পূর্ণ লাল চাকমা, টোকিয়ো থেকে
করোনাভাইরাস টোকিয়ো অলিম্পিক গেম-এ প্রচণ্ড বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। জাপান সরকার এই অলিম্পিক গেম নিয়ে অনেক কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
তবে সব বাধা পেরিয়ে শেষমেশ অলিম্পিক গেমের সময়সূচি অনুসারে আগামীকাল ২৩ জুলাই এই গেম আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা ও তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি অলিম্পিক গেম দ্বিতীয়বার স্থগিত রাখতে রাজি নন। যে কোনোভাবে হোক এই গেম তারা বিশ্ববাসিকে উপহার দিতে বদ্ধপরিকর।
উল্লেখ্য যে, টোকিয়ো ২০২০ অলিম্পিক গেম গত বছর জুলাই মাসের ২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি একমত হয়ে একবছরের জন্য স্থগিত করেন। তবে নামটি অপরিবর্তিত রয়ে যায়। সেজন্য গেম একবছর পর অনুষ্ঠিত হলেও এটিকে ‘টোকিয়ো ২০২০ অলিম্পিক’ বলা হয়ে থাকে।
গত বছরের তুলনায় এবছর করোনাভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণ হার বেশি হওয়ায় অনেকে অলিম্পিক গেম আয়োজন না করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তায় এবং মূল অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সামনে প্রায়ই পোস্টার হাতে অলিম্পিক বাতিল করার দাবি নিয়ে লোক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
গত ২৩ জুন টোকিয়ো অলিম্পিক আয়োজন না করার জন্য মেট্রোপলিটন অফিসের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলে অংশকারীরা এ গেম বাতিল করার বিভিন্ন প্লেকার্ড প্রদর্শন করেন। মিছিলে অংশকারীরা ‘End the Olympic Games that destroy people’s lives’ স্লোগান দেন। যারা টোকিয়ো অলিম্পিক গেম-এর বিরোধিতা করছেন তাদের যুক্তি হচ্ছে বিনোদনের চেয়ে জীবন বড়। তাদের যুক্তিকে সরকার উড়িয়ে দিতে পারে না। আজ পর্যন্ত জাপানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষ আর মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজারের অধিক। তবে বাকিরা সুস্থ হয়েছে।
জাপান একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এদেশে Lockdown দেওয়া সংবিধান পরিপন্থী। সরকার শুধু জনগণকে সচেতন করার জন্য ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা দিতে পারে। টোকিয়োতে অনেক দিন পর ‘জরুরি অবস্থা’ তুলে দিয়ে ‘করোনভাইরাস প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা’ চলছে।
তাই টোকিয়ো অলিম্পিক গেম-এর পর করোনভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে রোধ করা মুস্কিল হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে সরকার অসহায়। অলিম্পিক বানচাল করতে পারছে না। গেম অনুষ্ঠিত করার কাজ প্রায় সম্পন্ন। বানচাল করলে গুনতে হবে বিশাল লোকসান। এক কিংবা দুই বিলিয়ন নয়। প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক দেশ জাপান করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ লোক চাকরি হারিয়েছে। শত শত হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ট্যুরিজম-সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তাই অলিম্পিক আয়োজন বাতিল করে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি দেওয়া দেশটির পক্ষে এত সহজ কথা নয়।
তবে ইচ্ছে করলে ‘ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি’(IOC) অলিম্পিক বাতিল করতে পারে। চুক্তির ৭২ পৃষ্ঠা অনুসারে শুধু ‘ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি’ অলিম্পিক বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
সম্প্রতি জাপানের সম্রাট নারুহিতো অলিম্পিক বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন যে, তিনি করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
জাপানের সম্রাট হলেন জাপানের রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি রাজ্য এবং দেশের জনগণের ঐক্যের প্রতীক। তার সাংবিধানিকভাবে কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। তবে জনগণের কাছে তার সম্মান শীর্ষে।
সম্রাটের এই মন্তব্যকে টোকিয়ো অলিম্পিক বিরোধী লোকেরা প্লাস পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন।
জাপান সরকার যতটুকু সম্ভব করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করে যাচ্ছে। টোকিয়ো অলিম্পিক স্টেডিয়াম যেখানে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে সেই স্টেডিয়ামে ৮০ হাজার লোক উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাপক সংক্রমণ রোধ করার জন্য মাত্র ১০ হাজার লোক উপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, অন্যসব স্টেডিয়ামগুলিতে দর্শকের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাপানে বসবাসরত চাকমা ও অন্য জুম্মদের মাঝে অনেকে টোকিয়ো অলিম্পিক টিকেট পেয়েছেন। কিন্তু দর্শকের সংখ্যা অর্ধেক হলে তাদের অনেকের টিকেটও বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
টোকিয়ো অলিম্পিক আর মাত্র বার/তের ঘন্টা বাকি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কালই জাপান সময় অনুযায়ী রাত ৮:০০ টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে।
*পূর্ণ লাল চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও টোকিয়ো বিষয়ে লিখতে ভালবাসেন।