[মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র স্মৃতি, একই সাথে জাতীয় সংসদে দায়িত্বপালন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সংবিধান প্রণেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের কাছ থেকে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ‘মাওরুম’-এর সম্পাদক দীপায়ন খীসা। এই সাক্ষাৎকারটি হিল রিসার্স ও প্রোটেকশন ফোরামের নভেম্বর ২০০৭ প্রকাশিত ‘মাওরুম’ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার বিশেষ সংখ্যায় ছাপা হয়।]
সাক্ষাৎকারটি হুবুহু হিল ভয়েসের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলঃ
স্বাধীনতার পর গণ-পরিষদ সদস্য এবং দেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এবং আপনি দায়িত্ব পালন করেছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে তৎসময়ে আপনাদের একটা যোগাযোগ ছিল। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সঙ্গে নিজস্ব স্মৃতি প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে যখন আমি দেখেছি তখন তাকে তরুণ মনে হতো। আমরা গণপরিষদ এবং পরে জাতীয় সংসদে পাশাপাশি বসতাম। সংসদে তিনি পাহাড়ি জনগণের পক্ষে সোচ্চার কথাবার্তা বলতেন। তিনি বলতেন, আপনারা বাঙালিরা সংগ্রাম করে অধিকার পেয়েছেন। পাহাড়িদেরও আকাঙ্ক্ষা আছে অধিকার ভোগ করার। গণপরিষদের মাধ্যমে যে সংবিধান প্রণীত হচ্ছে – সে সংবিধানে পাহাড়িদের কথা বিবেচনা রাখবেন।
আমি লারমাকে প্রায় বলতাম অধিকার বঞ্চিত হওয়ার ব্যাথা আমরা বাঙালিরা ভালো বুঝি। কারণ বাঙালি নিজেই এই ব্যাথায় ভুক্তভোগী। তাই ভুক্তভোগী হিসেবে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি পাহাড়িদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না। আমি লারমাকে বলেছি সংবিধান সকলের জন্য সমান। সেখানে কারোর প্রতি কোনরূপ বৈষম্য থাকবে না। সংবিধানে সকলে সমান মর্যাদা ভোগ করবে। সকল ধর্মের, সকল জাতির মানুষের সমান অধিকার থাকবে। জবাবে লারমা বলতেন, সকলের সমান অধিকার তা ঠিক আছে। কিন্তু যারা বঞ্চিত তাদের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে, অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঞ্চিত জনগোষ্ঠীদের বিশেষ ব্যবস্থা, বিশেষ নিয়ম প্রণয়ন করার জন্য লারমা খুবই সোচ্চার কথাবার্তা বলতেন। তিনি পাহাড়ি মানুষের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, স্বকীয়তার স্বীকৃতির বিষয়ে কথা বলতেন। আমরা বলতাম, আমাদের যে ঐক্য তা মর্যাদার ঐক্য। সংখ্যাগরিষ্ঠের জোরে কাউকে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া আমাদের নিয়ম নয়। আমরা কোনদিন ভাবতে পারিনি- ভুক্তভোগী হিসেবে অন্য কাউকে বঞ্চিত করবো, সংখ্যালঘুদেরকে নিপীড়ন করবো। আমরা সংবিধানে সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মানুষদের সমানাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছি।
সংসদে লারমা প্রায়ই বলতেন অতীতে পাহাড়িরা বঞ্চিত হয়েছে। তাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা উনাকে বলেছি অতীতে বাঙালিরাও বঞ্চিত ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আমাদেরকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। সে কারণে বঞ্চিত হওয়ার বেদনা আমাদের অজানা থাকার কথা নয়। