হিল ভয়েস ডেস্ক, ২১ অক্টোবর ২০১৯, রাঙ্গামাটি: ছাত্রাবাসটিতে সব সুবিধা আছে। বাবুর্চিসহ বিভিন্ন পদে লোকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নিয়মিত বেতনও পাচ্ছেন। অথচ এখানে যাদের থাকার কথা, সেই ছাত্ররাই নেই। থাকবে কী করে? জীবনধারণের জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেই খাবারের জন্য বরাদ্দই যে নেই। তাই আট বছর আগে নির্মিত হলেও চালু হয়নি ছাত্রাবাসটি। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চেলাছড়া গ্রামে চেলাছড়া ছাত্রাবাসের ঘটনা এটি। খাবারের বরাদ্দ না দেওয়ায় ছাত্রাবাসটি চালু না হওয়ার বিষয়টি শুধু অনভিপ্রেত নয়, অগ্রহণযোগ্যও বটে।
রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০১১ সালে চেলাছড়া ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করে। উদ্দেশ্য ছিল জেলার দুর্গম এলাকার সরকারি স্কুলের গরিব ছাত্ররা বিনা মূল্যে এই ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করবে। ৮০ শতক জায়গায় তিনতলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এখানে রয়েছে একসঙ্গে ৮০ জন ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা। সৌরবিদ্যুৎ ও জেনারেটরের সংযোগ দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে রান্নাঘর ও খাবারঘর। তবে ছাত্রদের খাবারের জন্য কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে চালু হয়নি ছাত্রাবাসটি। চালু না হওয়ায় চেলাছড়াসহ দুর্গম এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না।
এদিকে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় ছাত্রাবাসটির দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে সৌরবিদ্যুতের সোলার প্যানেল। আঙিনায় গজিয়ে উঠেছে ঘাস। এলাকাবাসী ছাত্রাবাসটি চালুর জন্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে একাধিকবার আবেদন জানিয়েও কোনো ফল পাননি।
সরকার তথা জনগণের অর্থের কী বিপুল অপচয়! এ রকমই যদি হবে, তবে ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করা হলো কেন? গরিব শিক্ষার্থীদের কথা ভেবেই যদি ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করা হয়ে থাকে, তাহলে তাদের খাবারের জন্য বরাদ্দ কেন দেওয়া হচ্ছে না? কেন এই কৃপণতা? খাবারের জন্য বরাদ্দ নেই, অথচ বাবুর্চি পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে কার স্বার্থে এটি নির্মাণ করা হয়েছে?
তবে শুধু চেলাছড়া ছাত্রাবাসই নয়, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত আরও তিনটি ছাত্রাবাস একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। এসব ছাত্রাবাসের বিভিন্ন সরঞ্জামও নষ্ট হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষগুলোর গাফিলতিই এর জন্য দায়ী। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। গাফিলতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
চেলাছড়া ছাত্রাবাসসহ পার্বত্য জেলাগুলোর পড়ে থাকা সব ছাত্রাবাস অবিলম্বে সংস্কার করে চালু করা হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সূত্রঃ প্রথম আলো, সম্পাদকীয়, ২১ অক্টোবর ২০১৯