হিল ভায়েস, ২৯ মার্চ ২০২০, পার্বত্য চট্টগ্রাম: পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সাজেক ও বান্দরবানের লামার প্রত্যন্ত এলাকার পর এবার খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলায় ও বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রুমা উপজেলায় অর্ধশতাধিক শিশুর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দীঘিনালা উপজেলার প্রত্যন্ত আদিবাসী জুম্ম গ্রামেও হামের প্রাদুর্ভাবে অন্তত এক শিশু মারা গেছে এবং অর্ধশতাধিক শিশু আক্রান্ত হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, আরও একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। অপরদিকে রুমা উপজেলায় ৪ ম্রো শিশুকে রুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে যে, গত ১৯ মার্চ ২০২০ হতে ২২ মার্চ পর্যন্ত রুমা উপজেলার সদর, রেমাক্রী, জলেঙ্গ্যা ও তিন্দু ইউনিয়ন এবং বান্দরবান সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া থেকে ৬ জন আদিবাসী মারমা শিশুর হামে আক্রান্ত হয়ে রুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৫ জন সুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরে গেলেও একজনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। হামে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুরা হচ্ছে-
১. উমং মারমা (৭ বছর), পীং শৈলাপ্রু মারমা, গ্রাম আশ্রমপাড়া, রুমা সদর ইউনিয়ন। ১৬ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং সুস্থ হয়ে ১৯ মার্চ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়।
২. দোচিংঞো মারমা (৯ মাস), পীং থোয়াইচিং মারমা, কিউয়াবুয়া পাড়া, রুমা সদর ইউনিয়ন। ১৭ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং সুস্থ হয়ে ২১ মার্চ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়।
৩. দোচৈই মারমা (১৬ মাস), পীং জলি মং মারমা, পানতোলা পাড়া, জলেংগ্যা ইউনিয়ন। ১৭ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং সুস্থ হয়ে ২১ মার্চ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়।
৪. উচাইচিং মারমা (৬ বছর), পীং চানু মারমা, পলিপ্রাংসা পাড়া, তিন্দু ইউনিয়ন। ১৮ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং সুস্থ হয়ে ২৩ মার্চ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়।
৫. সুইচিংমং মারমা (৩ বছর), পীং মংতু মারমা, লুংঝিরি পাড়া, বান্দরবান সদর ইউনিয়ন। ১৯ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং সুস্থ হয়ে ২২ মার্চ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়।
৬. সুইমেচিং মারমা (৪ বছর), পীং প্রুছা অং মারমা, মংপ্রু পাড়া, বান্দরবান সদর ইউনিয়ন। ২২ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয়। আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেয়ার জন্য সুপারিশ করে ২৪ মার্চ রুমা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তবে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে কিনা জানা যায়নি।
অপরদিকে গত ২৮ মার্চ ২০২০ বিকেলের দিকে দীঘিনালা উপজেলাধীন মেরুং ইউনিয়নের আদিবাসী ত্রিপুরা অধ্যুষিত গ্রাম রথিচন্দ্র কার্বারি পাড়ায় হামে আক্রান্ত হয়ে মিস ধ্বনিকা ত্রিপুরা (৯), পিতা- অমি রঞ্জন ত্রিপুরা মারা যায়। ধ্বনিকা ত্রিপুরা স্থানীয় এক বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। এছাড়া, ২৯ মার্চ ২০২০ দুপুরের দিকে পান্তই ত্রিপুরা (৯) নামের অপর এক শিশুকে মুমুর্ষূ অবস্থায় দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেই গ্রামে অন্তত অর্ধশতাধিক শিশু হামে আক্রান্ত হয়েছে। যাদের অধিকাংশের বয়স ১০ বছরের নীচে।
জানা গেছে, ঘটনার খবর পেয়ে ২৯ মার্চ ২০২০ দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তনয় তালুকদার এর নেতৃত্বে একটি চিকিৎসা দল ঘটনাস্থলে যান। জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তনয় তালুকদার রোগটি সম্পর্কে ‘হামের লক্ষণ থাকলেও পরীক্ষা ছাড়া তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না’ বলে উল্লেখ করেন। তবে রোগের লক্ষণ দেখে অভিজ্ঞ স্থানীয়রা এটিকে হাম বলেই মনে করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রত্যন্ত এলাকা বলে এই গ্রামে কোন স্বাস্থ্যকর্মী আসেন না। তাদের শিশুদের হামের টিকাও দেয়া হয়নি।