হয়েছিল। সেই সময়ে জুম্ম জনগণের প্রাণপ্রিয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার এই সেনানিবাস স্থাপনের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে বক্তব্য রেখেছিলেন। তারপরও পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে সেনানিবাস ও সেনাক্যাম্প সম্প্রসারণ থেমে থাকেনি।
সেসময় ১৯৭১ সালে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযোগী শক্তি হিসেবে গঠিত রাজাকার ও মুজাহিদ দমনের নামে নিরীহ জুম্ম জনগণের উপর নেমে আসে সেনাবাহিনীর বহুমুখী নৃশংসতা, দমন ও পীড়ন। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই সরকারের ছত্রছায়ায় হাজার হাজার মুসলিম পরিবার পার্বত্য চট্টগ্রামে, বিশেষ করে, জনসংখ্যা স্থানান্তর কর্মসূচি হিসেবে, খাগড়াছড়ি জেলার ফেনী উপত্যকায় বসতি প্রদানের কার্যক্রমকে নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার জুম্ম জনগণের উপর এ ধরনের সামরিক দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেছিল।
স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৭৫ হতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর ধরে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সামরিক শাসনামল চলেছিল বাংলাদেশে। সেসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিকায়নের কাজ অধিকতর জোরদার হয়ে উঠে। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও জাতীয় সমস্যার মতো একটি সমস্যাকে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছিল সামরিক উপায়ে। অপরদিকে জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটি অর্থনৈতিক সমস্যা নাম দিয়ে তৈরি করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। গোড়া থেকেই উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি’কে। সেসময় উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে মূলত সামরিক বাহিনীর চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগত মুসলমান পরিবার বসতি প্রদানের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সংখ্যা প্রচন্ডভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ১৯৭৭ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে “অপারেশন দাবানল” জারি করে সামরিকীকরণের অধীনে নিয়ন্ত্রণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে ১,১৫,০০০ সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি ৬ জন জুম্ম জনগণের পেছনে ১ জন সেনা দায়িত্বরত থাকতেন। এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারী হয়ে উঠল স্বল্প সময়ের মধ্যে সামরিকীকরণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে স্থাপন করা হয় ৫০০ এর বেশি সেনাক্যাম্প। এর সাথে সমতল জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার মুসলিম পরিবার বসতি প্রদানের মাধ্যমে জোরদার করা হয় ইসলামীকরণ।
সেসময় ২৫ মার্চ ১৯৮০ সেনাবাহিনীই জুম্মদের উপর প্রথম গণহত্যা সংঘটিত করে, যা কলমপতি গণহত্যা নামে পরিচিত। সেনাবাহিনী ও বিডিআর বাহিনীর ছত্রছায়ায় ভিডিপি ও বেআইনী মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা সুপরিকল্পিতভাবে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়। ঘটনার একদিন পূর্বে কাউখালীর পোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন পোয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে মিটিং করার অছিলায় বিদ্যালয় সন্নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার এলাকার কার্বারীদেরকে দেয়া নোটিশের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে ঘটনার দিন বৌদ্ধ বিহাবে সমবেত হতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেদিন সকালে জুম্ম এলাকাবাসী সমবেত হলে সেনাবাহিনী জুম্মদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায় এবং মুসলমান সেটেলাররা একের পর এক জুম্মকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই গণহত্যায় নারী ও শিশু সহ প্রায় ৩০০ জন জুম্মকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ বৌদ্ধ বিহার ও বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন করা হয়।
জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলের পর ক্ষমতায় আসেন আরেক সামরিক শাসক জেনারেল হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। সামরিকায়নের পাশাপাশি ইসলামিকরণ নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জেনারেল জিয়ার শাসনামলে ১৯৭৯ সাল হতে জেনারেল এরশাদের শাসনামলের ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সরকারি অর্থ সহায়তায় সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের জায়গা-জমির উপর চার লক্ষাধিক বহিরাগত মুসলমানদের বসতি প্রদান করা হয়। মুসলিম সেটেলারদের সেনাবাহিনী শুধু মানব ঢাল হিসেবে নয়, নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ভূমিদখলে রাখার উপায় হিসেবেও ব্যবহার করেছিল। ১৯৮০ সালে ‘অপারেশন দাবানল’ ঘোষণা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে একপ্রকার সামরিক শাসন প্রবর্তন করা হয়। আশি দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘোষণা করা হয় উপদ্রুত এলাকা হিসেবে।
৮০ দশক পাহাড় ছিল সেনাবাহিনী হাতে অবরুদ্ধ এক আতংকের জনপদ। জুম্মদের গ্রামে গ্রামে একের পর এক গণহত্যা চালিয়েছিল সেনাবাহিনী ও বহিরাগত সেটেলাররা যৌথভাবে। সেনাবাহিনীর ভয়ে জুম্ম জনগণ যখন পালিয়ে বাঁচতে চায়তো, তখন বহিরাগত মুসলিম সেটেলাররা জুম্মদের সম্পত্তি লুটপাট করে নিয়ে যেতো। আর যদি জুম্ম জনগণ একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, তখন সেনা সদস্যরা গুলি করে জুম্মদের তাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতো। এরই সুযোগে বহিরাগত মুসলিম সেটেলাররা বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে আদিবাসীদের সর্বস্বান্ত করতো।
