হিল ভয়েস, ১২ এপ্রিল ২০২০, বাংলাদেশ: বাংলাদেশে চলমান করোনা প্রাদুর্ভাব বিষয়ে গত ১২ এপ্রিল ২০২০ বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও কাপেং ফাউন্ডেশন-এর এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, করোনাভাইরাসের চলমান প্রাদুর্ভাব আজ বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব কটি দেশ এটি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশও আক্রান্তের বাইরে নয়। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৬২০ ছাড়িয়ে গেছে। দেশে প্রায় ত্রিশ লক্ষের অধিক আদিবাসী রয়েছে। এদের অধিকাংশই হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ। করোনার প্রভাবে এবং লকডাউনের কারণে সারাদেশের খেটে-খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষের মতো পাহাড় ও সমতলের কয়েক হাজার আদিবাসীরা পরিবারও চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় তাদের কাছে পৌঁছেনি কোন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সামগ্রীও।
বিশেষ করে গাইবান্ধার প্রায় ১২০০টি সাঁওতাল পরিবার ও রাজশাহীতে ২০০০টি সাঁওতাল, পাহাড়ীয়া ও ওড়াও পরিবার; ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়ায় ৩০০ কোচ-বর্মণ পরিবার; সিলেট অঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলাধীন শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়নের ২ শতাধিক গারো জনগোষ্ঠী; কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের দুর্গম গ্রাম বৈদ্যপাড়ার অর্ধ শতাধিক রাখাইন পরিবার; বান্দরবান জেলার লামা, থানচি, আলীকদম, রুমা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ম্রো, খুমি, চাক, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের অন্তত ৫,০০০ পরিবার; চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ডের বিভিন্ন পাহাড়ে বসবাসকারী প্রায় ৮০০ ত্রিপুরা পরিবার; রাঙ্গামাটির সাজেকের হতদরিদ্র ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীসহ খাগড়াছড়ির পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, মহালছড়ি ও রামগড় প্রভৃতি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা জনগোষ্ঠীর ৭,০০০ পরিবার জীবন কাটাচ্ছে অনাহার অর্ধহারে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত আদিবাসী পরিবার জীবিকার প্রয়োজনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরগুলোতে যেমন- চট্টগ্রাম, সিলেট, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, ময়মনসিংহ শহরগুলোতে বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে চাকরিসহ বিভিন্ন নিম্ন আয়ের পেশার সাথে যুক্ত। শুধুমাত্র ঢাকা শহরে শত শত মানুষ বিউটি পার্লার, বাসাবাড়ি, দারোয়ান, ড্রাইভার ইত্যাদি পেশায় কাজ করছে, যাদের বেশিরভাগ চাকরি হারাতে বসেছেন। এসমস্ত পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
হাজং ও বানাই পরিবারগুলো এখন রোগের আশংকা ও খাদ্য সংকটের কবলে:
নালিতাবাড়ি, ধোবাউড়া, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, মধ্যনগর ও তাহিরপুর থানার বেশ কিছু হাজং ও বানাই গ্রামের প্রায় ৮০০ পরিবারের ৩০ হাজার লোকের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। উক্ত অঞ্চলের অধিকাংশ হাজং ও বানাই জনগণ দিনমজুর শ্রমিকের কাজ করে। লকডাউনের ফলে বর্তমানে তাদের কাজ স্থগিত হয়ে পড়লে তাদের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
তিনবেলার খাবার এখন কোন কোন হাজং ও বানাই পরিবারের সদস্যরা একবেলা খেতে বাধ্য হচ্ছে। তা সত্ত্বেও তাদের সামান্য খাদ্য মজুদটুকুও শেষ হয়ে যাচ্ছে। হাজং ও বানাই পরিবারগুলো এখন একদিকে রোগের আশংকা অন্যদিকে খাদ্য সংকটের চরম দূর্ভোগের কথা আশংকা করছে।
শ্রীমঙ্গলে খাদ্য সংকটে আদিবাসী গারোরা:
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সিলেট অঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলাধীন শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়নের গারো টিলা নামক এলাকার আদিবাসী গারোরা তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে অঘোষিত লকডাউনের কবলে পড়ে এই গারো টিলা এলাকার ৩৫টি গারো পরিবারের প্রায় ২ শতাধিক দরিদ্র মানুষ অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু তারা এখনও কোন ধরনের সরকারী, বেসরকারী সহযোগিতা পাননি।
