তরু চাকমা
যুগে যুগে পৃথিবীতে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সভ্যতার পরতে পরতে নারী জাতির অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল। তারা তাদের সেই ভূমিকা এখনো অব্যাহত রেখে চলেছে। সমাজ ক্রমবিকাশে তাদের এক একটি আবিষ্কার ও সৃজনশীলতা মানব সভ্যতাকে বিকশিত করেছিল। বর্তমান সময়ে মহাশূণ্য ও ভিন্ন গ্রহে তাদের অভিযান লক্ষণীয়।
প্রাসঙ্গিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে যে, নারীরা তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা পাচ্ছে কিনা? যতটুকু মনে পড়ে সমাজ বিকাশে যখন সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা ও শ্রেণির উদ্ভব ঘটে ও শোষণের দ্বার উন্মুক্ত হয় তখন থেকে নারীর মর্যাদা লোপ পেতে শুরু করে। আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তথা পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তাদেরকে নানা কায়দায় নিম্ন-বর্গীয় শ্রেণিতে রূপান্তরিত করে রাখা হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এমন যে, সেখানে তারা পুরো মাত্রায় জিম্মি।
তবে এটাও সত্য যে, নারী সমাজ এসব জিম্মি দশা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে, নানা যৌক্তিক পথ খুঁজেছে। সমাজে নারীর সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক সকল ক্ষেত্রে নারীর উপর বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা, নিপীড়ন, সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সংগ্রামসহ সমাজ প্রগতির জন্য নারীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ৮ মার্চ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। বিশ্ব নারী দিবস পালনের পিছনে রয়েছে এক অনন্য ইতিহাস, নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইউর্ক শহরে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা তাদের কর্মঘন্টা ১২ ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টায় কমিয়ে আনার দাবিতে ও বৈষম্যহীন ন্যায্য মজুরি আদায়ের দাবিতে পথে নামেন। তাদের উপর নেমে আসে পুলিশি নির্যাতন। এ আন্দোলনে আটক হন অনেক নারী শ্রমিক। ১৮৬০ সালে ঐ কারখানার নারী শ্রমিকগণ শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করেন আর সাংগঠনিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। তার দীর্ঘদিন পর ১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্ব প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বিশ্বের দেশে দেশে অব্যাহতভাবে নারী সমাজের জাগরণ ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘও ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৭৬ হতে ১৯৮৫ সময়কালকে নারী দশক হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে এই আন্তর্জাতিক নারী দিবস আরও ব্যাপকতা লাভ করে এবং বিশ্বব্যাপী নারী সমাজের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ ও গভীর অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে থাকে। বলাবাহুল্য, ইতোমধ্যে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নারীর সমঅধিকার ও সমমর্যাদার বিষয়টি গুরুত্ব পেলেও বাস্তবে গুণগত ও সামগ্রিকভাবে বিশ্বের দেশে দেশে নারীরা এখনও শোষণ, বঞ্চনা, অবহেলা, নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হয়ে চলেছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর নারীরা প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লংঘন এবং জাতিগত আগ্রাসন, সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে মহাননেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে স্মরণ করা যেতে পারে, সত্তর দশকে যিনি পাহাড়ে নারী মুক্তির আওয়াজ তুলেছিলেন। ১৯৭৩ সালে পাহাড়ি নারীদের সাংগঠনিক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে মূলত ১৯৭৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি গঠন করা হয়। ১৯৭৫ সালে যে সময় জাতিসংঘ কর্তৃক ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে পালিত হয় ঠিক সেই সময়ে ৩৫ জন পাহাড়ি নারী অধিকার আদায়ের লক্ষে জনসংহতি সমিতির সামরিক বিভাগে সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তাঁরা হয়ত অনেকেই আজ বেঁচে নেই। তাদের অবদানও শ্রদ্ধাভরে স্মরণযোগ্য। সমতল অঞ্চলে বিপ্লবী আদিবাসী নারী হাজংমাতা রাশিমণি হাজং এবং ফুলমণি’র বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম এবং পাহাড়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার সাংগঠনিক তৎপরতা প্রান্তিক মানুষের সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে।
