হিল ভয়েস, ১৩ জুন ২০২১, খাগড়াছড়ি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন মহালছড়ি উপজেলার মহালছড়ি-সিন্ধুকছড়ি সড়কের পাশে এক জুম্মর বাড়ি ভেঙে দিয়ে তিন জুম্মর ভূমি বেদখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পরপরই সেনাবাহিনী সেখানে রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সেনাবাহিনী বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকে ওই জুম্মদের ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা ও ষড়যন্ত্র শুরু করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ১২ জুন ২০২১ রাত আনুমানিক ১০:৩০ টার দিকে সেনাবাহিনীর মহালছড়ি সেনা জোনের মৃত্যুঞ্জয়ী ২৫ বেঙ্গলের অধীন দুমনিঘাট সেনা ক্যাম্পের একদল সেনা সদস্য মহালছড়ি উপজেলার সিন্ধুকছড়ি মৌজাধীন মহালছড়ি-সিন্ধুকছড়ি সড়কের পাশে পুংখি মোড়া নামক এলাকায় সনেরঞ্জন ত্রিপুরা নামে এক জুম্মর সদ্য নির্মিত বাড়ি ভেঙে দেয়। এমনকি সেনা সদস্যরা বাড়িটির টিনের চাল ও বাঁশের তৈরি বেড়াসহ বাড়ির অন্যান্য জিনিসপত্রও গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, সেনাবাহিনী কেবল সনেরঞ্জন ত্রিপুরার বাড়ি ভেঙে দিয়ে থেমে থাকেনি। তারা সনেরঞ্জন ত্রিপুরার ভোগদখলীয় ঐ জায়গাটিও নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এছাড়া সনেরঞ্জন ত্রিপুরার ঐ জায়গার পার্শ্ববর্তী আরও দুই জুম্ম গ্রামবাসীর জায়গা বেদখল করে নেয়।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর তথ্য মোতাবেক, গত বছর মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি রাস্তা সংস্কার শুরু হলে ভুক্তভোগী সনেরঞ্জন ত্রিপুরার (৪০) জায়গাটিও সেনাবাহিনী বেদখলে নিয়ে নেয়। পরে সনেরঞ্জন ত্রিপুরা প্রতিবাদ জানিয়ে সেনাবাহিনী জায়গার নিজস্ব মালিকানা আছে এবং তিনি সেখানে বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরেন। বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যে সমাধান চেয়ে তিনি গত ২৫ মে ২০২১ খাগড়াছড়ি জেলার এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে জায়গার দলিল দস্তাবেজ দেখালে এমপি তাকে নিজের জায়গায় বাড়ি নির্মাণের অনুমতি প্রদান করেন।
এরপর সনেরঞ্জন ত্রিপুরা বাড়ি ফিরে এসে পাড়া প্রতিবেশিদের সহায়তায় বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়িটি নির্মাণের পরের দিন ২৬ মে ২০২১ দুমনিঘাট ক্যাম্প থেকে একদল সেনাসদস্য গিয়ে বাড়ি নির্মাণের বাধা প্রদান করে এবং সনেরঞ্জন ত্রিপরার থেকে জায়গার দলিল নিয়ে যান।
তার দুইদিন পর ২৮ মে ২০২১ সনেরঞ্জন ত্রিপুরাসহ চারজনের একদল প্রতিনিধি দুমনিঘাট সেনা ক্যাম্পে যান। এসময় দুমনিঘাট ক্যাম্প কমান্ডার মেজর আনিস সনেরঞ্জন ত্রিপুরাসহ চার প্রতিনিধি দলকে বলেন, ‘সনেরঞ্জনের কাগজপত্র দেখলাম, কিন্তু জায়গাটি তার নামে রেজিষ্ট্রি নাই। তাই জায়গার মালিক সনেরঞ্জন হতে পারে না। তোমরা মেনে নাও, এখানে পর্যটন হলে তোমাদের লাভ হবে। তোমরা যদি এ জায়গা ছেড়ে না দাও তাহলে তোমাদের নামে ভূমি বেদখলকারী হিসেবে থানায় মামলা দেয়া হবে।’ এ কথা বলে তিনি গুইমারা থানায় কল দিয়ে সেখান থেকে ৩ সিএনজি পুলিশ সেনা ক্যাম্পে নিয়ে আসেন।
তখন উপস্থিত প্রতিনিধিরা বলেন, জায়গাটি আমাদের নামে রেজিষ্ট্রিকৃত তাই আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। আপনারা মামলা আর যাই করুন বলে ক্যাম্প থেকে গ্রামে ফিরে আসেন।
তারপর বিষয়টি গত ৫ জুন ২০২১ স্থানীয় এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে জানালে তিনি বলেন, বাড়ি যেহেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে। তোমরা অব্যাহত রাখ, আমি ফিরে এসেই ব্রিগেডিয়ারের সাথে কথা বলে সমাধান করে দিব।
তারপর, সেনাবাহিনী তাদের সিদ্ধান্তে অটুট থেকে মোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ করার লক্ষ্যে গতকাল ১২ জুন ২০২১ রাত ১০:৩০ টায় দুমনিঘাট সেনা ক্যাম্প থেকে ২০-২৫ টি গাড়িতে করে একদল সেনাসদস্য এসে সনেরঞ্জন ত্রিপুরার নির্মাণ করা বাড়ি ভেঙ্গে দেয় এবং বাড়ির খুঁটি, আসবাবপত্র, অন্যান্য সামগ্রী দুমনিঘাট ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরে সনেরঞ্জন ত্রিপুরার জায়গার পাশে পনেন্দ্র ত্রিপুরা (৩৫) ও তারামুনি চাকমা নামে আরো দুই জুম্মর জায়গা বেদখলে নেয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সনেরঞ্জন ত্রিপুরা বলেন, ‘আমি আমার নামে রেজিষ্ট্রিকৃত জায়গা ফেরত চাই।’ জায়গা ফেরত পেতে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চান। তিনি আইনের মাধ্যমে সঠিক সমাধান চান।