উল্লেখ্য, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে সরকার দেশব্যাপী গত ২৬ মার্চ হতে সরকারী ছুটি ঘোষণা করে। বন্ধ করা হয় গণপরিবহন। জরুরি দোকান ব্যতীত বন্ধ করা হয় সকল দোকানপাট, বাজার। ফলে, বিশেষ করে যারা গরীব, স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী তারা পড়েছেন বিপদে। নেই কর্মসংস্থান, নেই পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ।
জানা গেছে, গারো টিলার ৩৫ পরিবারের মধ্যে মাত্র ১৯ পরিবারের ১৯ জন ফিনলে চা কোম্পানির স্থানীয় সোনাছড়া চা বাগানে স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত আছেন। কিন্তু মাত্র ১ জনের শ্রমিকের উপার্জনে তার পরিবার চলে না। অপরদিকে বাকী ১৬ পরিবারের স্থায়ী কোন চাকরি নেই। এই পরিস্থিতিতে কোন কাজ করারও সুযোগ নেই। ফলে এই গারো টিলার দরিদ্র আদিবাসী গারোরা এখন অনাহারে, অর্ধাহারে থেকে কঠিন সময় অতিবাহিত করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অচিরেই সরকারী, বেসরকারী কোন সহযোগিতা না পেলে তাদের জীবনে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। হয় তাদের না খেয়ে বা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে। সূত্র: সিলেটটুডে.কম।
রামুতে ৬২ রাখাইন পরিবারের দিন কাটছে অনাহারে:
করোনার প্রভাবে খাদ্য সংকটের কারণে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের দুর্গম গ্রাম বৈদ্যপাড়ার ৬২টি রাখাইন পরিবারের দিন কাটছে অনাহারে। গ্রামবাসীদের বেশির ভাগই রাখাইন পরিবার হতদরিদ্র, কৃষক এবং দিনমজুর।
সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন অবস্থায় সবাই কর্মহীন হয়ে পড়ায় গ্রামটিতে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। এমনকি করোনা পরিস্থিতির এই অচলাবস্থায় মাস পেরুলেও এখানকার একটি পরিবারও এখনো পায়নি সরকারি, বেসরকারি বা ব্যাক্তি উদ্যোগেও কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা। তাই দুর্গম এই গ্রামের রাখাইন মানুষের অনেকেই অনাহারে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে এ প্রতিবেদকের কাছে সহজ সরল এক গ্রামবাসীর প্রশ্ন, ‘কবে লকডাউন শেষ হবে, কখন আবার কাজ করতে পারবো, আমরা কখন খাবার পাব?’
জানা গেছে, রামু উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এ বৈদ্যপাড়া গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থাও তেমন ভালো না হওয়ায় খুব একটা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না এ গ্রামের মানুষ। বরাবরই যেন অবহেলিত বৈদ্যপাড়ার হতদরিদ্র এসব বাসিন্দারা। সূত্র: আজাদী।
সাজেকের ১৩০ গ্রামের ৭ হাজারের অধিক পরিবার অনাহার অর্ধাহারে:
করোনাভাইরাসের কারণে অনাহারে অর্ধাহারে কাটাচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের কর্মহীন ১৩০ গ্রামের প্রায় ৭ হাজার পরিবারের জুম্ম গ্রামবাসী, যারা অধিকাংশই ত্রিপুরা। জানা যায়, উদলছড়ি, নতুন জপ্পই, শান্তি পাড়া, নিউ থাংনাং, তারুম পাড়া, কজইছড়ি, ৯নং ত্রিপুরা পাড়া, ভুয়াছড়ি, মন্দিরাছড়া, রতনপুর, হালিম পাড়া, লংকর ডেবাছড়া, ভূইয়াছড়াসহ ১৩০টি প্রামে ৭ হাজারের অধিক পরিবার কেউ ত্রাণ সহায়তা পাননি। এসব গ্রামের অবস্থান হচ্ছে সাজেকে দূর্গম এলাকায়, যেখানে অধিকাংশ গ্রামের লোকজনের যাতায়াত হচ্ছে পায়ে হাঁটার রাস্তা।
আর সাজেকের অধিকাংশ গ্রামসহ ১৩০টি গ্রামের লোকজনের প্রধান পেশা হচ্ছে জুমচাষ ও কৃষি। গ্রামের লোকজন উৎপাদিত কৃষি পণ্য মাচালং বাজার, উজো বাজার, বাঘাইহাট বাজার ও ভূয়াছড়ি গ্রাম্য বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনাভাইরাসের কারণে হাট-বাজার বন্ধ থাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করতে না পারাতে বিপাকে পড়েছেন ১৩০টি গ্রামের লোকজন। ঘরে বসে অলস দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
তবে সড়ক ও নৌপথের আশপাশের এলাকা ব্যতীত দুর্গমতার কারণে যুগ যুগ ধরে সাজেকের অধিকাংশ গ্রাম সরকারি-বেসরকারিভাবে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া ৭-৮ শত পরিবারের মাঝে সরকারি বেসরকারি ত্রাণ দেওয়া হয়ে থাকলেও এখনও ১৭৪টি গ্রামের মাঝে ১৩০টি গ্রামে কোন ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি।
