হিল ভয়েস, ৩ ডিসেম্বর ২০২১, চট্টগ্রাম: “সংস্কৃতিই হোক আত্ম-পরিচয়ের হাতিয়ার” এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ (৩ ডিসেম্বর)চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বার্ষিক পিকনিক ও মিলনমেলা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর ২০২১-২২ মেয়াদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। নবগঠিত কমিটিতে প্রান্তিকা চাকমাকে সভাপতি, মুন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং সজীব তালুকদারকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করা হয়।
রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমার সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্য ভূবন চাকমা ও পহেলা চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-রাসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক ও সংগঠনের উপদেষ্টা ড. কাঞ্চন চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য পিসিপি’র চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণ চাকমা, রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রান্তিকা চাকমা, বিএমএসসি’র চবি শাখার সাংস্কৃতিক কমিটির সভাপতি চিংমং মারমা, টিএসএফের সিএমবির সাধারণ সম্পাদক গুণেন ত্রিপুরা, বিআরএসএ-এর কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক হ্লামিউ, বিটিএসডব্লিউএ-এর প্রতিনিধি প্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
আলোচনার শুরুতে ড. কাঞ্চন চাকমার অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. কাঞ্চন চাকমা বলেন, “আমাদের সময় চবিতে আদিবাসী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকায় আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার তেমন একটা সুযোগ পায়নি। তবে আমরা রঁদেভূ প্রকাশনা নামে একটি আদিবাসী সাহিত্য ম্যাগাজিন প্রকাশ করতাম। আপনারাও রঁদেভূ প্রকাশনাকে নিয়মিত প্রকাশের মাধ্যমে নিজেদের সৃজনশীল লেখনী চর্চা করবেন। আর আজ আপনারা যারা রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে স্ব স্ব জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে একত্রে চর্চা করা ও তুলে ধরার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের কার্যক্রম শুধুমাত্র চবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, ক্যাম্পাসের বাইরেও আদিবাসী সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে হবে। আপনাদের এই সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে আদিবাসীদের জাতিগত সহাবস্থান ও ভ্রাতৃত্ববোধ শ্রীবৃদ্ধি ও সুদৃঢ় হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি এবং আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো যায় তার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিসিপি’র চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণ চাকমা বলেন, “রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী গঠনের সাথে পিসিপি ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত রয়েছে। তাই পিসিপি সবসময় চেষ্টা করে রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীকে সার্বিক সহযোগিতা করতে। আজকে আপনারা যে স্লোগানটি দিয়েছেন তার প্রতিফলন আপনাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে হবে। সংস্কৃতির সাথে রাজনীতি ও আত্মপরিচয় অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। যে সংস্কৃতি চর্চায় রাজনীতি তথা আত্মপরিচয়ের বিষয়বস্তু ফুটে উঠবে, নিজেদের অধিকার-বঞ্চনা কথা ফুটে উঠবে, নিজেদের জাতিগত বৈচিত্র্যতার কথা ফুটে উঠবে সেটিই হলো প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনের মূল বৈশিষ্ট্য। আমি আশা করবো রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী তার কার্যক্রমের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো ফুটিয়ে তুলবে এবং শিল্পীরা প্রগতিশীল আদর্শ ও চিন্তাভাবনা ধারণ করবে।”
বিভিন্ন খেলাধুলা, লটারি ড্র ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।