মোটা দাগে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এদেশের আদিবাসী নারীরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কেমন আছেন সেদিকে আলোকপাত করা যেতে পারে। বলাবাহুল্য, ইতোমধ্যে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নারীর সম-অধিকার ও সম-মর্যাদার বিষয়টি গুরুত্ব পেলেও বাস্তবে গুণগত ও সামগ্রিকভাবে বিশ্বের দেশে দেশে নারীরা এখনও শোষণ, বঞ্চনা, অবহেলা, নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হয়ে চলেছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর নারীরা প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লংঘন এবং জাতিগত আগ্রাসন, সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী পাহাড় বা সমতলে কঠিন সংগ্রাম ও লড়াই করে বেঁচে আছে। বলা যায়, পাহাড় বা সমতলের আদিবাসীদের বঞ্চনা ও সংগ্রামের কাহিনী প্রায় একই সূত্রে গাঁথা। দেশব্যাপী আদিবাসীদের উন্নয়নের নামে ভূমি দখল, ভূমির কারণে নারীর উপর শ্লীলতাহানির মত মানবাধিকার লঙ্ঘন, মিথ্যা মামলা, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সেটেলার প্রেরণ, সামরিকীকরণ, আদিবাসী এলাকায় খনিজ সম্পদ উত্তোলনের ফলে ভূমি থেকে উচ্ছেদকরণ প্রভৃতি ঘটে চলেছে। সামাজিক প্রেক্ষাপটে আদিবাসী নারীরা খুবই প্রান্তিক অবস্থায় বসবাস করছে। আদিবাসী নারীরা জাতিগত, লিঙ্গগত, ভাষাগত, ধর্মীয় এবং শ্রেণীগত কারণে বৈষম্যের শিকার হয়। ফলে এসব কারণে বাংলাদেশের আদিবাসী নারীরা বিভিন্ন ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়।
স্বাধীনতার পাঁচ দশকে অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য। নারী-পুরুষ বৈষম্য বা জেন্ডার ব্যবধান হ্রাসে বাংলাদেশের অবস্থান ধীরে ধীরে উন্নীত হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের সামগ্রিক নারী সমাজের সাথে আদিবাসী নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে এবং নিজ সমাজের উন্নয়নে, আদিবাসী অর্থনীতিকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন ৫০টির অধিক আদিবাসী জাতির ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসীর অর্ধেক অংশ নারীদের যুগ যুগ ধরে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা, নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। যা তাদের টেকসই উন্নয়নে অংশীদারিত্বের পথকে রুদ্ধ করে তুলছে।
অধিকাংশ আদিবাসীদের বসতি দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় আদিবাসীরা, বিশেষ করে নারীরা সীমিত স্বাস্থ্যসেবা লাভ করে থাকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিশুরা কম ওজনে জন্মগ্রহণ করে থাকে। এটা কেবল শিশুদের দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য নয়, চরম পুষ্টিহীনতাও এর একটি অন্যতম কারণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম শিশু মৃত্যুর হার জাতীয় গড় থেকে অনেক বেশী। এই চিত্র দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী জাতিসমূহের বেলায় আরো বেশী করুণ তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
নারী ও কন্যাশিশুদের সুরক্ষার জন্য জাতীয় বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা থাকলেও আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য নির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। সংবিধানে নারীর জন্য জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পৌরসভাসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের জন্য আইন পাশ হয়। এতে জাতীয় স্তরে ও স্থানীয় প্রশাসনে নজিরবিহীনভাবে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু আদিবাসী নারীদের জন্য জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার পরিষদগুলোতে কোন আসন সংরক্ষিত নেই। ফলে দেশের শাসনব্যবস্থায় ও উন্নয়নে বিশেষ করে সমতলের আদিবাসী নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে জেন্ডার বাজেটেও আদিবাসী নারীদের জন্য পৃথক কোন বরাদ্দ নেই। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ কার্যাদি বিভাগ থেকেও আদিবাসী নারীদের ঐতিহ্যগত অর্থনৈতিক কাজে ও আদিবাসী নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিশেষ বরাদ্দ নেই। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ সেখানেও আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য বিশেষ কোনো কিছু উল্লেখ নেই।
বাজার প্রক্রিয়ায় সীমিত প্রবেশাধিকার, স্বাস্থ্য সেবা, কর্মসংস্থান, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির সুবিধা, শিক্ষা, প্রথাগত উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও শ্লীলতাহানির শিকার, নারী পাচার, পারিবারিক নির্যাতন ও দীর্ঘদিন সামরিক শাসন আদিবাসী নারীদের আরো বেশি প্রান্তিকতায় ঠেলে দেয়। এছাড়া বারবার উচ্ছেদের কারণে আদিবাসী নারীরা আরো বেশি প্রান্তিকতার শিকার হয়।
