হিল ভয়েস, ১৬ জুন ২০১৯, ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির তৃতীয় সভা গত ১৬ জুন ২০১৯ ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রারম্ভে গত ১৯/২/২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সভার কার্যবিবরণী অনুমোদনের সময় কমিটির সদস্য জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা নিম্নোক্ত সংশোধনী উপস্থাপন করেন।
১. ক্রমিক নং ৮(খ)-তে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ কলামে “পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ” শব্দসমূহের স্থলে “পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি” শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত করা।
২. ক্রমিক নং ৮(চ)-তে সিদ্ধান্ত কলামে “জেলা পরিষদের নিকট” শব্দগুলির পরিবর্তে “পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে” শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত করা।
৩. ক্রমিক নং ৮(ছ)-তে সিদ্ধান্ত কলামের প্রারম্ভে “অনতিবিলম্বে পর্যায়ক্রমে সকল অস্থায়ী ক্যাম্প তুলে নেওয়া হবে এবং” শব্দসমূহ সংযোজন করা।
৪. “পুলিশ (স্থানীয়) বিষয়টি পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের নিকট নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে এবং আইন মোতাবেক পার্বত্য জেলা পুলিশ বাহিনী গঠন করা হবে” মর্মে নতুন ক্রমিক ৮(ঠ)-এ সংযোজন করা।
উক্ত উত্থাপিত সংশোধনীসমূহের মধ্যে কার্যবিবরণীর ৪নং সুপারিশ ব্যতীত অন্যান্য সংশোধনী সুপারিশ বৈঠকে গৃহীত হয়। এরপর তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সংক্রান্ত ক্রমিক নং ৮(ক) এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ চলমান রয়েছে এবং তারই অংশ হিসেবে ১৫/০৫/২০১৯ খ্রিস্টাব্দ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ প্রতিনিধিদলের সাথে সভা হয়েছে বলে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জানান যে, তত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন করার জন্য দায়িত্ব থাকলেও কার্যত আঞ্চলিক পরিষদের অগোচরে অনেক বিষয় সম্পাদিত হয়ে থাকে। এ সময় চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আঞ্চলিক পরিষদের সাথে তিন পার্বত্য পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে বলে নির্দেশ প্রদান করেন।
এরপর পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন সংক্রান্ত ক্রমিক নং ৮(খ) এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি জানান যে, ১৫/৬/২০১৯ তারিখে অগ্রগতি প্রতিবেদন কমিটির আহ্বায়কের নিকট পেশ করা হয়েছে।
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও আঞ্চলিক পরিষদ আইনের সাথে The Chittgong Hill Tracts Regulation ১৯০০-এর অসামঞ্জস্যসমূহ দূরীকরণ সংক্রান্ত ক্রমিক নং ৮(গ) এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান যে, The Chittgong Hill Tracts Regulation ১৯০০ সম্পর্কে আঞ্চলিক পরিষদ ২টি সুপারিশ পেশ করে- (ক) ১৯০০ সনে বিশেষ কার্যাদি কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত স্মারক বাতিল করা এবং (খ) উক্ত রেগুলেশন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও আঞ্চলিক পরিষদ আইনের বিধানাবলীর সাথে যতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ ততটুকু কার্যকর থাকবে মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করা। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ উক্ত রেগুলেশন সম্পর্কিত ২টি মামলার সার্টিফায়েড কপি চাইলে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে তা প্রেরণ করা হবে বলে জানানো হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালা ২০১৯ চূড়ান্তকরণ সংক্রান্ত ক্রমিক নং ৮(ঘ) এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্পর্কে গৌতম কুমার চাকমা জানান যে, ১/১/২০১৭ আঞ্চলিক পরিষদ ভূমি কমিশনের বিধিমালার খসড়া পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। ৬/২/২০১৭ তারিখে পার্বত্য