হিল ভয়েস, ১৭ জুন ২০২১, রাঙ্গামাটি: সম্প্রতি সেনাসমর্থিত সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের কর্তৃক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলা ও কাপ্তাই উপজেলায় জোরপূর্বক জুম্মদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংস্কারপন্থীদের চাঁদাবাজির মুখে এলাকার জনগণ চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছে।
চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে এবং এই চাঁদাবাজির খবর বাইরে প্রচার হলে মানুষ হারিয়ে যাবে বলেও হুমকি দিচ্ছে সংস্কারপন্থীরা। সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকেই সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা এসব কাজ করে চলেছে বলে এলাকবাসীর সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন জীবতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ায় অবস্থানকারী সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকেই জীবতলী ও আশেপাশের এলাকায়, এমনকি পার্শ্ববর্তী বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলায়ও চাঁদাবাজি করে চলেছে। সম্প্রতি সংস্কারপন্থীরা রাঙ্গামাটির সদর উপজেলার জীবতলী ও মগবান ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম এবং বিলাইছড়ি উপজেলার ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়ন ও ২নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে পরিবার পিছু ২০০ টাকা হারে গণচাঁদা ধার্য করে। বিভিন্ন গ্রামে ধার্যকৃত এসব চাঁদা তুলে ১৫ দিনের মধ্যে মুরুব্বিদের মাধ্যমে তাদের কাছে জমা দিতে হবে বলে তারা জানিয়ে দিয়েছে। আবার ধার্যকৃত চাঁদা ১৫ দিনের মধ্যে দিতে ব্যর্থ হলে এবং এ সংক্রান্ত খবর বাইরে প্রচার করা হলে মানুষ হারিয়ে যাবে বলেও হুমকি দিয়েছে তারা।
তবে এইসব চাঁদা প্রদান কোনো বাঙালি পরিবার ও বিধবা মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে জানায় সংস্কারপন্থীরা।
এদিকে সংস্কারপন্থীদের চাঁদার কারণে অনেক দরিদ্র জুম্ম পরিবার ভোগান্তিতে পড়লেও এবং ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বিষয়টি কাউকে জানাতে তারা ভয় পাচ্ছেন। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, একদিকে বিলাইছড়ি উপজেলায় এখন নদী ও হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষিপণ্য বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে, অপরদিকে বর্তমানে নদীতে মাছধরা বন্ধ থাকায় বহু সংখ্যক গ্রামবাসীর আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় এসব এলাকায় নীরব দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে।
অপরদিকে, প্রতি শনিবার কাপ্তাই জেটিঘাটে হাটের দিন যারা যাত্রী ও মালামাল নিয়ে ট্রলার বোট নিয়ে যাচ্ছে সেসব বোটের চালক বা মালিককে দিতে হচ্ছে বোট প্রতি ২০০০ টাকা চাঁদা। নদীপথেই একটা নির্দিষ্ট স্থানে সংস্কারপন্থীদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বোটের অপেক্ষায় থাকে। এমনকি কোনো বোট স্বইচ্ছায় না ভিড়িয়ে যদি যাওয়ার চেষ্টা করে এবং ঘাটে ভিড়ানোর জন্য সেই বোটকে যদি ডাকতে হয়, তাহলে সেই বোটের চালককে আরও বাড়তি ৫০০ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। জানা গেছে, বোট ছাড়াও বোটের ইঞ্জিনের প্রতি ১ হোর্স পাওয়ারে ২০০ টাকা হারেও চাঁদা দিতে হচ্ছে।