কেবল সাজেক এলাকায় নয়, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, মহালছড়ি প্রভৃতি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা জনগোষ্ঠীর অন্তত ৭০০০ পরিবারে চলছে খাদ্য সংকট। এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেউ ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসেননি বলে জানান গ্রামবাসীরা।
বান্দরবানের লামা, থানচি, আলীকদম, রুমা ও রোয়াংছড়িতে আদিবাসীরা খাদ্য সংকটে:
বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম কাপ্রু পাড়ার ৫০টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩০টি পরিবারের ঘরে খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় মারাত্মক সঙ্কটের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। করোনা ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য তাদের পাড়াতে খাসুর (বাঁশের গেট) দিয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে স্বেচ্ছায় পাড়া বন্ধ (লকডাউন) করে রেখেছেন আদিবাসী ম্রো গ্রামবাসী।
পাড়া বন্ধের পর থেকে প্রথা অনুযায়ী পাড়াবাসীরা বাইরে যান না, ফলে খাদ্য সঙ্কট আরও তীব্রতর হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাদের নিকট কোন সহায়তা পৌঁছেনি। কেবল কাপ্রু ম্রো পাড়াই নয়, বান্দরবান জেলার লামা, থানচি, আলীকদম, রুমা নাইক্ষ্যংছড়ি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত অনেক পাড়ায় করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া অন্তত ৫০০০ পরিবার খাদ্য সহায়তা পায়নি।
থানচি উপজেলার সেকদু মৌজার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার রয়েছে যেখানে বেশিরভাগ পরিবার খাদ্য সংকটে ভুগছে। সেকদু মৌজার সবচেয়ে বেশি খাদ্য সংকটে থাকা পাড়াগুলো হলো থং নাং খুমি পাড়া, সতি চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া, জনিরাং পাড়া এবং হান্ডুরাং পাড়া। দুর্গম পাড়ার ম্রো, খুমি, চাক, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের অনেক পরিবার মারাত্মক খাদ্য সঙ্কটে আছে বলে জানান স্থানীয় মৌজা প্রধানরা।
থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত তিন্দু, রেমাক্রি, বড় মদক এবং ছোট মদকের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারি কোন কর্মকর্তা সাহায্য নিয়ে তাদের এলাকায় এখনও যাননি। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, যোগাযোগের দুর্গমতায় সরকারি কিংবা বেসরকারি অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে তারা বঞ্চিত।
দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা খাদ্যের জন্য জুম ফসলের ওপর নির্ভর করে, তবে বেশিরভাগ পরিবার বছরের পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় এপ্রিল থেকে তাদের খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হয় বলে গ্রামবাসীরা জানান। সূত্র: ডেইলি স্টার বাংলা।
সীতাকুন্ডের ত্রিপুরা পরিবারগুলো কাটাচ্ছে মানবেতর জীবনযাপন:
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ডের বিভিন্ন পাহাড়ে বসবাসকারী প্রায় ৮০০ ত্রিপুরা পরিবারের কাছে এখনো পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পৌঁছায়নি। ফলে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে কর্মহীন ত্রিপুরা পরিবারগুলো।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সীতাকুন্ডের বারৈয়ারঢারা ইউনিয়নের ছোট দারোগাহাট, সীতাকুন্ড পৌর সদরের মহাদেবপুর, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়নের সুলতানা মন্দির ও ছোট কুমিরা, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্য, দক্ষিণ সোনাইছড়ি ও মদনাহাট এলাকায় প্রায় ৮০০ ত্রিপুরা পরিবার আছে। তাদের কয়েকটি পরিবারের সদস্য ছাড়া প্রায় সবাই দিনমজুর।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ায় তাদের এলাকার লোকজন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এলাকার মানুষ খাদ্য সংকটে আছেন। তাঁরা পাহাড়ে জুম চাষের কাজ করতেন। এখন তাদের কাজ–কর্ম নেই। ত্রাণ নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ আসেননি। ছোট কুমিরা এলাকার অন্তত ৫০টি পরিবার একেবারে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে জানান একগ্রামবাসী। সূত্র: প্রথম আলো।