সশস্ত্র আন্দোলন চলাকালে সেনাবাহিনী ও মুসলিম সেটেলারদের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৫টি গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছিল। এতে জুম্মদের শত শত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। কয়েক শত জুম্ম অধিবাসীকে হত্যা খুন করা হয়। জুম্ম নারী ও শিশুদের শিকার হতে হয় পাশবিক ধর্ষণ ও হত্যার। ফলে শত শত পরিবার জুম্ম নর-নারী নিজ জায়গা-জমি ও বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হতে বাধ্য হয়। ফলে জুম্ম জনগণ বার বার নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে বনে-জঙ্গলে ও বিদেশের মাটিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। অনেকে নিজ দেশে প্রবাসী হয়ে নিরাপত্তাহীন জীবনযাপন অথবা গভীর অরণ্যে পলাতক জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। আর অনেকে চিরতরে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
জনসংহতি সমিতির তথ্য মতে, জুম্ম জনগণের উপর সেনাবাহিনী ও মুসলিম সেটেলারদের বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়ে ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জুম্ম জনগণ অন্তত ৯ বার দফায় দফায় ১ লক্ষ ৫৭ হাজার লোক প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। যেমন কয়েক হাজার জুম্ম জনগণ ১৯৮৪ সালে বরকল থেকে মিজোরাম আর ১৯৮৬ সালে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। সেই সময় বহিরাগত মুসলিম সেটেলাররা সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জুম্মদের উচ্ছেদের লক্ষ্যেই গ্রামের পর গ্রাম অগ্নিসংযোগ ও আক্রমণ করেছিল।
১৯৮৯ সালে ৪ঠা মে সেনাবাহিনী ও মুসলিম সেটেলাররা লংগদুতে গণহত্যা চালায় এবং ৪০ জন জুম্মকে হত্যা করে। ১৯৯২ সালে লোগাং গণহত্যায় শতশত লোক হত্যা করা হয় আর অনেক মানুষকে জীবন্ত পুড়ে ফেলাসহ আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে যাবার সময় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রস্তাব পাস করে যাতে বাংলাদেশ সরকারকে পার্বত্য এলাকায় সামরিক বাহিনীকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখে। এরপর নানিয়াচরের গণহত্যায় শ’ খানেক লোককে হত্যা করা হয়। সেসময় জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি অগণিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন। হিসেব করে দেখা গেছে যে, ১৯৭১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার জুম্ম মহিলা ধর্ষণের শিকারে পরিণত হয়েছেন।
১৯৯৫ সালে এক হিসেবে দেখা যায়, ধর্ষণের অধিকাংশই ঘটেছে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে যা নিরাপত্তা বাহিনীর সম্পৃক্ততা ছিল। এসময় জুম্মদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তথা সেনাবাহিনী উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন, ধর্ষণ, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, গণহারে গ্রেফতার, কারাগারে নিক্ষেপ, অপহরণ করে যুদ্ধের পর্যায়ে নিয়ে যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিকায়ন ও সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় ইসলামীকরণ বন্ধ হয়নি। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার চুক্তির মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে দিয়েছে। বিপরীত পক্ষে সরকার একদিকে ইসলামীকরণ নীতি বাস্তবায়ন এবং অপরদিকে জুম্ম জনগণের জাতীয় পরিচিতি একেবারে বিলুপ্ত করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম সামরিক শাসন তথা সামরিকায়ন অব্যাহত রেখেছে। ১৯৮০ সালে প্রবর্তিত ‘অপারেশন দাবানল’ এর পরিবর্তে ২০০১ সাল থেকে ‘অপারেশ উত্তরণ’ প্রতিস্থাপন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে একপ্রকার সামরিক শাসন জারী রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে ও সহায়তায় সমতল ভূমি থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠী ও মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহতভাবে অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী সকল অস্থায়ী সামরিক, আনসার এবং ভিডিপির ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা বলা আছে। চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬টি স্থায়ী সেনানিবাস থাকতে পারবে, তার মধ্যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান তিন জেলায় তিনটি আর আলীকদম, রুমা ও দীঘিনালাসহ ৬টি। সরকারের মতে, প্রায় ৫০০ শতাধিক অস্থায়ী ক্যাম্প হতে ২৪০টি ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু জনসংহতি সমিতির মতে, তিন দফায় মাত্র ১০০টি অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো ৪০০-এর অধিক অস্থায়ী ক্যাম্পে রয়েছে। অধিকন্তু ক্যাম্প প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া ২০০৯ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে।
১৬-২৭ মে ২০১১ সালে নিউইর্য়কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের অধীন আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের দশম অধিবেশনে উল্লেখ করা হয় যে, ১৯৭১ সালে জাতিরাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে। এর প্রভাবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামে অতিরিক্ত সামরিক বাহিনীর ঘনত্ব নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল বেসামরিক মানুষের জীবনে। যার ফলে সেনাক্যাম্প সম্প্রসারণ ও স্থাপন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মনে হয় যেন পার্বত্য চট্টগ্রামকে সামরিক বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হচ্ছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী প্রতি পদে পদে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে।
