হিল ভয়েস, ৭ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া জুম্ম শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন ”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটি’র” আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে একটি আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মিহির লাল সাহা এবং বিশেষ অথিতি হিসেবে ছিলেন এআইইউবির সহকারী অধ্যাপক বরেন্দ্রলাল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সুলভ চাকমা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র নিবাহী সদস্য চিবল সাংমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটির সভাপতি কিংশুক চাকমার সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারন সম্পাদক নিশৈমং মারমার সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রাতুল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পাহাড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া জুম্ম শিক্ষাথীরা নিজেদের স্বকীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ঢাবি’র এই ক্যাম্পাসে অপরাপর বাঙালি বন্ধুদের কাছে তুলে ধরতে চাই। যার জন্যই আমরা এধরণের প্রয়াসগুলো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের গর্বিত অংশীদার হিসাবে আমরাও এ দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে জাতীয় অঙ্গনে তুলে ধরে তার প্রচার এবং প্রসারের জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশেষ অথিতির বক্তব্যে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সুলভ চাকমা বলেন, ঐতিহাসিক কাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে যার যার নিজস্ব ভাষা,শিল্প, সংস্কৃতি এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৌন্দর্য এই বৈচিত্র্যময় আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং তাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। এ সমৃদ্ধ সংস্কৃতিই বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভিতকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। এ সংস্কৃতি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাকসুতে একমাত্র নির্বাচিত আদিবাসী সদস্য চিবল সাংমা বলেন, আমরা বাঙালি ভিন্ন অপরাপর আদিবাসী জাতির ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনা করছি তাদের অবশ্যই এই ধরণের উদ্যোগগুলো চালিয়ে নেওয়া উচিত। ডাকসুর প্রতিনিধি হিসেবে, আমিও সর্বদা আদিবাসী ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের সুখ-দুঃখের কথাগুলো তুলে ধরতে চাই। ডাকসুতে আদিবাসী ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বকারী এই ছাত্রনেতা সবসময় এই ধরনের উদ্যোগুলোতে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অথিতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটির সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে যে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে তার প্রশংসা করে এআইইউবির সহকারী অধ্যাপক বরেন্দ্রলাল ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ের সেই প্রত্যন্ত প্রান্তিক অঞ্চল থেকে উঠে এসে তোমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পদচারণা করছ, তোমাদের শেকড়ের প্রতি কিছু দায়বোধ অবশ্যই রয়েছে। আমি জানি এধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে সে দায়বোধকে সম্মান জানানো অবশ্যই তোমাদের কাজ। এই কাজের মধ্য দিয়ে অবশ্যই আমাদের সমাজ আলোর মুখ দেখবে।
প্রধান অথিতির বক্তব্যে ঢা.বি.-র জগন্নাথ হলের সম্মানিত প্রাধ্যক্ষ ড. মিহির লাল সাহা জুম্ম শিক্ষার্থীদের এই ধরনের আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্ন্থ হল যেমন বায়োডাইভারসিটির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ তেমনি এই আদিবাসী শিক্ষার্থীরাও এই রাষ্ট্র তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইভারসিটির সৌন্দর্য্য। পাহাড়ের জুম চাষের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, ’জুম’ পদটির সাথে যে সাংস্কৃতিক শব্দটি যুক্ত করে তোমরা তোমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াস চালাচ্ছ তা অত্যন্ত প্রসংশার দাবীদার। জুম্ম শিক্ষার্থী তথা এই সংগঠনের সকল প্রকার সাংস্কৃতিক উদ্যোগের সাথে তিনি সর্বদা পাশে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভার সভাপতি এবং সংগঠনটির বিদায়ী সভাপতি কিংশুক চাকমা সমাপনী বক্তব্যে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে স্বাগত জানান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত উর্বর জায়গায় নিজের স্বকীয় শিল্প ও সাহিত্যকে অপরাপরর সংস্কৃতির সাথে মেলে ধরার জন্য এই ধরণের উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে দাবী করেন তিনি। পরে এই সংগঠনের শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। পাহাড়ের তের ভাষা-ভাষী চৌদ্দটি আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠীর গান,নাচ,কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে জমে ওঠে এই আয়োজন। ”প্রজন্মের ডাক: জুম্ম সংস্কৃতি মুক্তি পাক”-এই ¯স্লোগানকে ধারণ করে অনুষ্ঠিত হওয়া এই আয়োজন সম্পন্ন হয় নতুন কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে। পরেশ চাকমাকে সভাপতি, জশোয়া দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক এবং রাতুল তঞ্চঙ্গ্যাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি কিংশুক চাকমা।