চাঁদপুর জেলার অসহায় ও প্রান্তিক ত্রিপুরারা চরম খাদ্য সংকটে:
চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ ১৩টি অঞ্চলে অসহায় ও প্রান্তিক ত্রিপুরাদের বসবাস রয়েছে। ১৩টি অঞ্চলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোর ত্রিপুরাদের অবস্থা খুবই করুন। এলাকাগুলো হল- বহরিয়া, লক্ষ্মিপুর, গোবিন্দিয়া, বালিয়া, দক্ষিণ বালিয়া, হরিপুর, উত্তর বালিয়া, পৌরসভা, আশিকাটি, হামানকর্দ্দি, বাবুরহাট, আশ্রয়ন প্রকল্প ও ডাসাদী।
এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে প্রায় ৫০০টি ত্রিপুরা পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে অধিকাংশই হতদরিদ্র দিন মজুর। তারা দিনে এনে দিনে খায়। লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় চাঁদপুরের ত্রিপুরারা গত কয়েকদিন ধরে খুব কষ্টে অনাহারে অর্ধাহারে জীবন যাপন করছে। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক গৃহীত দেশব্যাপি সাধারণ ছুটি কর্মসূচির ফলে তাদের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
কাজের অভাবে চাঁদপুরের ত্রিপুরারা কয়েকদিন “কাজ নাই, তো খাবারও নাই” – এই কঠিন অবস্থায় আছে। এমতাবস্থায় তাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে কিছু ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন আদিবাসী অধিকার কর্মীরা। গত ৩ এপ্রিল চাঁদপুর উপজেলা প্রশাসনের ১০০ ত্রিপুরা পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়। তবে এখনো চার শতাধিক হতদরিদ্র ত্রিপুরা পরিবার ত্রাণের আশার বসে আছেন।
লকডাউনে রাজশাহী ও গাইবান্ধার ৩০০০ অধিক আদিবাসী পরিবার বিপাকে:
কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের কারণে গাইবান্ধার প্রায় ১২০০টি সাঁওতাল পরিবার ও রাজশাহীতে ২০০০টি সাঁওতাল, পাহাড়ীয়া ও ওড়াও পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকায় বিভিন্ন পাড়া যেমন- বাগান পাড়া, পশ্চিম টালি পাড়া, শেখ পাড়া, মোল্লা পাড়া, আলীগড়, মিয়াপুর, কলিমনগর, পবা নতুন পাড়া, বড় বন গ্রাম শেখ পাড়া, রওদাপাড়া কুসর সেন্টার, কইকুরি, হলদিবোনা, সন্তোষপুর, গোপালপুর, আন্ধ্যারকোঠা পাড়া। এ সমস্ত গ্রামে সাঁওতাল, পাহাড়ীয়া ও উড়াওদের ২০০০টি পরিবার বসবাস করেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ দিনমজুর করে দিনে আনে দিনে খায়, কেউ রিক্সা-ভ্যান চালায়, কেউ কেউ কৃষি শ্রমিক। তারা সবাই কোভিড-১৯ এর লকডাউনে ঘরবন্দি ও কর্মহীন হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। তাদের যেটুকু সঞ্চয় ছিল তাও শেষ বা শেষের পথে। তারা এখনও সরকারি ত্রাণ সহায়তা পায়নি।
অন্যদিকে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তিন গ্রামের প্রায় ১২০০ সাঁওতাল পরিবার করোনার লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলো হচ্ছে- কুয়ামারা, মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া। জানা যায়, করোনা আতঙ্কে এ তিন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে বসে আছেন। তারা প্রশাসনের কাছ থেকে কোন ধরণের সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা অভিযোগ করেন- পুলিশ প্রশাসন ও রংপুর চিনি মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকেই স্থানীয় সরকার তাদের কোন সহায়তা করে নি। সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম এলাকার সাঁওতালরা অভিযোগ করেছেন, তারা এখনও কোন ত্রাণ সহায়তা পাননি।
ফুলবাড়িয়ায় তিনশ’ কোচ-বর্মণ পরিবারে চরম খাদ্য সংকট:
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়ায় ৩০০ কোচ-বর্মণ পরিবার কর্মহীন হয়ে অভাবে দিন কাটাচ্ছে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ৩০০ কোচ-বর্মণ পরিবারের ১২০০ জন লোক রয়েছে। চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে আদিবাসী এই মানুষগুলো। সরকারি সাহায্য তো দূরের কথা, কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন কেউ তাদের সহায়তায় এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি। সরেজমিন উপজেলার রাঙামাটি ইউনিয়নের বাবুলের বাজার, কালাদহ ইউনিয়নের বিদ্যানন্দ গ্রাম, এনায়েতপুর ইউনিয়নের দুলমা গ্রাম, বাক্তা এবং পুটিজানা ইউনিয়নের কোচ-বর্মণ পাড়ায় গিয়ে এমন অবস্থা দেখা গেছে।