হিল ভয়েস, ৯ ডিসেম্বর ২০২০, ঢাকা: ঢাকায় ‘আদিবাসী নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন’ এই আহ্বানকে সামনে রেখে ‘আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক ২দিনব্যাপি এক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ২০২০ ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ সিবিসিবি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ২দিনব্যাপি এই জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এবং কাপেং ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ও সংগঠনের আহ্বায়ক মিনু মারিয়া ম্রং এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কার্যকরী কমিটির সদস্য তুলি লাবণ্য ম্রং, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এবং অনলাইনে যুক্ত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. সাদেকা হালিম প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড: সাদিকা হালিম আদিবাসী নারীর কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীতে আদিবাসী পরিবারগুলো যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে দেখা যায় নারীরা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানিকভাবে নারীদের অধিকার সুরক্ষা ও সহিংসতা প্রতিরোধে স্টেপগুলো অনুপস্থিত এবং প্লাটফর্মের সাথে স্থানীয় প্রতিনিধি সংযুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি সমাজেই পিতৃতান্ত্রিক একটা শিকড় আছে, যার কারণে পাহাড়ি মেয়েরা নির্যাতিত। তবে সহিংসতার মধ্যেও তারা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসী সমাজে যে জায়গাগুলো আছে এবং সরকারি যে জায়গাগুলো আছে তা আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
পল্লব চাকমা বলেন, আদিবাসী নারী হোক বা যে কোন নারীই হোক যখনই তারা সহিংসতার শিকার হয় তাতে যেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক কর্মসূচী হাতে নেন বা বিবৃতি দেন। তিনি আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের আরও সমন্বিত হয়ে কাজ করতে হবে।
তুলি লাবণ্য ম্রং বলেন, ঘরে-বাইরে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে নারীদের উপর যে সহিংসতা হয় তার মূল কারণ হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। স্বাধীন বাংলাদেশের এই ৫০ বছরেও নারীদের ধর্ষিতা পদবী দেয়া হচ্ছে। তিনি উপস্থিত সকলকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের সবাইকে নিজেদের অধিকার বুঝতে হবে এবং আন্দোলন করতে হবে। তিনি কিছু সুপারিশ জানিয়ে বলেন, আদিবাসী যে নারীরা বিউটি পার্লারে কাজ করেন তাদের এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের ভবিষ্যতে যুক্ত করতে হবে।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষ হয় এফ-মাইনরের নারী জাগরণীমূলক গানের মাধ্যমে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের শুরুতে ফাল্গুনী ত্রিপুরা ‘আদিবাসী নারীদের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি’ বিষয়ে সামগ্রিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং এরপর অঞ্চল ভিক্তিক প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তাদের কথা শুনেন ও মতামত নেন।
হিরণ মিত্র চাকমা আদিবাসী নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটনার ডকুমেন্টেশনে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও এ্যাডভোকেসির উপর আলোচনা বলেন। তিনি ডকুমেন্টেশনের মাধ্যমে কীভাবে এ্যাডভোকেসি করা যায় তার ধারাবাহিকতা তুলে ধরেন। পরবর্তীতে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে তৃতীয় অধিবেশন শেষ করেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সমন্বয়কারী তামান্না হক রীতি ‘ইউপিআর, সিডও, বেইজিং+ ২৫: আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতা’র প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে আলোচনা করেন। তাঁর সেশনের মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশন শেষ হয়।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে, আদিবাসী নারীদের মুক্তির আন্দোলন ও সংগ্রামের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড: ঈশানী চক্রবর্তী। তিনি তেভাগা আন্দোলন, টংক আন্দোলন, নাচোল আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করেন। এদিন চলমান নারীর প্রতি সহিংসতা ও আদিবাসী নারীর প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন ব্লাস্টের এডভোকেসী ও ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কর্মসূচীর উপদেষ্টা মো: তাজুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইন (৩৭৫ ধারা) এর ধর্ষণ সংক্রান্ত বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরেন।
কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার উজ্জ্বল আজিম জেন্ডার ও নারীর অধিকার এবং আদিবাসী নারীদের অধিকার রক্ষায় জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিষয়গুলো আলোচনা করেন।
সম্মেলনের সর্বশেষ অধিবেশনে সকল প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়। কর্মকৌশলে আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ ও ভূমিকা পালনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।