হিল ভয়েস, ৭ মার্চ ২০২০, রাঙ্গামাটি: ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্রসফায়ারের নামে সেনাবাহিনী কর্তৃক একজন যুবককে বিনাবিচারে হত্যা এবং সংস্কারপন্থী কর্তৃক ২ জনকে ও এএলপি কর্তৃক ৩ জনকে মোট ৫ জনকে হত্যা করা হয় বলে জনসংহতি সমিতি মাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত ৭ মার্চ ২০২০ তারিখে জনসংহতি সমিতি “ফেব্রুয়ারি ২০২০: পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর মাসিক প্রতিবেদন” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
উক্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেটেলার বাঙালি মুসলিমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম অধিবাসীদের জায়গা-জমি জবরদখল করে একটি ঘর নির্মাণ করতে গেলে জুম্মরা বাধা প্রদান করে এবং তার জেরে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় সেটেলাররা জুম্মদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতি ও অধিকার কর্মীদের ক্রিমিনালাইজেশনের অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নামে সেনাবাহিনী কর্তৃক ৪টি বাড়ি তল্লাশি করা হয়, ৪ জনকে গ্রেফতার করে ক্যাম্পে অন্তরীণ করে রাখা হয় এবং ক্রসফায়ারের নামে একজন যুবককে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়।
সেনাবাহিনী ও শাসকদল-সমর্থিত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অবাধ দৌরাত্ম্য অব্যাহত রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা-সমর্থিত সংস্কারপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক ৮ জনকে অপহরণ করা হয়। সংস্কারপন্থী কর্তৃক ২ জনকে ও এএলপি কর্তৃক ৩ জনকে মোট ৫ জনকে হত্যা করা হয়। এএলপি মদদপুষ্ঠ দুর্বৃত্ত কর্তৃক ১২টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংস্কারপন্থীরা সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি বাড়ি তল্লাসী চালায় এবং এ সময় একজন গৃহবধুকে টেনেহেঁচড়ে নির্যাতন করে।
ফেব্রুয়ারি মাসে বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের এক সভা আয়োজন করা হলেও কোরাম সংকটের কারণে আনুষ্ঠানিক সভা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। তবে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যালয়ে ভূমি কমিশনের নতুন অফিস উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের মতো এবারও প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ইন্ধনে সেটেলার বাঙালি মুসলিমরা ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান-সদস্যদের অফিস ঘেরাও করে। পার্বত্য চুক্তি লঙ্ঘন করে ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাবাহিনী রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন সাজেক ইউনিয়নের শিজক ছড়ায় একটি বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা এলাকাবাসীর প্রভূত ক্ষতি করবে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার মাতৃ-পিতৃ তর্পণ ও ধর্মীয় আচারাদি সম্পাদন উপলক্ষে ভারত গমনকে রাজনৈতিক হীনউদ্দেশ্যে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের হস্তক্ষেপ চাইছেন সন্তু লারমা’ মর্মে একটি বিশেষ কায়েমী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কর্তৃক ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত সংবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে জনসংহতি সমিতি প্রতিবাদ করেছে।