হিল ভয়েস, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন কাউখালী উপজেলার ফটিকছড়ি ইউনিয়নের দোবাকাবা-নভাঙ্গায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের কাজ বন্ধের দাবিতে এবং বাঁধ নির্মাণে বাধাদানের প্রতিবাদে এলাকার জুম্ম জনগণের উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘আমরা সেনা ক্যাম্প চাই না’ এই শ্লোগান নিয়ে গতকাল ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ দুপুর ১:০০টার দিকে দোবাকাবা-নভাঙ্গা এলাকায় এলাকার আপামর জনগণের অংশগ্রহণে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় এলাকার জনগণ ‘আমাদের নিজ জমির ভোগদখল থেকে বঞ্চিত করবেন না’, ‘সেনা ক্যাম্প দিয়ে আমাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত করবেন না’, ‘নদীতে গাছ-বাঁশ নিতে না দিলে খাব কি? সেনা প্রধানের জবাব চাই’, ‘জীবিকার অবলম্বন বাঁধ নির্মাণে বাধা কেন? কর্তৃপক্ষের জবাব চাই’, ‘Army Camp = Destruction of Our Land’, ‘সেনা ক্যাম্পের নামে ভূমি বেদখল বন্ধ কর’ ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী সুরতি মালা চাকমা বলেন, ‘সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকে আমরা আর লাকড়ি সংগ্রহ করতে পারছি না। কারণ যেখান থেকে আমরা লাকড়ি সংগ্রহ করি সেখানে এখন ক্যাম্প হয়েছে। ছড়াতেও (নদীতে) যেতে পারি না। দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। সেনা সেদস্যরা আমাদের নানা ধরনের অবাঞ্ছিত প্রশ্ন করে। আবার এলাকায় রোহিঙ্গাও নিয়ে আসবে বলে শুনতে পাচ্ছি।’
আরেক অংশগ্রহণকারী ফদাংতাং চাকমা জানান, ‘এখানে ক্যাম্প হলে বনজ সম্পদ উজার হবে। বনমন্ত্রী যেখানে বন রক্ষার কথা বলে থাকেন তাহলে এখানে ক্যাম্প হবে কেন? তাদের প্রদত্ত কম্বল আমাদের দরকার নেই। এতোদিন আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। কম্বল বিতরণের মাধ্যমে তারা জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছে। কিন্তু আগে আমাদের জায়গা কেড়ে নিয়েই তা করছে। তা না বুঝার কোন কারণ নেই। এ যেন গরু মেরে জুতা দান।’
উল্লেখ্য, ক্যাম্প স্থাপনের বিরুদ্ধে ২৬ নভেম্বর নভাঙ্গা এলাকায় বিক্ষোভ, ২৪ নভেম্বর ক্যাম্প নির্মাণ স্থলে গিয়ে কাউখালি ক্যাম্পের এক ক্যাপ্টেনের কাছে স্মারকলিপি, ২৫ নভেম্বর এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সেনা প্রধানের বরাবর স্মারকলিপি, ৩০ নভেম্বর রাঙামাটি শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন এবং ২১ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তারা সেনা প্রধানের বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে ক্যাম্প স্থাপনের কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। তারপরও ক্যাম্প স্থাপনের কাজ এখনো বহাল রয়েছে। ফলে এলাকাবাসী এখন চরম নিরাপত্তাহীনতা ও উদ্বেগের মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে, গত ২২ ডিসেম্বর ২০২০ দোবাকাবা ও নভাঙ্গা গ্রামবাসীরা সেনাবাহিনীর প্রদত্ত কম্বলগুলো ফেরত দেওয়ায় সেনারা বেজায় ক্ষেপেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল সারাদিন সেনারা নভাঙ্গা ও দোবাকাবা গ্রামে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করেছে। তারা নভাঙ্গা গ্রামের কার্বারি দয়াধন চাকমার বাড়িতে গিয়ে তাকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে যায়। এসময় সেনা সদস্যরা স্থানীয় কার্বারিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের প্রদত্ত কম্বলগুলো না নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি প্রদান করে।