বস্তুত, আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতার পেছনে অন্যতম একটি লক্ষ্য হল পাশবিক লালসার পাশাপাশি আদিবাসীদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করা, আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের জায়গা জমি থেকে বিতাড়ন করা এবং চূড়ান্তভাবে তাদের জায়গা-জমি দখল করা। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রায় ২৩ বছর পার হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি না হওয়ায় সেটেলার বাঙালী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর উপর সহিংসতাসহ ভূমিকে কেন্দ্র করে আদিবাসীদের উপর প্রতিনিয়ত হামলা, হত্যা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরোধী কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি-উত্তরকালেও পাহাড়ি নারী সমাজের উপর জাতিগত নিপীড়ন ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রধান কারণ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়া। এরমধ্যে অন্যতম কারণ হল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাহাড়ি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা। পক্ষান্তরে সরকারের বিভিন্ন মহল কর্তৃক সেটেলার বাঙালিদের পুনর্বাসন; সেটেলার বাঙালিদের গুচ্ছগ্রাম সম্প্রসারণ, ভূমি জবরদখলে সেটেলার বাঙালিদেরকে মদদদান; রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ বহিরাগতদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ, পার্বত্য চুক্তিকে লঙ্ঘন করে সেটেলার বাঙালিদের অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে গণ্য করে টাস্কফোর্স কর্তৃক পুনর্বাসনের উদ্যোগ, জেলা প্রশাসন কর্তৃক স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র প্রদান; চাকুরি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান; বহিরাগতদের নিকট অব্যাহতভাবে ভূমি বন্দোবস্তী ও ইজারা প্রদান ইত্যাদি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্ম নারীর উপর সংঘটিত যৌন হয়রানি, ধর্ষণ হত্যা ও অপহরণের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা হয়েছে তার কোন উদাহরণ নেই যে দোষী ব্যক্তিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেয়েছে। দেশের সমতল অঞ্চলে দু/একটি মামলার আদালত অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত ও শাস্তির রায় দিলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ঘটনায় ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফলশ্রুতিতে অপরাধীরা সম্পূর্ণভাবে দায়মুক্তি পেয়ে থাকে। ফলে সহিংসতার শিকার আদিবাসী নারীরা ন্যায় ও সুবিচার থেকে বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জাতি যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা শাসন, শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। একদিকে বিজাতীয় শাসন-আগ্রাসন, অন্যদিকে স্বজাতীয় সামন্তীয় শাসন ও রক্ষণশীলতা। যে কারণে জুম্ম জাতির প্রগতির ধারা বারবার থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে। শুধু তাই নয়, বারবার জুম্ম জাতিকে তার জাতীয় অস্তিত্ব বিলুপ্তির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। আর এর তীব্র শিকারে পরিণত হয়েছে আদিবাসী জুম্ম নারী। একদিকে, জাতিতে জুম্ম ও জুম্ম নারী হিসেবে জাতিগত সহিংসতা, অপরদিকে, স্বকীয় সমাজে নারী হিসেবে অবদমন ও বঞ্চনা- এইভাবে মানুষ হিসেবে তার ন্যায্য অধিকার, মর্যাদা ও শোষণমুক্তির বিষয়টি বারবার ভূলুন্ঠিত হয়েছে। জাতিগত সহিংসতা প্রতিরোধ, জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর উপর সকল প্রকার শোষণ, বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে নারীর ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারী সমাজকেও সংগঠিত করে আন্দোলনে সামিল করার লক্ষ্যে প্রয়াত নেতা এম এন লারমা ও বর্তমান নেতা সন্তু লারমার নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অন্যতম অঙ্গসংগঠন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি’।
পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীসহ দেশের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল অংশ ও নাগরিক সমাজ ২৩ বছর ধরে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য চরমভাবে ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট ও হতাশায় নিমজ্জিত। এমতাবস্থায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াচ্ছে যা চুক্তির পূর্বেই বিদ্যমান ছিল। পাহাড়ের বর্তমান অবস্থাকে নানা জন নানাভাবে নানা আঙ্গিকে নিজেদের মতো করে মূল্যায়ন করছেন। এরকম সংকটকালে, একটি প্রভাবশালী কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সাথে জড়িত বা সরকারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছেন তাদেরকে অপরাধী তকমা দিতে তাদেরকে অবৈধ চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করে