হিল ভয়েস, ৫ জানুয়ারি ২০২১, কক্সবাজার: কক্সবাজারে লাকিংমে চাকমা (১৫) হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘লাকিংমে চাকমা পরিকল্পিতভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন।’ বক্তারা বলেন, ‘লাকিংমে চাকমাকে বাড়ি থেকে অপহরণ, পরে ভূয়া সনদে জোর করে ধর্মান্তর, ধর্ষণ এবং পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
গতকাল ৪ জানুয়ারি ২০২১ দুপুরে শহরের পৌরসভা ভবন চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করে বেসরকারি আটটি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠন। উক্ত মানববন্ধনে এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লাকিংমে চাকমা’কে বাড়ি থেকে অপহরণ, ভুয়া সনদে জোর করে ধর্মান্তর, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ ও পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবি করেন।
উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম, নারী প্রগতি সংঘ, রাখাইন ওমেন ফোরাম, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, তঞ্চঙ্গ্যা-চাকমা স্টুডেন্ট্স কাউন্সিল (উখিয়া-টেকনাফ)।
উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কক্সবাজার অঞ্চলের সহসভাপতি ক্য জ অং, নারী প্রগতি সংঘের পারভীন আকতার, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি দীপক দাশ, শ্রমিক জোট নেতা এ কে ফরিদ আহম্মদ, আদিবাসী ফোরামের কর্মকর্তা মা টিনটিন ও আলো চাকমা, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক অংথেন মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা-চাকমা ছাত্র পরিষদের সভাপতি লাতু চাকমা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মিঠুন দাশ প্রমুখ। উক্ত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি থৈন অং বুবু।
মানববন্ধনে ক্য জ অং বলেন, আতাউল্লাহর নেতৃত্বে চাকমা কিশোরী লাকিংমে চাকমা’কে সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর তাকে কুমিল্লায় নিয়ে জোর করে ও বেআইনিভাবে ধর্মান্তর, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ ও পরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে তাঁরা মাঠে নেমেছেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, লাকিংমে চাকমার বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নে। তাঁর বাবার নাম লাল অং চাকমা। লাকিংমে স্থানীয় শাপলাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন। তার মা-বাবার দাবি, তাদের মেয়ে লাকিংমে চাকমা’কে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন অপহরণ করেন। এরপর জোর করে ধর্মান্তর, বিয়ে ও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে লাকিংমে চাকমা’কে।
গত ৯ ডিসেম্বর ২০২০ আতাউল্লাহর ঘরে মারা যান লাকিং মে। মারা যাওয়ার ১২ দিন আগে লাকিংমে জন্ম দেন একটি মেয়ে সন্তানের। আতাউল্লাহর বাড়িও একই ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নুর আহমদ।
যদিও আতাউল্লাহর ভাষ্য, অপহরণ নয়, স্বেচ্ছায় তাঁরা বিয়ে করেছেন। বিয়ের আগে লাকিংমে ধর্মান্তরিত হন। লাকিংমে চাকমার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল হালিমাতুল সাদিয়া। ৯ ডিসেম্বর ২০২০ বিউটি পারলারে যাওয়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে রুমে গিয়ে সাদিয়া বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
এদিকে লাশ কীভাবে দাফন হবে, তা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর ফলে লাকিংমের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে ছিল বিগত ২৬ দিন পর্যন্ত।
এ নিয়ে আদালতের নির্দেশে গতকাল সোমবার মৃতদেহ নিতে হাসপাতালে আসেন লাকিংমের বাবা লালা অং চাকমা। কিন্তু হাসপাতাল মর্গ থেকে মরদেহ নিতে বাবাকে দিতে হবে ২৪ হাজার টাকা বিল। এত টাকা দেওয়াও তার পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষার পরও মেয়ের লাশ পাননি তিনি। পরে দুপুর নাগাদ মর্গের বিল দিতে সম্মত হয় এই ঘটনার তদন্ত সংস্থা র্যাব-১৫। এর ফলে মেয়ের মরদেহ নিতে বাধা কেটে যায় লালা অং চাকমার। মরদেহ গ্রহণ করে নিজ ধর্মীয় রীতি মেনে গতকালই বিকাল নিজ গ্রামে লাকিংমেকে সৎকারও করা হয়।