হিল ভয়েস, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০: বান্দরবানের চিম্বুক ও নাইতং পাহাড়ে ম্রো আদিবাসীদের ভূমিতে হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২০ পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং-এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায়, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও নারীপক্ষের শিরিন হক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেলে নির্মাণে রাষ্ট্রের বা জনগণের কোনো কল্যাণ নেই। এতে কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মুনাফা হবে। পাহাড়ে এমন স্থাপনা নির্মাণের ফলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার ও সাংস্কৃতি ঐতিহ্য লঙ্ঘিত হয়েছে।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। পাহাড়ের হোটেল ও বিনোদন পার্ক হলে স্থানীয়দের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল হলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ম্রো আদিবাসীরা; কিন্তু সাবির্কভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও জনগণ। কারণ এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে গোষ্ঠী ও ব্যবসায়িক স্বার্থে বান্দরবানের মতো সংবেদনশীল স্থানে পাঁচতারকা হোটেলসহ পরিবেশবিরোধী স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের সুরক্ষা দিতে দ্রুত ভূমি কমিশন কার্যকর করার দাবি জানান।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধান ও আইনগুলোর মাধ্যমে স্বীকৃত প্রথা, রীতি, রেওয়াজ ও পদ্ধতিকে লঙ্ঘন করে এবং ম্রো জাতির মতামত বিবেচনায় না নিয়ে পাহাড়ে জোরপূর্বক বিলাসী স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বান্দরবানের প্রাণ-প্রকৃতি এবং ম্রো আদিবাসহ অন্যান্য আদিবাসী জাতিসত্তার অস্তিত্ব, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ম্রোদের দাবি উপেক্ষা করে পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে এবং তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এভাবে ভয় দেখিয়ে জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আগেও পর্যটনের নামে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। আদিবাসী ভাষায় যেসব পাহাড়ের নাম ছিল সেগুলো বদলে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, সাজেকে রিসোর্ট হচ্ছে কিন্তু পার্বত্য জেলা আঞ্চলিক পরিষদ বা চাকমা সার্কেল চিফসহ স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করা হয় না। তিনি বলেন, হোটেল ও বিনোদন পার্কে বহিরাগতদের আগমনের কারণে ম্রো নারীদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। ম্রো জনগোষ্ঠীর জুমচাষের জমি আরও সংকুচিত হবে।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, পাহাড়ে বিতর্কিত প্রকল্পের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট ও ক্ষুণœ হচ্ছে।
এছাড়াও বক্তারা বলেন, পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেলের মতো স্থাপনা হলে ধ্বংস হবে প্রাণ ও প্রকৃতি। বিতাড়িত হবে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। হারিয়ে যাবে সমৃদ্ধ সমাজ ও সংস্কৃতি। তাই বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা পাহাড়ে এ ধরনের প্রকল্প বাতিলসহ পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি কমিশন কার্যকর করে ভূমির আগ্রাসন থেকে পাহাড়ি অধিবাসীদের রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।