বস্তুত পার্বত্য চুক্তি পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর মূল কাজ হচ্ছে অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে সম্পূর্ণভাবে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করা। তাই একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে, অন্যদিকে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করে চলেছে। তার কিছু নমুনা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
সাধারণ প্রশাসনে হস্তক্ষেপ: ২০০১ সালে প্রবর্তিত ‘অপারেশন উত্তরণ’-এর বদৌলতে সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, উন্নয়ন, বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। এলক্ষ্যে সময়ে সময়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে। যেমন নিরাপত্তা বাহিনীর রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭ জানুয়ারি ২০১৫ পার্বত্য চুক্তি–পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ১১টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ৫ নম্বর সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ‘কোন দেশি-বিদেশি ব্যক্তি কিংবা সংস্থা কর্তৃক পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতীয়দের সাথে সাক্ষাৎ কিংবা বৈঠক করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী অথবা বিজিবির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে’—এর অর্থ দাঁড়ায় যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো আদিবাসী বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে, কিংবা সেখানে বৈঠক করতে চাইলে, অথবা আদিবাসীর মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে চাইলে, সেখানে স্থানীয় প্রশাসন বা সেনাবাহিনী অথবা বিজিবির প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে কথা বলতে হবে।
ইসলামীকরণ নীতি বাস্তবায়ন: পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামিক সম্প্রসারণবাদ বাস্তবে রূপ দিতে পার্বত্য চুক্তিকে পদদলিত করে সেনাবাহিনী একদিকে সেটেলার বাঙালিদেরকে আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে বিবেচনা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করে আসছে, অন্যদিকে আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদের, যারা চুক্তি-পূর্ব অস্থিতিশীল সময়ে আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হয়েছিল, তাদেরকে বেহাত হওয়া জমি ফেরত দিয়ে স্ব স্ব স্থানে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়ে আসছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকারের আমলে নতুন ২৮,০০০ সেটেলার বাঙালি পরিবারকে রেশন প্রদান ও ১০,০০০ বহিরাগত বাঙালি পরিবারকে সাজেক এলাকায় পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সমতল ভূমি থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠী ও মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ অব্যাহতভাবে ছিল। উল্লেখ্য যে, আজও চুক্তি-পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় মুসলিম সেটেলারদের গুচ্ছগ্রাম সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং ২০০৭ সালে সাইক্লোন সিডর ও ২০০৯ সালে আইলা’র অনেক ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমানদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে লংঘন করে তিন পার্বত্য জেলায় বসতি প্রদান করা হয়।
মুসলিম সেটেলারদের সংগঠিতকরণ: সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র মুসলিম সেটেলারদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্লাটফর্মে সংগঠিত করে, পার্বত্য গণপরিষদ, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, বাঙালি ছাত্র ঐক্য পরিষদ ইত্যাদি নামে উগ্রসাম্প্রদায়িক ও উগ্রজাতীয়তাবাদী সংগঠনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ড পরিচালিত করে আসছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকারের আমলে তথাকথিত ‘সমঅধিকার আন্দোলন’ গঠনের মাধ্যমে সেটেলার বাঙালিদের সংগঠিত করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করে। অপরদিকে সম্প্রতি বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ’ নামে সম্মিলিতভাবে একটি একক সংগঠন গঠন করে দেয়া হয়। এই উগ্রসাম্প্রদায়িক ও উগ্রজাতীয়তাবাদী সংগঠন লেলিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী ভূমি কমিশনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিসহ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে আসছে।
সাম্প্রদায়িক হামলা: পার্বত্য চুক্তি পরবর্তী কালে জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর ভূমি বেদখল ও তাদের স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় আদিবাসী জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর উপর ২০টি সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। তাদের অন্যতম হচ্ছে ২০০৩ সালে মহালছড়ি হামলা, ২০০৮ সালে বাঘাইহাট হামলা, ২০১৩ সালে তাইন্দং-মাটিরাঙ্গা হামলা, ২০১৭ সালে লংগদু-তিনটিলা হামলা অন্যতম। এসব সাম্প্রদায়িক হামলায় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে জুম্মদের অর্থনৈতিক ভিত্তি পঙ্গু করে দেয়া হয়।
