পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী কৃতি সন্তান ড. মানিক লাল দেওয়ান আর নেই

হিল ভয়েস, ২৯ জুলাই ২০২১, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলায় জন্মগ্রহণকারী আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠীর অন্যতম কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কৃষিবিদ ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মানিক লাল দেওয়ান আর বেঁচে নেই।

আজ ২৯ জুলাই ২০২১, বাংলাদেশ সময় সকাল আনুমানিক ১০:২৫ টায় তিনি চট্টগ্রামের সার্জিওস্কোপ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসারত অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস করেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। ইতোপূর্বে বার্ধক্যজনিত জটিলতার কারণে অসুস্থ হলে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে ঐ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বলে জানা গেছে। মৃত্যুকালে ড. দেওয়ানের বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর ৬ মাস ১৮ দিন।

তিনি শুধু আদিবাসী জুম্ম সমাজে নয়, দেশে কৃষিশিক্ষা জগতেও অত্যন্ত স্মরণীয় এক ব্যক্তিত্ব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকলের কাছে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। পেশাগত জীবনে সফল মানুষ। ছাত্রজীবন থেকে মেধাবী এই মানুষটি জুম্মদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রীধারী। তাঁর পেশাগত জীবন শেষে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নসহ আদিবাসী জুম্মদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন। তিনি জুম্মদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং সর্বদা জুম্মদের জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিতেন।

ড. দেওয়ানের জন্ম রাঙ্গামাটিতে ১লা জানুয়ারি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পিতার নাম প্রিয় মোহন দেওয়ান এবং মাতার নাম করুণা দেওয়ান। তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান কলেজ অব ভেটেরিনারি সাইন্স থেকে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বিএসসি (এএইচ) ডিগ্রী লাভ করেন। ঐ বছরই তিনি এনিম্যাল হাজভেন্ড্রী অফিসার, কুমিল্লা ও ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান ভেটেরিনারি কলেজে সহকারী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি USAID বৃত্তি লাভ করে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে Texas A&M University থেকে প্যাথোলজিতে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। একই বছর এরপর আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি’র Armed Forces Institute of Pathology থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষ করে পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি সোভিয়েট ইউনিয়ন বৃত্তি লাভ করে মস্কো ভেটেরিনারি একাডেমিতে পড়তে যান এবং সেখান থেকে ১৯৭১ সালে ভেটেরিনারি প্যাথোলজিতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৭৩ সালে ঐ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হয়ে ১৯৮২-৮৪ সালে ভেটেরিনারি ফ্যাকাল্টির ডীন নিযুক্ত হন। এছাড়া ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের এডিনবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চ সম্পন্ন করেন।১৯৮০-৮১ সালে তিনি ইরাকের মসুল বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন।

বাংলাদেশে পশুসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাঁকে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচার কর্তৃক ড. এস ডি চৌধুরী গোল্ড মেডাল প্রদান করা হয়। ড. দেওয়ানের স্মৃতি রক্ষার্থে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ড. দেওয়ানের অফিস কক্ষটিকে ‘প্রফেসর এম এল দেওয়ান কনফারেন্স রুম’ নামকরণ করে।

২০০০ সালে তাঁর অধ্যাপনা জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর ২০০২-২০০৭ সালে তিনি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

অবসর জীবনে তিনি ‘আমি ও আমার পৃথিবী’ নামে একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থও রচনা করেন।

More From Author