হিল ভয়েস, ২২ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, চট্টগ্রাম: ভারত প্রত্যাগত শরনার্থীদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ১০ম বৈঠক গত ২২ অক্টোবর ২০১৯ চট্টগ্রাম শহরের সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হয়। টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি চাথোয়াই প্রু মারমা এবং ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের প্রতিনিধি সন্তোষিত চাকমা বকুল।
বৈঠকে সর্ব সম্মতিক্রমে ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরনার্থী ও আভ্যন্তরীন জুম্ম উদ্ভাস্তু পরিবারগুলিকে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৮১,৭৭৭ পরিবার আভ্যন্তরীন উদ্ভাস্তু রয়েছে।
টাস্কফোর্সের সভায় সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় যে, পুনর্বাসনের জন্য আভ্যন্তরীন উদ্ভাস্তু পরিবার সমূহের একটি সঠিক ও পরিশুদ্ধ তালিকা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মৌজা হেডম্যান ও গ্রামের কার্বারীদের আভ্যন্তরীন উদ্ভাস্তুদের এই তালিক প্রণয়নে নিয়োজিত করা হবে। যারা ইতিপূর্বে মারা গেছেন এবং দেশ থেকে দেশান্তরিত হয়েছেন তাদের বাদ দেয়া হবে বলে টাস্কফোর্সের তরফে জানান হয়েছে।
আভ্যন্তরীন উদ্ভাস্তুদের সর্বশেষ সন্নিবেশিত তালিকা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সরকার দ্বারা পুর্ণবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে । এছাড়াও শরণার্থীদের ঋণ মওকুব ও মামলা প্রত্যাহার বিষয়, প্রত্যাগত শরণার্থীদের সিনিয়রিটির ভিত্তিতে চাকরীতে পুর্ণনিয়োগ, রেশন প্রদান ইত্যাদি বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করা হবে।
টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ভারত প্রত্যগাত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট আন্তরিক । টাক্সফোর্সের সদস্য সচিব এবং চট্টগ্রামের কমিশনার মো: আব্দুল মান্না বলেন, প্রত্যাগত শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তুদের পুনর্বাসনে টাস্কফোর্স অধিকতর সক্রিয় হবে। টাস্কফোর্স প্রত্যাগত শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তুদের সঠিক ও চুড়ান্ত তালিকা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
পি সি জে এস এস- এর প্রতিনিধি চাথোয়াই প্রু মারমা এবং ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের প্রতিনিধি সন্তোষিত চাকমা বকুল, রাঙ্গমাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি অংসুই প্রু চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: আব্দুস সাত্তার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো: নুরুল আলম নিজামী, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মো: দাউদুল ইসলাম, রাঙ্গমাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রসিদ, টাস্কফোর্সের নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা এবং সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের প্রতিনিধি মেজর মো: সালাউদ্দিন সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ করা হয়ে থাকে যে, উক্ত কমিটিগুলি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উল্লেখ্য যে, চুক্তি অনুসারে প্রত্যাগত ১২,২২২ পরিবারের ৬৪,৬০৯ জনকে অর্থনৈতিক সুবিধাগুলির বেশীর ভাগই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। তবে ৯৭৮০ জুম্ম পরিবার এখনো তাদের ভুমি ফেরত পাবে, ৮৯০ পরিবার একজোড়া বলদের পরিবর্তে নগদ টাকা পাবে এবং অনেকের ব্যাংক লোন মওকুফ করা হয়নি, প্রত্যাগত শরণার্থীদের গ্রাম থেকে বেআইনীভাবে দখলকৃত ৬ টি প্রাথমিক স্কুল, ৫ টি বাজার এবং ৭ টি বিহারের জমি ফেরত দেওয়া হয়নি। মাইনী ও কাচালং ভ্যালির লংগদু, মাইনী ভ্যালির দিঘীনালা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলা, মানিকছড়ি ও ফেণী ভ্যালির রামগড় উপজেলার মাটিরাঙ্গায় প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের ৪০টি গ্রাম এখনো সম্পূর্ণ বাঙালি সেটেলারদের দখলে রয়েছে।
অপরদিকে, ২০০০ সালের ১৫ই মে টাস্কফোর্সের ১১তম সভায় যেখানে জনসংহতি সমিতি ও জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে ৯০,২০৮ জুম্ম পরিবারকে আভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তু হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে একটি পরিবারকেও পুনর্বাসিত করা হয়নি।