মন্ত্রণালয় তা ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। দীর্ঘ সময় পরে ২৮/৩/২০১৯ ও ১০/৪/২০১৯ তারিখে ভূমি কমিশনের খসড়া বিধিমালার উপর দু’টি সভা হয়েছে। ভূমি কমিশন আইনে বলা হয়েছে, প্রচলিত আইন, প্রচলিত রীতি ও প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করবে কমিশন। আইনে কেবল প্রচলিত আইন সম্পর্কিত সংজ্ঞা রয়েছে। বিধিতে প্রচলিত রীতি, প্রচলিত পদ্ধতি ও বেদখল সম্পর্কিত সংজ্ঞা ও অন্যান্য কতিপয় বিষয় সন্নিবেশিত হয়নি। তাই বিধি ১ হতে বিধি ৬ পর্যন্ত সম্পর্কিত আঞ্চলিক পরিষদের সুপারিশ পুনরায় বিবেচনার্থে পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরবর্তী সভা আহ্বান করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বৈঠকের সভাপতি পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার সংক্রান্ত ক্রমিক নং ৮(ছ) এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান যে, সশস্ত্র বিভাগের ০১/১০/২০০৯ তারিখের পত্রে উল্লেখ করা হয় যে, চুক্তি স্বাক্ষরের পর ৫৫২টি অস্থায়ী ক্যাম্প হতে ২০০টি ক্যাম্প সরে নেওয়া হয়েছে। এ সময় জনসংহতি সমিতির সভাপতি জানান যে, চুক্তির স্বাক্ষরের পর কিছু নতুন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে বাঘাইছড়ি উপজেলার সিজক বুদ্ধ মন্দিরের জায়গায় সেনা ক্যাম্প দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয় হতে সেনা সদরে পত্র প্রেরণের জন্য পার্বত্য মন্ত্রণালয়কে বৈঠকের সভাপতি নির্দেশনা দেন।
লীজ বাতিলকরণ সংক্রান্ত ক্রমিক নং ৮(জ) এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্পর্কে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান যে, রাংগামাটি পার্বত্য জেলার ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন ১৩টি লীজ দেওয়া হয়েছিল। শর্ত ভংগ করায় ৮টি বাতিল করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ৩১টি লীজ দেওয়া হয়। শর্ত পালন না করায় সব বাতিল করা হয়। ৬টি বিষয়ে আপীল মামলা চলছে উচ্চ আদালতে। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ১৮৭১টি লীজ দেওয়া হয়। শর্ত ভংগ করায় ৪১৬টি বাতিল করা হয়। এ সময় জনসংহতি সমিতির সভাপতি অভিযোগ করেন যে, বান্দরবান জেলায় বাতিলকৃত অধিকাংশ লীজ দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে পুনরায় বহাল করা হয়েছে।
ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও উপজাতীয় উদ্বাস্তু বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের সভা নিয়মিত অনুষ্ঠিতকরণ সংকান্ত ক্রমিক নং ৮(ঝ) এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্পর্কে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব টাস্ক ফোর্সের সভা অনুষ্ঠানের জন্য বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করা হলে সভা আহ্বানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ সময় টাস্ক ফোর্সের সাচিবিক সহায়তার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের পরিবর্তে উক্ত টাস্ক ফোর্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বিষয়টি সম্পর্কে যথাশীঘ্র কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পার্বত্য মন্ত্রণালয়কে বৈঠকের সভাপতি নির্দেশনা দেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং টাস্ক ফোর্সে পদ সৃজন ও শুন্যপদ পূরণ সংক্রান্ত ক্রমিক নং ৮(ঞ) এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্পর্কে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব অগ্রগতি বিবরণ তুলে ধরেন। এ বিষয়ে যথাশীঘ্র বাস্তবায়ন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণার্থে বৈঠকের সভাপতি পার্বত্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটিকে সাচিবিক সহায়তার জন্য আলাদা অফিস, জনবল ও অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত ক্রমিক নং ৮(ট) এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্পর্কে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।