দেশে-বিদেশে প্রচারণা চালাচ্ছে। কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এবং চুক্তি বাস্তবায়নে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য জুম্ম জনগণ ও সুশীল সমাজের চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে জোর প্রচারণা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায়, পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে এবং জুম্মদেরকে পূর্বাবস্থায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে আদিবাসী জুম্ম নারীর উপর বাঙালি বসতিস্থাপনকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিপীড়ন, নির্যাতন ও যৌন হয়রানি অব্যাহতভাবে চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি-উত্তর কালে সাম্প্রদায়িক সংহিংসতার শিকার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক জুম্ম নারী ধর্ষণের শিকার হয়। যৌন হয়রানির শিকার হয় আরো অনেকেই। এছাড়া পাশবিক লালসা ও সাম্প্রদায়িক সংহিংসতার কারণে হত্যার শিকার হয়েছে অর্ধ শতাধিক জুম্ম নারী। এছাড়া অনেক নারী নানা হয়রানিমূলক মামলা, হত্যা, অপহরণ, অপহরণের পর জোরপূর্বক বিয়ে ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। এসব তথ্যই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি-উত্তর সময়ে আদিবাসী নারীর সার্বিক অবস্থার করুণ চিত্রকেই ফুটিয়ে তোলে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার লঙ্ঘন করে ভূমি জবরদখল, নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ জাতিগত নির্মূলীকরণের প্রক্রিয়া অব্যাহতভাবে চলছে। সরকার এখনও পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন করেনি। সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করেনি। বরঞ্চ জুম্মদের জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়ত চলছে। নতুন নতুন সেনাক্যাম্প বানানো হচ্ছে। বিগত দুই বছরে ১৮টি নতুন সেনাক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছে।
আজ সারাবিশ্বের নারী জাতির রাজনৈতিক, অর্থনেতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সকল প্রকার শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, অত্যাচার ও অন্যায়ের নাগপাশ থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে জোরদার সংগ্রাম চলছে। জুম্ম নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য নারীর সমমর্যাদা ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য নারীর সমমর্যাদা ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হতে বাধ্য। পাশাপাশি সমতল অঞ্চলেও রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম জারি রাখা জরুরী।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর সেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অবসানের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সবার মনে একটা আশাবাদ সঞ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু ২৩ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় এবং সাম্প্রতিক সময়ে জুম্মদের উপর ব্যাপকহারে দমন-পীড়ন, জুলুম, নির্যাতন, ধরপাকড়, অত্যাচার ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও নতুন করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতির জন্য সর্বাগ্রে সরকারই দায়ী। কারণ চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের গড়িমসি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাববোধ এবং কখনো কখনো চুক্তিকে নিয়ে তালবাহানা, ষড়যন্ত্র ও সময়ক্ষেপণ নীতি বর্তমান পরিস্থিতিকে অবধারিতভাবে উসকে দিয়েছে। জুম্ম জনগণ যারপরনাই হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। নাগরিক সমাজও হতবাক ও উদ্বিগ্ন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা। এ সমস্যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পরিবেশ বজায় ছিল। স্বকীয় সংস্কৃতি ও জাতীয়তা, ঐতিহাসিক শাসন পদ্ধতি, জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের মর্যাদা ও স্বকীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা, স্মরণাতীতকাল থেকে প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও জাতিগত ঐক্যতানকে শাসকগোষ্ঠীর ক্রমাগত অস্বীকৃতির ও ষড়যন্ত্রের ফলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। ঐতিহাসিক এ সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পাহাড়ে সবাই আশাবাদী হয়েছিল যে- বহু কাঙ্খিত এই রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে। কিন্তু যে সরকার ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করে পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দাদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থার আশ্বাস ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে সে একই দলের সরকার কর্তৃক চুক্তিকে কথায় ও কাজে পদদলিত করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার তাদের শাসনামলে পূর্বসূরীদের মত চুক্তিকে অবাস্তবায়িত অবস্থায় ফেলে রেখে বরং চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী নানা কৌশল ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। অথচ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