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিশেষ উন্নয়ন প্রসঙ্গে আমি লারমাকে বলেছি- উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করে আমাদেরকে জমা দেন। প্লানিং কমিশনের সঙ্গে কথা বলুন। প্লানিং কমিশনের চেয়ারম্যানসহ যারা দায়িত্বে আছেন নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান সকলে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ। প্লানিং কমিশন দেশের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। সুতরাং আপনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিশেষ পরিকল্পনা প্লানিং কমিশনে তুলে ধরেন। লামরা আমার কথায় আস্থা রাখলেন। উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করে প্লানিং কমিশনে তা উত্থাপন করলেন। আমরা উনার কাছ থেকে সক্রিয় সাড়া পেলাম।
লারমার সঙ্গে পারস্পরিক আস্থার বিষয়ে ড. কামাল বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ আলোচনা করতে করতে আমরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম। কোন প্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই আমরা নিছক কথা বলার জন্য কথা বলিনি। একে অপরকে বিশ্বাস করে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল তার সঙ্গে প্রথম দিকে আমাদের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল ধীরে ধীরে তা কাটতে শুরু করেছে। তিনি আমাদের উপর আস্থা রাখা শুরু করেছিলেন। আমাদের আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়ন হয় কিংবা বাস্তবায়নের জন্য তিনি কিছুটা ধৈর্য্যও ধারণ করার উদারতা দেখিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লারমার সাক্ষাৎ হওয়া প্রসঙ্গে ড. কামাল বললেন, লারমার উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে উনার বৈঠকের ব্যবস্থা করলাম। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লারমার সে বৈঠক খুবই ফলপ্রসু হয়েছিল। লারমার পরিকল্পনা শুনে বঙ্গবন্ধু বলে উঠলেন এসব খুবই যুক্তিযুক্ত। প্রস্তাব শুনে বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে আমাকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, মানবেন্দ্র বাবুর প্রস্তাবগুলো নিয়ে একটা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করার উদ্যোগ নিতে। বঙ্গবন্ধু আমাকে আবারও আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, দাতাদের সঙ্গে বৈঠকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে। দাতাগোষ্ঠীকে রাজী করাতে হবে তারা যেন পাহাড়ি অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। বঙ্গবন্ধু সেই সময় মানবেন্দ্র বাবুর বিশেষ উন্নয়ন প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপও গ্রহণ করেন। সেই সময়ের সবচেয়ে দক্ষ ও সিনিয়র সিএসপি এ. কে. এম. আসাদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হলো। পাহাড়ি এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এই কমিটি কাজ শুরু করলো। বঙ্গবন্ধু যত দিন বেঁচে ছিলেন ততদিন মানবেন্দ্র লারমার সাথে একটা সুসম্পর্ক ছিলো। আমাদের প্রধান কাজ ছিলো কনফিডেন্স বিল্ডিং করা। সেজন্য আমরা প্রচুর সময় নিতাম। আমার মনে হচ্ছিল আমরা সফল হচ্ছিলাম।
এম এন লারমার নেতৃত্বের গুণাবলী প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, তিনি যুক্তি বিশ্বাস করতেন। অনেক বিষয়ে আমার সাথে দ্বিমত কিংবা ভিন্নমত থাকলেও তিনি আমার কথা মন দিয়ে শুনতেন। যুক্তি-পাল্টা যুক্তির মাধ্যমে তিনি আলাপ চালাতেন। কোন সময় তাঁকে বিরক্তবোধ করতে দেখিনি। তিনি যাদের প্রতিনিধিত্ব করতেন সেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ ছিল অসাধারণ। প্রতিটি আলোচনায় লামরা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বকীয়তা, ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমাদেরকে বার বার স্মরণ করে দিতেন। তিনি শুধু বলেই ক্ষান্ত হতেন না। কাজগুলো, আমাদের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলি কিভাবে আদায় করানো যায় সে নিয়ে লেগে থাকতেন। সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখতেন। লারমার এই একাগ্রতা দেখে বঙ্গবন্ধু তাঁকে প্রস্তাব দিলেন মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করে নিজেই যেন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। কিন্তু মানবেন্দ্র রাজী হলেন না। তিনি বললেন, এতে করে যারা তাঁকে সংসদে পাঠিয়েছে সেসব মানুষরা ভুল বুঝবে। তারা মনে করবে লারমা এখন নিজের জন্য কাজ করা শুরু করেছে। সেই সময় মন্ত্রীত্ব পাওয়াটা ছিল গৌরবের। যারা মন্ত্রী পরিষদে ছিলেন তাঁরা সকলেই স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিভিন্ন সময় কারাবরণকারী। দেশের মানুষদের কাছে তাঁদের ছিল বিশাল মান-মর্যাদা। কিন্তু মানবেন্দ্র এসব মর্যাদাবান ব্যক্তিদের সঙ্গে একই কাতারে বসার প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন- শুধুমাত্র তাঁর জনগণের কথা ভেবে। তাঁর এই মহান হৃদয়ের পরিচয় সেদিন আমি পেয়েছিলাম। জনগণের প্রতি এত ভালোবাসা এত টান খুব কমই দেখা যায়।
এম এন লারমা শুধুমাত্র পার্বত্য জনগণের কথা বলেননি, তিনি গরীব মেহনতী মানুষের কথা জাতীয় সংসদে তুলে ধরতেন। এ প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, লারমা প্রগতিশীল চিন্তা করতেন। তিনি ন্যায়-নীতি ভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখতেন, আইনের শাসনের পক্ষে ছিলেন। শ্রমজীবী মানুষদের পক্ষে জাতীয় সংসদে একাধিকাবার আলোচনা উত্থাপন করেছিলেন। তিনি কৃষকদের কথা ভাবতেন, তাঁতীদের কথা, জেলেদের কথা বলতেন। মানবেন্দ্র বাবু একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য সংসদে আলোচনা করতেন।
লারমা পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রণয়নের দাবি তুলেছিলেন। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে লারমার এই দাবির প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, উপনিবেশিক আমলের সমাজ কাঠামো, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রশ্নে আমাদের ঐক্যমত ছিল। তিনি স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের চেয়েছিলেন। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে আমাদেরও দ্বিমত ছিল না। যার যার এলাকার প্রশাসনিক কর্তৃত্ব সেই এলাকার লোকের হাতে থাকবে সেই ধরনের স্থানীয় সরকারের আমরা বিরোধী ছিলাম না। শুধু পাহাড়িরা কেন, সাতক্ষীরা, খুলনা কিংবা নোয়াখালীর মানুষ কেন ঘন ঘন রাজধানীতে ধরণা দিতে আসবে। তাই আমরা সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু প্রাদেশিক সরকারের বিষয়ে আমাদের আপত্তি ছিল। ফেডারেল পদ্ধতির শাসন কাঠামো দরকার ছিল বলে আমরা মনে করিনি। তখন ১৯টি জেলা ছিল। ১৯টি জেলার জন্য ১৯টি প্রদেশ গঠন, প্রাদেশিক সরকার গঠন, ভিন্ন ভিন্ন আইন পরিষদ এসব প্রশাসনিক জটিলতায় আমরা যেতে চাইনি। প্রাদেশিক সরকারের জন্য একটা বিশাল ব্যয় রাখতে হতো। স্বাধীনতার পর পরই এই ধরনের ব্যয়ভার বহন করা আমাদের সম্ভব ছিল না। তবে কার্যকর স্থানীয় সরকারের পক্ষে আমরা ছিলাম। রাষ্ট্র উপর থেকে তার জনগণকে কিছু চাপিয়ে দেবে না, উন্নয়নসহ সকল ধরনের পরিকল্পনা স্থানীয় জনগণ স্বাধীনভাবে গ্রহণ করবে সে ধরনের স্থানীয় সরকার গঠনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা ছিল।
