হিল ভয়েস, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, নান্যাচর, রাঙ্গামাটি: গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সকাল আনুমানিক ৯:০০ টার দিকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন নান্যাচর উপজেলার বগাছড়ি ১৭ মাইল নামক এলাকায় ৭০-৮০ জন সেটেলার বাঙালি বেদখলের উদ্দেশ্যে আদিবাসী জুম্মদের জায়গায় ঘর তুলতে গেলে জুম্ম গ্রামবাসীরা বাধা প্রদান করে। এতে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয় এবং সেটেলার বাঙালিরা উল্টো জুম্ম গ্রামবাসীদের উপর হামলা শুরু করে। ফলে, উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘাত শুরু হয়, যা কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে আসা জুম্ম সিএনজি ও মোটর সাইকেল চালক ও আরোহীরা সেটেলারদের অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছে বলে জানা যায়। এসময় হামলায় অনন্ত মোহন চাকমা (৬৫), সাং-হাজাছড়ি পশ্চিম পাড়া, ঘিলাছড়ি, নানিয়াচার নামের এক মোটর সাইকেল আরোহী মাথায় ও হাঁটুতে গুরুতর জখম হয় এবং তাকে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানা যায়। এছাড়া সুফল চাকমা, পীং-মঙ্গলসেন চাকমা, গ্রাম-মেশিন পাড়া, মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি নামে এক মোটর সাইকেল চালকও হামলার শিকার হয় এবং তার কাছ থেকে মোবাইল ও কিছু টাকাও হামলাকারী সেটেলার বাঙালিরা ছিনিয়ে নেয় বলে জানা যায়। ঘটনার সময় বেশ কয়েকজন সেটেলার বাঙালিও আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ হাবিব নামের জনৈক এক সেটেলার বাঙালি দলবল নিয়ে জুম্মদের জায়গা বেদখলের উদ্দেশ্যে বগাছড়ি ১৭ মাইল এলাকায় সঞ্চিতা চাকমা (শিখা মা), পীং-রবি চন্দ্র চাকমার মালিকানাধীন জায়গায় একটি ঘর নির্মাণ করে। এর বিরুদ্ধে স্থানীয় জুম্মরা প্রতিবাদ জানালেও একদল সেনাসদস্যের উপস্থিতিতেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ আরও প্রায় ১০ পরিবার বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ স্থানীয় জুম্মরা ইতোমধ্যে নির্মিত ঘরের টিন খুলে ফেলে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ঘরটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সেটেলার বাঙালিরা আবার সেখানে ঘর তুলতে গেলে জুম্মরা বাধা দেয় এবং সংঘাতের সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, ঘটনার পর দুপুর সোয়া ১২টা হতে ১:০০ টার মধ্যে নানিয়াচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, সেনাজোনের টুআইসি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পাহাড়ি-বাঙালি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও জায়গা বেদখলের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকেই বৈঠক সমাপ্ত হয়। বৈঠকের সময় জুম্মরা তাদের মালিকানা সংক্রান্ত দলিলপত্র দেখালেও বেদখলে নেতৃত্বদানকারী হাবিবসহ সেটেলার বাঙালিরা কোন দলিলপত্র দেখাতে পারেনি বলে জানা যায়।
আরো জানা যায় যে, জুম্মদের জায়গা দখল করে সেটেলার কর্তৃক ঘর নির্মাণের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে জুম্মদের মধ্যে কারা বাঙালিদের উপর হামলা চালিয়েছে তাদের নাম-ঠিকানার তথ্য দিতে থাকেন নানিয়ারচর সেনা জোনের মেজর (টুআইসি)। তিনি ৫০/৬০ জন জুম্ম গ্রামবাসীর একটি তালিকা তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। সম্ভবত তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা সেনা অভিযান পরিচালিত হতে পারে বলে স্থানীয় জুম্ম অধিবাসীরা আশঙ্কা করছেন।