শুরু থেকেই একটি উগ্র মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এ চুক্তির বিরোধীতা করে আসছে। সরকারের একটি অংশসহ সামরিক-বেসামরিক আমলাও এ চুক্তি বাস্তবায়নে ক্রমাগত বাধাদান করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের অবস্থান সবসময় চুক্তিবিরোধী। চুক্তি যাতে বাস্তবায়িত না হতে পারে সেজন্য তারা নানাভাবে তৎপর। এমতাবস্থায়, নিরাপত্তার অজুহাতে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে নিরিহ জুম্মদের গ্রেফতার, বাড়ী-ঘর তল্লাশী, ধরপাকড়, ক্রসফায়ার দিয়ে জুম্মদেরকে আতঙ্কগ্রস্ত করে দমিয়ে রাখার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এখানে অধিকারকর্মীদের বেশি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে এবং চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে যারা কাজ করছেন তাদেরকে বেশি টার্গেট করা হচ্ছে। অর্থাৎ চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে দুর্বল করা বা চুক্তি বাস্তবায়ন না করা। স্বার্থান্বেষী মহল চুক্তি বাস্তবায়ন হোক তা কখনোই চায় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, শাসকগোষ্ঠীর প্রধানতম লক্ষ্য হচ্ছে জুম্মদেরকে ভাগ কর, শাসন কর এবং ধ্বংস কর। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্বসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদ ও যোগসাজশে কখনো কখনো স্থানীয়ভাবে ‘মগ লিবারেশন পার্টি’ নামে পরিচয়দানকারী এএলপি নামক বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সংস্কারপন্থী খ্যাত তাঁবেদার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, সংঘাত, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। আর সেনাসমর্থিত এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো দ্বারা সংঘটিত ঘটনাকে দোহাই দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে যুক্ত অধিকারকর্মীদের ও নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর নির্বিচারে তল্লাসী, মিথ্যা মামলা দায়ের, অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন, গ্রেফতার, হত্যাসহ ফ্যাসীবাদী কায়দায় দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রেস মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমও শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের সরবরাহকৃত বিকৃত ও সাজানো তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশন করে গোয়েবলসীয় কায়দায় সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে যার চুড়ান্ত লক্ষ্য পরিস্থিতিকে ঘোলাতে বানিয়ে নিজেদের শাসন দৃঢ় করা বা চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করা। এহেন পরিস্থিতিতে চুক্তি বাস্তবায়ন না করার প্রশাসনের দূরভিসন্ধি যথেষ্ট স্পষ্ট।
বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার যথাযথ সমাধানের কোন বিকল্প হতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে। চুক্তি মোতাবেক বিশেষ শাসন ব্যবস্থা এবং আদিবাসী জুম্ম জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভূমি অধিকার প্রদানের অঙ্গীকার যথাযথ ও পূর্ণ বাস্তবায়নের উপর পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি নির্ভর করছে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে জিইয়ে না রেখে; বল প্রয়োগ ব্যতিরেকে যারা সত্যিকারভাবে সমস্যার সর্বোত সমাধান চান, যারা সমস্যার গণতান্ত্রিক সমাধান দেখেন তাদের একমাত্র পরামর্শ হলো- চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণ বাস্তবায়নই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক সমাধান। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণ বাস্তবায়ন একান্তই জরুরী। তাই অতিসত্ত্বর দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানকল্পে একটি সময়সূচিভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে এ চুক্তি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী দিবস পালন ও জুম্ম নারী মুক্তি আন্দোলনও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন তথা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে সরাসরি জড়িত। এটা সবার উপলব্দিতে নিয়ে আসা জরুরী। জুম্ম নারীদেরও এ বাস্তব সত্যকে অনুধাবন করতে হবে।