হিল ভয়েস, ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ঢাকা: দেশের সাধারণ দারিদ্র হার ২১ শতাংশ আর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দারিদ্র হার ৬০ শতাংশ। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দারিদ্র দূরীকরণে বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ। গত ১৪ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের যৌথ উদ্যোগে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অবস্থান : নতুন নীতি কাঠামোর প্রস্তাবনা’ শীর্ষক বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, ‘আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে দারিদ্র বিমোচন ত্বরান্বিত করতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর আরো যুগোপযোগী কর্মসূচি নেওয়া উচিত।’
ড. এম এম আকাশ আরো বলেন, গবেষণাটি নমুনা ভিত্তিক, তাই এটা দিয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির সাধারণীকরণ করা সম্ভব নয়। এনজিওদের কাজের ফলে এ দুটি এলাকায় এসএসএনপিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি ইতিবাচক হলেও সারা দেশের আর যা তথ্য পাওয়া যায় তা সন্তোষজনক নয়। আদিবাসীদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার যেহেতু ৬০%, যা জাতীয় হারের চেয়ে অনেক বেশি, ফলে তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি ও উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এসএসএনপির মোট বাজেটে ০.৫% উপকারভোগীর জন্য যাচ্ছে ২৪% অর্থ, যেটাকে যৌক্তিকভাবে বিন্যস্ত করা জরুরি।
সম্মেলনে ’সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অবস্থান’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ এম শাহান। আদিবাসীদের সামাজিক অবস্থান বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আদিবাসীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে, কিন্তু তা তাদের জীবনযাত্রায় যথেষ্ঠ পরিবর্তন আনতে পারেনি। এটি গোলকধাঁধার মত।
এনজিওগুলোর আরো সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে চাওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন অধ্যাপক শাহান। এর মাধ্যমে আদিবাসীরা তাদের অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে পারছে। তিনি আরো বলেন, সুবিধাভোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী নগদ সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা, আদিবাসী মানুষের জীবিকার কথা বিবেচনা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ)। সভাপতি অধ্যাপক কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। তিনি তাঁর বক্তব্যে দারিদ্র দূরীকরণে বৈষম্য দূর করার ওপর গুরুত্ব দেন।
খলীকুজ্জমান বলেন, “দেশ থেকে কার্যকরভাবে দারিদ্র্য দূর করতে হলে মানুষের বহুমাত্রিক চাহিদার ভিত্তিতে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মাদ নুরুল কবির। এসময় তিনি জানান, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য এ অর্থবছরে বরাদ্দ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিবছরই বাড়ছে। ভাতার পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েশন স্কিম চালু হয়েছে। সকল প্রতিবন্ধী মানুষকেই এর আওতায় আনা হয়েছে। সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ভাতা বৃদ্ধিরও সুপারিশ করা হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক সকালের সময় ও জনজাতির কণ্ঠ