জুম্ম অধিকার কর্মীদের ক্রিমিলাইজেশন: সেনাবাহিনী জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনরত ব্যক্তিবর্গ ও সমর্থকদেরকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুষ্কৃতিকারী হিসেবে পরিচিহ্নিত করার একের পর এক ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী জনসংহতি সমিতি সদস্যসহ চুক্তি বাস্তবায়নে সোচ্চার ব্যক্তিবর্গদের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো মামলা দায়ের, নির্বিচার গ্রেফতার, একটা মামলায় জামিন হলে সাথে সাথে আরেকটি সাজানো মামলায় জেল গেইট থেকে গ্রেফতার বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘অস্ত্রধারী’ সাজিয়ে অবৈধ গ্রেফতার ও জেলে প্রেরণ, জোরপূর্বক গুম, তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার’-এর নামে বিচার-বহির্ভূত হত্যা, ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন, সন্ত্রাসী খোঁজার নামে রাত-বিরাতে ঘরবাড়ি তল্লাসী ইত্যাদি মানবতা বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন: ২০০১ সালে প্রবর্তিত ‘অপারেশন উত্তরণ’-এর বদৌলতে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাধে অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্রেফতার, মারধর, জেলে প্রেরণ, ঘরবাড়ি তল্লাসী, হয়রানি করে যাচ্ছে। ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো ইত্যাদি দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে এবং জনসংহতি সমিতি, সিএইচটি কমিশনের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে ২০০৪ হতে ২০১১ সালের মধ্যে সংগঠিত সামরিক বাহিনীর দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল প্রায় ১,৪৮৭টি। তার মধ্যে ছিল বিনা অপরাধে মৃত্যু, আঘাত, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, মন্দির ধ্বংস, গ্রেপ্তার, প্রহার, হয়রানি ও উচ্ছেদ ইত্যাদি।
ভূমি বেদখল ও অর্থনৈতিক স্বার্থ: পার্বত্য চুক্তির পরও সেনাবাহিনী ‘শান্তকরণ প্রকল্প’ নামে কাউন্টার ইনসার্জেন্সী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। এই প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনী ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের বরাদ্দ পেয়ে থাকে। সেনাবাহিনীকে উক্ত প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের হিসাব সরকারের নিকট দিতে হয় না। এই অর্থ মূলত মুসলিম সেটেলারদের সংগঠিতকরণ, গুচ্ছগ্রাম সম্প্রাসারণ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে ব্যয় করে থাকে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর রয়েছে পর্যটন ব্যবসায়িক স্বার্থ। তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নামে সেনাবাহিনী তিন পার্বত্য জেলায় শত শত একর জায়গা-জমি অধিগ্রহণ ও জবরদখল করেছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিলাসবহুল চিম্বুক ও সাজেক পর্যটন কেন্দ্র। অধিকন্তু বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন খাত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনা কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে লাভ করে থাকে কোটি কোটি টাকার অর্থ।
১৬ এপ্রিল ২০১৭ সালে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে যে, “বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য এলাকায় জাতিগত সংখ্যালঘু এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও অন্যদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে—এই ধরনের অভিযোগ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে এবং ভবিষ্যতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনসমূহে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি অন্তরায় হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে”।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন দেশে শান্তি ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের মধ্যে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অত্রাঞ্চলের সমস্যা শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত ও প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। ২০১১ সালে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের অধিবেশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর যে সমস্ত সদস্য দেশের অভ্যন্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত, তাদেরকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ না করতে সুপারিশ গৃহীত হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ক্ষমতায় সামরিক সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন তত্বাবধায়ক সরকার ও দলীয় রাজনৈতিক সরকার বহুবার অদলবদল হয়েছে, কিন্তু কোন সরকার আমলেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেনাশাসন হতে মুক্তি দিতে পারেনি। কোন সরকারই পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের উপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন, অত্যাচার, অবিচার থামাতে পারেনি। মূলত বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ফ্যাসীবাদী কায়দায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামিক সম্প্রসারণবাদ কার্যকর করতেই প্রত্যেকটি সরকারই পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিকায়নের নীতি অব্যাহতভাবে গ্রহণ করে এসেছে। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ‘অপারেশন উত্তরণ’সহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের কোন বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী সম্প্রসারণবাদ রোধ করার ক্ষেত্রে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামের বেসামরিকীকরণ অত্যাবশ্যক ও জরুরী।
* বাচ্চু চাকমা bachchuchakma280@gmail.com