হিল ভয়েস, ২২ এপ্রিল ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজসমূহে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আদিবাসী কোটায় ভর্তি হওয়া অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের তালিকা থেকে বাতিলের দাবিতে ২২ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা মেডিকেল কলেজে আদিবাসী (উপজাতি) কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল ২১ এপ্রিল ২০২১ বুধবার বিকালে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে নাগরিকদের এই দাবির কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত স্বাস্থ্য শিক্ষার জন্য দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি শিক্ষাবর্ষেই আদিবাসী (ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত উপজাতীয়) কোটায় নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকেই আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলোতে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করায় প্রতিবছর অনেক আদিবাসী শিক্ষার্থীই মেডিকেল কলেজে ভর্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের বিজ্ঞপ্তিতে এবছর আদিবাসী (উপজাতীয়) কোটায় মোট ৩৩ জন শিক্ষার্থীর আসন বরাদ্দ করা হয়েছে যার মধ্যে পার্বত্য তিন জেলার আদিবাসীদের (কোড-৭১, ৭৩, ৭৫) জন্য ৯টি, পার্বত্য তিন জেলার অ-আদিবাসীদের (কোড- ৭২, ৭৪, ৭৬) জন্য ৩টি, অন্যান্য জেলার আদিবাসীদের (কোড-৭৭) জন্য ৮টি এবং রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে ১৩টি আদিবাসী সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
গত ৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে অন্যান্য জেলার আদিবাসীদের জন্য ৭৭ কোড-এ ৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জনই অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এছাড়াও ৭১ কোড-এ ১ জন এবং ৭২, ৭৪, ৭৬ কোড-এ অতিরিক্ত ৩ জন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এছাড়াও ৭৭ কোড এর অপেক্ষমান তালিকায় ৫ জনের মধ্যে ২ জন অ-আদিবাসী (সিরিয়াল নং ২ ও ৫) শিক্ষার্থীও রয়েছে। এসকল শিক্ষার্থীর কেউই বাংলাদেশ সরকারের গেজেটভুক্ত ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (আদিবাসী জাতিসত্তার) সদস্য নয়।
তাই নাগরিক সমাজ অবিলম্বে এসকল রোল নম্বরধারী অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য পুনরায় তালিকা প্রকাশ, অনিয়ম বন্ধ, আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসীরা কিভাবে স্থান পায় তার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর দাতারা হলেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ, এডভোকেট সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী, রামেন্দু মজুমদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, মহিলা পরিষদ, ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সভাপতি, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, খুশী কবির, উন্নয়ন কর্মী, রোকেয়া কবির, নারী নেত্রী, এস.এম.এ সবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, এ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, রবীন্দ্রনাথ সরেন, সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি, এ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ, এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মী, অলক দাস গুপ্ত, সংস্কৃতি কর্মী, দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বিভূতি ভূষণ মাহাতো, সদস্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং গৌতম শীল, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) প্রমুখ।