আপনারা তো সকলকে বাঙালি হতে বলেছিলেন, লারমা তার বিরোধীতা করেছিলেন। এই বিষয়ে ড. কামাল বলেন, এটা দীর্ঘ অনুভূতির ব্যাপার। একটা রাষ্ট্রের জন্য, জাতিগত স্বীকৃতির জন্য আমাদেরকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল। ‘জাগো বাঙালি জাগো’ বলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। বাঙালি জাতির স্বীকৃতির জন্য আমাদেরকে রক্তাক্ত যুদ্ধও করতে হয়েছিল। বাঙালি পরিচয়ে পরিচিত হবার আকাঙ্ক্ষা থেকে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র মুক্ত হতে পারেনি। আমাদের এই বাঙালি হওয়া নিয়ে একটা প্রবল অনুভূতি কাজ করেছিল। হাজার বছরের বাঙালি জাতির স্বীকৃতির যে দাবি, সেটা উপেক্ষা করা সহজ ছিল না। কিন্তু বাঙালি জাতির স্বীকৃতি পাওয়া অর্থ এই নয় যে, আমরা পাহাড়িদের জায়গা জমি দখল করবো, তাদেরকে ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ করবো। অন্যের সম্পদ, সহায় সম্পত্তি দখল করার কথা আমরা কোনভাবেই কল্পনাও করতে পারিনি। তবে একটা আশংকা ছিলো সেটা হচ্ছে পাহাড়িদের পরিচয় সংকট নিয়ে। আমাদের বাঙালি হওয়া অন্য কাউকে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার বিষয় ছিল না। পাহাড়িদের স্বাতন্ত্র্য পরিচয়, তাদের নিজস্ব পরিচিতি বাঙালি জাতির পরিচয়ের সঙ্গে বিরোধজনক হবে সেরকম চিন্তা আমরা করিনি।
সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব স্বীকার করে ড. কামাল বলেন, অনেকেই আমাকে বলেন আপনি তো সংবিধান প্রণয়ন করেছেন; পাহাড়িদের জাতিগত পরিচয় নিয়ে লিখতে তো পারতেন। আমারও মনে হয় লেখা তো যেত। কিন্তু না লেখার পেছনে কোন প্রকার অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না সেটা আমি হলফ করে বলতে পারি। কারোর নিজস্ব জাতিগত পরিচয় নিয়ে বিতর্ক হতে পারে না, দিনকে যেমন দিন বলতে হবে, রাতকে যেমন রাত তেমন প্রত্যেকের জাতিগত পরিচয় বিতর্কহীনভাবে সত্য।
এম এন লারমাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরোধী বলে যে আখ্যায়িত করা হতো এ বিষয়ে ড. কামাল বলেন, লারমা সব সময় আলাপ আলোচনার পথ খোলা রাখতেন। আমরা যখন কথা বলতাম তখন কোন সময় তিনি বলেননি, না এসব অনেক শুনেছি, আর কোন কথা শুনব না। তিনি কোন কিছুই যুক্তি ছাড়া খারিজ করতেন না। যাদের সমাধানের ইচ্ছা ছিল না, মীমাংসা করার ইচ্ছা ছিল না, সব সময় মানি না, মানব না বলতেন তারাই লারমাকে এ ধরনের অভিধায় আখ্যায়িত করেছিল। লারমা সমসময় মীমাংসার পথ খোলা রাখতেন। আলোচনা চালিয়ে যেতেন। মানি না, মানব না ধারণায় লারমার বিশ্বাস ছিল না।
একজন সংসদ সদস্য হিসেবে এম এন লারমার মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদে কোন শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়নি বলে আমরা জানি। এই প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদে লারমার জন্য শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা খুবই যুক্তিযুক্ত। তবে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে কি হয় নাই সে বিষয়ে আমার জানা নাই। এ দেশতো নিয়মহীন একটা দেশ। বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পরেও শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়নি। স্বীকৃতির জন্য কোনরূপ কার্পণ্য করা ঠিক নয়। মানবেন্দ্র লারমা একজন সৎ, আদর্শবান রাজনীতিবিদ। তাঁকে অনুকরণ করা, অনুসরণ করা, স্বীকৃতি দেয়া আমাদের সকলের কর্তব্য ও দায়িত্ব।
ড. কামাল হোসেন; বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